Tuesday, March 5, 2013

একটু ভেবে দেখবেন কি?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

ধরুন,আপনি বিবাহিত,আপনার স্ত্রী (বা স্বামী)-কে অসম্ভব ভালবাসেন! তো বিয়ের দুই বছরের মাথায় আপনার স্ত্রী (বা স্বামী)-র কিডনি নষ্ট হয়ে গেল! কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

তো আপনি এখন কী করলেন?

যা করার তাই করলেন,অর্থ্যাৎ,আপনি আপনার একটি কিডনি দান করলেন।

তার এক বছর পর,হঠাৎ আপনি আবিষ্কার করলেন,আপনার স্ত্রী (বা স্বামী) পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন!

আপনি তখন কী করবেন?

ধরেই নিলাম যে,আপনি খুবই একজন নিরীহ মানুষ। কিন্ত তারপরও,এই দোয়াটুকু কিন্ত অবশ্যই করবেন,"আল্লাহ,আমি তাকে আমার নিজের শরীরের অংশ দিয়ে বাঁচিয়ে তুললাম,আর সে আমার সাথে এই করল? আল্লাহ,তুমি এর বিচার কর।"।

[উপরের এই ঘটনাটা কিন্ত নিউ ইয়র্ক শহরে সত্যি সত্যি ঘটেছিল! ঘটনার স্বীকার স্বামী তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এই বলে মামলা করেছিল যে,তার কিডনি যেন তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়! শেষ পর্যন্ত ১.৫ মিলিয়ন ডলারে একটা রফা হয়!]

যাই হোক,এই ঘটনাটার আদলে,আসুন কয়েকটা বিষয় চিন্তা করি।

  • আপনার দুটি হাত আছে,এবং হাত দুটি মাশাআল্লাহ সুস্থ-সবল। আপনি এই হাত দিয়ে খাচ্ছেন,পড়াশোনা করছেন,আরও নানা কিছু করছেন
  • আপনার দুটি সুস্থ-সবল পা আছে,আর এই পা দুটি দিয়ে আপনি সারা দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছেন।
  • আপনার দুটি চোখ আছেন,এবং এই চোখ দুটি দিয়ে আপনি এই সুন্দর দুনিয়ার রং-রুপ-সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হচ্ছেন (সম্ভবত এই কারণেই বলে,মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল চোখ)।

আমি যদি এভাবে তালিকা করতে থাকি,তাহলে সারা জীবনেও শেষ হবে না!!!

এবার একটু চিন্তা করে দেখুন তো,এই জিনিসগুলোর কয়টা জিনিস আপনি টাকা দিয়ে কিনেছেন? অথবা নিজে বানিয়েছেন?

যদি percentage-এ হিসাব করি,খুব বেশি হলে ১%,বা ২%,তাই নয় কি?

আর বাকিগুলো?

বাকিগুলোর প্রত্যেকটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য উপহার! এমনকি যে জিনিসটা আপনি টাকা দিয়ে কিনেছেন,সেই টাকাটাও আল্লাহরই দান! আবার যে বুদ্ধিটা খরচ করে আপনি একটা জিনিস বানিয়েছেন,সেই বুদ্ধিটাও আল্লাহরই দেওয়া!

যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা কর,তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। [সূরা ইবরাহীম,আয়াত ৩৪]

যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা কর,তবে শেষ করতে পারবে না। [সূরা নাহল,আয়াত ১৮]

আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা ঘণ্টা,প্রত্যেকটা মিনিট,প্রত্যেকটা সেকেন্ড,আমরা আল্লাহর দেওয়া রহমতের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি।

এখন একটু চিন্তা করে দেখুন তো,
  • আপনি যখনই সিগারেট কিনতে যাচ্ছেন,তখন আল্লাহর দেওয়া পা ব্যবহার করছেন।
  • আপনি যখনই একটা সিগারেট স্পর্শ করছেন,আপনি আল্লাহর দেওয়া হাত ব্যবহার করছেন!
  • আপনি যখনই সিগারেটটা হাতে নিয়ে পরখ করছেন ভিতরে তামাক ঠিকমত ভরা আছে কি না,আপনি আল্লাহর দেওয়া চোখ ব্যবহার করছেন!

এইভাবে লক্ষ্য করে দেখুন,জীবনের প্রত্যেকটা পাপকাজে আপনি সেই নিয়ামতগুলোই ব্যবহার করছেন,যা আল্লাহ আপনাকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। আর সাথে তিনি এতটুকুই প্রত্যাশা করেন,তার এই নিয়ামতগুলো দিয়ে আমরা তাঁর দেখানো পথে চলব,তাঁর দেওয়া হুকুম-আহকামগুলো মেনে চলব। আর সেটাও এমনি এমনি না,এর পুরষ্কার তিনি তো এই দুনিয়ায় কিছু দেবেনই,পরকালেও তিনি এই দুনিয়ার চেয়ে হাজার হাজারগুণ বেশি অফুরন্ত নিয়ামতসম্পন্ন জান্নাত তিনি আমাদের জন্যই তৈরি করে রেখে দিয়েছেন!

এরপরও যদি আমরা তাঁর অবাধ্য হই,আমরা কি ওই মহিলার মত হয়ে যাচ্ছি না,যে তার পূর্ববর্তী স্বামী,যার জন্য সে (স্বামী) নিজের অঙ্গটা বিসর্জন দিয়েছিল,তার সাথে প্রতারণা করেছিল? তাহলে,পরকালের শাস্তিটা কি আমাদের পাওনা হয়ে যায় না?

শেষ করার আগে,একটি গল্প দিয়ে শেষ করতে চাই।

একদিন এক লোক হযরত হুসাইন (রা.)-এর কাছে আসল। সে বলল,"আমি কিছুতেই পাপকাজ ছাড়তে পারছি না। আমকে কিছু উপদেশ দিন।"। হুসাইন (রা.) বললেন,"ঠিক আছে। আমি তোমাকে পাঁচটা option দিব। তুমি যদি এই পাঁচটা option-এর যে কোন একটা পূরণ করতে পার,আমি তোমাকে পাপকাজ করার অনুমতি দেব।"। লোকটা খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল,"আচ্ছা,আমাকে বলুন।"।

হুসাইন (রা.) বললেন,"যখনই তুমি একটা পাপ করতে যাবে,সেটা আল্লাহ তোমাকে খাদ্য ও পানি দ্বারা যে শক্তি দিয়েছেন,সেটা বাদে অন্য কোন শক্তি দিয়ে করবে।"! লোকটা বলল,"এটা কীভাবে সম্ভব? পৃথিবীর সব খাদ্য ও পানিই তো আল্লাহর দান!"।

হুসাইন (রা.) বললেন,"ঠিক আছে,দেখ তো এটা পার কি না! যখনই একটা পাপ করতে যাবে,সেটা আল্লাহর যমীনের বাইরে গিয়ে করবে!"। লোকটা বলল,"তা তো কোনক্রমেই সম্ভব না। পুরা যমীনের মালিক তো আল্লাহপাক।"!

হুসাইন (রা.) বললেন,"ঠিক আছে,দেখ তো এটা সম্ভব না কি! যখনই একটা পাপ করতে যাবে,সেটা আল্লাহর দৃষ্টিসীমার বাইরে গিয়ে করবে,যেন তিনি তোমাকে না দেখেন!"। লোকটা বলল,"এটা তো অসম্ভব! আল্লাহ তো আল-রাকিব (সর্বদ্রষ্টা)! তার দৃষ্টির বাইরে কেউ যেতে পারে না!"।

হুসাইন (রা.) বললেন,"আচ্ছা,তাহলে দেখ তো,এটা সম্ভব হয় কি না! যখন মালাকুল মাউত তোমার জান কবজ করতে আসবেন,তাঁকে বলবে,'আমি এখন যেতে পারব না! আমার কাজ এখনও বাকি,আপনি পরে আসুন!'!"। লোকটা বলল,"এটা তো কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব না!"।

হুসাইন (রা.) বললেন,"আচ্ছা,অধৈর্য হয়ো না! আরও একটা option তো বাকিই আছে! আচ্ছা,তাহলে তোমাকে যখন জাহান্নামে ঢোকানো হবে,তখন তুমি বরং বের হয়ে এস,কেমন?"।

লোকটা বলল,"আর বলবেন না। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। আমি আর পাপ করব না!"।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন! সবাইকে সত্যটা বোঝা ও মানার তাওফীক দিন! সবাইকে আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে তাওবা করে তাঁর নির্দেশিত পথে,সরল পথে ফিরে আসার তাওফীক দান করুন!

আমীন!

No comments:

Post a Comment