Tuesday, March 5, 2013

ধর্ম যার যার,উৎসব ......???

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

ধরুন,কোন একটি occasion-কে কেন্দ্র করে আপনার মা'র পরিবারের একটি reunion হচ্ছে। আপনি,আপনার মা,আপনার maternal কাজিন,আপনার মা'র কাজিন,সবাই মিলে একটা হুলুস্থুল অবস্থা!

হঠাৎ,বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত,আপনার মা'র সাথে আপনার কোন মামার তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেল (এখানে ধরে নিছি যে আপনার ঐ মামা আপনার মা'র চেয়ে বয়সে অনেক ছোট)। ঝগড়ার একপর্যায়ে আপনার ঐ মামা আপনার মা'র দিকে তেড়ে গিয়ে চরম অসভ্যের মত বলে উঠলেন,"চুপ! আর একটা কথাও বলবেন না!"। অনেক চেষ্টা করে তাঁকে আপনার মা'র কাছ থেকে টেনে সরিয়ে আনা হল।

আপনি বলুন তো,আপনার মা'র সাথে এই রকম অসভ্য ব্যবহারের পর,আপনি আর জীবনে কখনো ঐ মামার সাথে আন্তরিক ব্যবহার করতে পারবেন? আমি মেনেই নিচ্ছি যে সামাজিকতার খাতিরে আমাদের মন সায় না দিলেও অনেককিছুই আমাদের মেনে নিতে হয়,কিন্ত আর কখনো আপনি কি তাঁর সাথে আগের মত আন্তরিক ভঙ্গিতে কথা বলতে পারবেন?

উত্তর,না,আপনি পারবেন না।

কেন পারবেন না?

Simple,তিনি আপনার মা'কে চূড়ান্ত অপমান করেছেন

আচ্ছা,তিনি তো আপনার মা'কে অপমান করেছেন,আপনাকে করেন নি! তাহলে আপনার এত গায়ে লাগে কেন?

এর উত্তরও সোজা। আপনার মা আপনাকে নিজের গর্ভে ধারণ করেছেন,অসম্ভব যন্ত্রণা সয়ে আপনাকে এই জন্ম দিয়েছেন,ছোট্টবেলা থেকে তিলে তিলে আপনার সকল যন্ত্রণা সয়ে আপনাকে বড় করেছেন। আর এখনও,যদি কোন কারণে সারা দুনিয়াও আপনাকে ছেড়ে চলে যায়,আপনার মা আপনাকে ঠিক সেই ছোট্টবেলার মত আগলে রাখবেন।

এবার মূল কথায় আসি।

বছর ঘুরে আবার এসেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব,শারদীয় দূর্গাপূজা। "সেক্যুলারিজম" সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক মুসলিম ভাইবোনকেই দেখ যায় তাঁদের হিন্দু বন্ধুদের সাথে এই উৎসবে যোগ দিতে,তাঁদের সাথে আনন্দ-ফূর্তি করতে।

আচ্ছা,ভাইয়া/আপু,একটু চিন্তা করুন তো,

আপনার হিন্দু বন্ধুটি,তিনি কী করছেন? একটি মাটির মূর্তির সামনে মাথা নত করছেন! একটা মূর্তি,যার কোন কিছু সৃষ্টির ক্ষমতা তো দূরের থাক,নিজেকে রক্ষার পর্যন্ত ক্ষমতা নেই,এই মূর্তিটিকে তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর আসনে বসিয়ে তার সন্তষ্টি কামনা করছেন। সোজা বাংলায়,তিনি শির্ক করছেন

আসুন দেখি,যখন শির্ক করা হয়,তখন এই দুনিয়ার কী অবস্থা হয়ঃ

তারা বলে,করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেছেন। তোমরা তো এক বীভৎস কথার অবতারণা করেছ। এতে যেন আকাশসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে,পৃথিবী খণ্ডবিখণ্ড হবে ও পর্বতসমূহ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে। যেহেতু তারা দয়াময়ের উপর সন্তান আরোপ করে। [সূরা মারইয়াম,আয়াত ৮৮-৯১]

চিন্তা করে দেখুন,যখন বলা হয়,আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন,তখনই তা সমগ্র আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে পৌঁছে যায়। সমগ্র সৌরজগৎ তা শুনতে পায়। এবং তা প্রায় বিদীর্ণ হয়ে যায়,খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যেতে চায়। যে প্রত্যেকটা মূহুর্তে এই কথাটা বলা হয়,সেই প্রত্যেকটা মূহুর্তে আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টি তাঁর অপমানে এতটাই অপমানিত হয় যে গায়েবের জগতে সমস্ত আকাশমণ্ডলী ফেটে পড়ার উপক্রম হয়।

শুধুমাত্র এই একটা শির্কেই যদি এই হয়,তাহলে বাকী শির্কের ক্ষেত্রে আর কী কী হতে পারে,তা সহজেই অনুমেয়,তাই নয় কী?

এখন একটু চিন্তা করুন তো,আল্লাহ আপনাকে আপনার মা'র চেয়েও অনেক অনেক বেশি ভালবাসেন (সহীহ মুসলিমের হাদীস)। আপনার হাত,আপনার পা,আপনার চোখ,আপনার জ্ঞান,আপনার বুদ্ধি,এক কথায় এই দুনিয়ায় আপনি যা যা উপভোগ করছেন,each & every single thing,is a gift from Allah to you!

যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা কর,তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। [সূরা ইবরাহীম,আয়াত ৩৪]

এখন উপরের ঘটনার সাথে তুলনা করে বলুন তো,যে উৎসবের উদ্দেশ্যই হল আল্লাহকে চূড়ান্তভাবে অপমান করা,একজন মুসলিম হিসেবে,একজন আত্মসমর্পণকারী হিসেবে,আপনার কি শোভা পায় সেই উৎসবে অংশগ্রহণ করা? এমন কি সেই উৎসব যেন ভালভাবে শেষ হয়,সেই wish-টুকুও করা,যেখানে মুসলমানের wish মানেই হল আল্লাহর কাছে দু'আরই অপর নাম?

কাফিরদের যে কোন উৎসবে অংশগ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য হারাম। ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন,

কাফেরদের তাদের উৎসবে সম্ভাষণ জানানো আলিমদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ। এটা কাউকে মদ খাওয়া বা খুন করা বা ব্যভিচার করায় সাধুবাদ জানানোর মতো। যাদের নিজের দ্বীনের প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই, তারাই কেবল এ ধরনের ভুল করতে পারে। যে অন্যকে আল্লাহ্-র অবাধ্যতা, বিদ’আত অথবা কুফরীতে জড়ানোর কারণে শুভেচ্ছা জানাবে সে আল্লাহ্-র ক্রোধ ও শাস্তির সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করে দিল।

বিস্তারিত জানার জন্য এই ফতোয়াটা দেখার অনুরোধ করছি।

তাহলে,আমাদের দ্বায়িত্ব কী?

অবশ্যই অন্য ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ উৎসব পালন করবেন,কিন্ত মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলঃ
  • তাঁদের উৎসবের সময় তাঁদের উপাসনালয়ের ধারেকাছেও না যাওয়া
  • তাঁরা নিমন্ত্রণ করলেও যথাসম্ভব নিমন্ত্রণ রক্ষা না করা
  • তাঁরা যেন ভালভাবে তাঁদের উৎসব সম্পন্ন করতে পারেন,এই wish না জানানো
  • বিশেষ করে তাঁদের উৎসর্গকৃত খাদ্য কোনভাবেই না খাওয়া
  • এবং কোনভাবেই তাঁদের এই উৎসব উপলক্ষ্যে আনন্দ প্রকাশ না করা
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য জানা ও বোঝার তাওফীক দান করুন। আমরা সবাই যেন পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করতে পারি। প্রতি মূহুর্তে যেন আমাদের মনে থাকে সূরা ইখলাসের সেই কালজয়ী অমর বাণীঃ


আমীন।

কৃতজ্ঞতাঃ

মূল ভাবনাঃ শুআইব ইসহাক

সূরা ইখলাসের অনুবাদের ক্যালিগ্রাফিঃ মুহাম্মাদ আরশাদুল ইসলাম

No comments:

Post a Comment