বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
পূর্বকথাঃ
গতকাল আমার দুইজন খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমার বাসায় এসেছিলেন। দুপুরে খাওয়ার সময় নানা কথা বলতে বলতে একজন বললেন,"ফেসবুকে কিছু স্ট্যাটাস দেখলাম যে ফিলিস্তিনে ইসরাইল হামলা চালিয়েছে,মুসলমানদের মারছে,তারপরও আমরা কিভাবে আবুলের সেঞ্চুরি নিয়ে এত কথা বলছি,এত প্রশংসা করছি? কেন বাবা,আমার বাড়িতে যদি একটা অনুষ্ঠান থাকে,আর ঐ দিনই যদি আমেরিকা ইরাকে একটা বোম ফালায়,তো তাই বলে কী আমি অনুষ্ঠানে মজা করা বাদ দেব?"।
সেই মুহূর্তে তাঁরা খাচ্ছিলেন,আর তাঁদের ফেরার একটু তাড়াও ছিল বলে এ নিয়ে আর কথা বাড়াই নি। আজ সকালে একটা ই-মেইল করে আমার বন্ধুর কথাটার উত্তর দিলাম। তো উত্তরটা লিখতে লিখতেই মনে হল,তাঁর যে প্রশ্নটা,এই প্রশ্নটা তো তাঁর একার নয়,বরং সেক্যুলারিজম আর ন্যাশনালিজমের ব্যাপক প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের বেশিরভাগ তরুণের মনে ঠিক এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাবে। তাই মনে হল,আমি যে মেইলটা পাঠিয়েছি,সেই মেইলটাই নোট হিসেবে পোস্ট করি।
[বি.দ্র. : আমার ঐ দুজন ফ্রেন্ডকেই আমি "মামা" বলে ডাকি,তাই মেইলটাতেও "মামা" সম্বোধনটা ব্যবহার করা হয়েছে।]
আসসালামু আলাইকুম।
মামা কী খবর? কেমন কাটছে?
যাই হোক,মামা,একটু গুরুগম্ভীর টাইপ কথা বলার জন্য এই মেসেজটা পাঠানো! So রেডি হও!!!
মামা,তুমি কালকে একটা কথা বললে না যে ফেসবুকে আবুলের সেঞ্চুরি আর ফিলিস্তিন নিয়ে স্ট্যাটাস দেখেছ,আর বললে যে আমার বাসায় একদিন একটা অনুষ্ঠান আছে,তো আমেরিকা ঐ দিনই ইরাকে একটা বোমা ফেলল,তো আমি কি ঐ অনুষ্ঠানে মজা করব না? তো তোমরা খাচ্ছিলে,আবার তোমাদের তাড়াও ছিল,তাই আমি কথা বাড়াই নি,কারণ খাওয়ার সময় আর তাড়াহুড়ার সময় কোন কিছুই মাথায় ঠিকমত ঢোকে না! আবার যদি চুপ থাকি,কিছুই না বলি,তাহলে প্রবল সম্ভাবনা আছে যে আমার মৌনতাকে সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে তুমি ধরে নিবে যে তোমার কথাটায় আমার সম্মতি আছে। সেক্ষেত্রে আল্লাহর চোখে আমি "দুই মুখো" হয়ে যাব। তো আমার বক্তব্য,আর আমার পড়াশুনা মতে ইসলাম কী বলে,সেটা জানাতেই এই মেসেজটা দেওয়া।
আচ্ছা মামা,ধরলাম যে তোমার বাসায় একদিন একটা অনুষ্ঠান আছে। তো ধর যে তুমি ঐ অনুষ্ঠানের জন্য কিছু আনতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করে পা ভাঙলে। বল তো মামা,তুমি বা তোমার ফ্যামিলির লোকজন,তুমি সুস্থ থাকলে ঐ অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ আনন্দ করতে,হাজার চেষ্টা করেও,কি সেই পরিমাণ আনন্দ করতে পারবে?
Simple উত্তর,না,পারবে না।
মামা,চল তো দেখি নিচের হাদীসটা কী বলেঃ
এখানেই ইসলামের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য মামা। ইসলাম কোন দেশ,কোন জাতির গণ্ডি মানে না। যখনই একজন মানুষ লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স.) বলে মুসলিম হয়ে যাবে,সে যে দেশেরই হোক,যে জাতিরই হোক,তার অতীত যতই কলুষতাপূর্ণ থাকুক না কেন,from that instant,সে আমার ভাই/আমার বোন। আমি যখনই (সুন্নতি) দাঁড়িওয়ালা একজন মানুষকে সামনাসামনি পাব,তখন আমি এটা খেয়াল করব না,সে বাংলাদেশি,না ইন্ডিয়ান,না পাকিস্তানী,না আরব। আমি শুধু জানব যে সে মুসলিম,সে আমার ভাই,সে মুসলিম উম্মাহর অঙ্গ। তাঁর সামনে গিয়ে হাসিমুখে আমি বলব,"আসসালামু আলাইকুম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক"। সেও হাসিমুখে আমাকে বলবে,"ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রহমতুল্লাহ - আপনার উপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক"।
এখন এটাও ঠিক,যেহেতু একটা অনুষ্ঠানের time & place ঠিক হয়ে গেছে,এটা তো আর change করা যাবে না। তো অনুষ্ঠান ঠিকই হবে,কিন্ত ফ্যামিলির একজন অসুস্থ থাকলে যেভাবে অনুষ্ঠান হয়,অর্থ্যাৎ আনন্দ থাকলেও যেমন বেদনার একটু সুরও সাথে থাকে,আমার কোন মুসলিম ভাই/বোন কাফের দ্বারা আক্রান্ত হলে,আমাদের আচরণও ঠিক ঐ রকম হতে হবে,কারণ তাঁরা আমাদের ভাই/বোন,আমাদের অংশ!
আশা করি এই ব্যাপারটা clear হয়েছে। এবার পরের ব্যাপারটায় যাই,অর্থ্যাৎ আবুল মামার সেঞ্চুরি।
মামা,একটু চিন্তা কর তো। বাংলাদেশ একটা গরীব দেশ। আমি তো সারা জীবনই ঢাকায় থাকলাম,কিন্ত তোমরা তো গ্রামের ছেলে। গ্রামের লোকেদের দুঃখ-দুর্দশা তোমাদের নিজের চোখে দেখা। আলহামদুলিল্লাহ,আমরা তো তারপরও তিনবেলা ঠিকমত খেতে পারছি,একটা-দুইটা শখ মিটাতে পারছি। কিন্ত এখনও,আমাদের দেশে এমন প্রচুর মানুষ আছে,যাদের তিনবেলা ভাতই ঠিকমত জোটে না!
মামা,বল তো,এই রকম একটা মানুষের কাছে যেয়ে যদি আমি বলি,"আরে শুনেছেন না কি,বাংলাদেশের আবুল তো ইতিহাস গড়ে ফেলল,প্রথম দশ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করল",ঐ লোকটা কী বলবে? এটা বলবে,"আরে তাই না কি,আলহামদুলিল্লাহ",না কি,"ভাই কী বললেন কিছুই বুঝলাম না,দুপুরে খাই নাই,দুইটা টাকা দিবেন খাওয়ার জন্য?"?
অবশ্যই দ্বিতীয়টা,তাই না???
মামা,এই যে International Cricket Competition,Football Competition,হেন Competition,তেন Competition,এইগুলোতে ultimately কারো দুনিয়াবী কোন লাভই কি আছে? নাই,কিছুই নাই। মানুষের time waste আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা পানিতে ফেলা ছাড়া এইগুলার কোন লাভই নাই!
এই দেশের মত একটা দেশে,যেখানে মানুষ তিনবেলা ভাত পায় না খাওয়ার জন্য,সেখানে ডাংগুলি খেলার আধুনিক সংস্করণ শেখানোর জন্য বিদেশ থেকে কোচ আনা হয়,ফিজিও আনা হয়,হেন আনা হয়,তেন আনা হয়! আর তাদের বেতন কীসে হয়? ডলারে! টাকায় না,ডলারে,যেখানে ১ ডলার এখন ৮০ টাকা করে যাচ্ছে!
মামা,তুমিই চিন্তা করে দেখ,এই টাকার ১ থেকে ২% মাত্র যদি প্রতি মাসে সঠিকভাবে গরীব মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়,তাহলে এই দেশে at least তিনবেলা ভাত না পাওয়ার মত কোন মানুষ বা ফ্যামিলি থাকবে? ইনশাআল্লাহ থাকবে না।
মামা,এই সব দিক বিবেচনা করেই ইসলামে শুধুমাত্র জিহাদের জন্য প্রস্ততিতে সহায়তা করতে পারে (যেমন আর্চারি,শুটিং,ঘোড়দৌড়) বাদে অন্য যে কোন competition,যেটায় পুরষ্কার আছে,হারাম করা হয়েছে,কারণ এগুলোতে মানুষের দুনিয়াবী কোন উপকার তো নেই-ই,সাথে সাথে মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকেও দূরে সরিয়ে দেয়।
[বিস্তারিত জানতে এই ফতোয়াটা দেখার অনুরোধ রইল।]
এই যে আমাদের আবুল মামা,তার বাকি নামাযগুলোর কথা তো আমি বলতে পারব না। কিন্ত এই যে সেঞ্চুরিটা সে করল,সে কিন্ত আসরের নামায ইচ্ছাকৃত miss দিয়ে,মাঠে কাটিয়েই সে সেঞ্চুরিটা করল। একে তো এক ওয়াক্ত ফরয নামায ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেওয়া কুফরী,তার উপর আসরের নামাযের মর্যাদা অন্যরকম।
আসলে মামা,সমস্যাটা কোথায় জান? আমাদের সিস্টেমে। আমাদের সিস্টেমটাই এমন হয়ে গেছে যে আমাদের কাছে আল্লাহর আদেশ মানে নামায রোযা ছাড়া আর কিছু না। ইসলাম যে শুধু নামায রোযা না,ইসলাম একটা পরিপূর্ণ "দ্বীন",একটা পরিপূর্ণ সিস্টেম,যতভাবে সম্ভব,এই চেষ্টাটাই চলছে মুসলিমদের মাথা থেকে এই চিন্তাটা সরিয়ে দেবার জন্য।
আমি নিজের কথাই বলি,ঠিক এক বছর আগ পর্যন্ত,আমি তোমাদের মতই চিন্তাভাবনা করতাম,তোমাদের মতই চলতাম। আলহামদুলিল্লাহ,আল্লাহ আমাকে সঠিক পথ,সোজা পথ,সরল পথ,সিরাতাল মুস্তাকীমের দিশা দিয়েছেন।
মামা,তুমিই বল তো,যিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ,যিনি অমুখাপেক্ষী (সূরা ইখলাস),তাঁর আমাদের সাথে compromise করার কোন দরকার আছে? না আমাদের নিজেদের জন্য,নিজেদের চামড়া জাহান্নামের লেলিহান আগুন থেকে বাঁচার জন্য,তাঁর সাথে,তাঁর দেওয়া জীবনব্যবস্থার সাথে,আমাদের compromise করতে হবে?
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান ও বুঝ পাবার তাওফিক দান করুন। আমীন।
ভাল থাক মামা।
আসসালামু আলাইকুম।
পূর্বকথাঃ
গতকাল আমার দুইজন খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমার বাসায় এসেছিলেন। দুপুরে খাওয়ার সময় নানা কথা বলতে বলতে একজন বললেন,"ফেসবুকে কিছু স্ট্যাটাস দেখলাম যে ফিলিস্তিনে ইসরাইল হামলা চালিয়েছে,মুসলমানদের মারছে,তারপরও আমরা কিভাবে আবুলের সেঞ্চুরি নিয়ে এত কথা বলছি,এত প্রশংসা করছি? কেন বাবা,আমার বাড়িতে যদি একটা অনুষ্ঠান থাকে,আর ঐ দিনই যদি আমেরিকা ইরাকে একটা বোম ফালায়,তো তাই বলে কী আমি অনুষ্ঠানে মজা করা বাদ দেব?"।
সেই মুহূর্তে তাঁরা খাচ্ছিলেন,আর তাঁদের ফেরার একটু তাড়াও ছিল বলে এ নিয়ে আর কথা বাড়াই নি। আজ সকালে একটা ই-মেইল করে আমার বন্ধুর কথাটার উত্তর দিলাম। তো উত্তরটা লিখতে লিখতেই মনে হল,তাঁর যে প্রশ্নটা,এই প্রশ্নটা তো তাঁর একার নয়,বরং সেক্যুলারিজম আর ন্যাশনালিজমের ব্যাপক প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের বেশিরভাগ তরুণের মনে ঠিক এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাবে। তাই মনে হল,আমি যে মেইলটা পাঠিয়েছি,সেই মেইলটাই নোট হিসেবে পোস্ট করি।
[বি.দ্র. : আমার ঐ দুজন ফ্রেন্ডকেই আমি "মামা" বলে ডাকি,তাই মেইলটাতেও "মামা" সম্বোধনটা ব্যবহার করা হয়েছে।]
আসসালামু আলাইকুম।
মামা কী খবর? কেমন কাটছে?
যাই হোক,মামা,একটু গুরুগম্ভীর টাইপ কথা বলার জন্য এই মেসেজটা পাঠানো! So রেডি হও!!!
মামা,তুমি কালকে একটা কথা বললে না যে ফেসবুকে আবুলের সেঞ্চুরি আর ফিলিস্তিন নিয়ে স্ট্যাটাস দেখেছ,আর বললে যে আমার বাসায় একদিন একটা অনুষ্ঠান আছে,তো আমেরিকা ঐ দিনই ইরাকে একটা বোমা ফেলল,তো আমি কি ঐ অনুষ্ঠানে মজা করব না? তো তোমরা খাচ্ছিলে,আবার তোমাদের তাড়াও ছিল,তাই আমি কথা বাড়াই নি,কারণ খাওয়ার সময় আর তাড়াহুড়ার সময় কোন কিছুই মাথায় ঠিকমত ঢোকে না! আবার যদি চুপ থাকি,কিছুই না বলি,তাহলে প্রবল সম্ভাবনা আছে যে আমার মৌনতাকে সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে তুমি ধরে নিবে যে তোমার কথাটায় আমার সম্মতি আছে। সেক্ষেত্রে আল্লাহর চোখে আমি "দুই মুখো" হয়ে যাব। তো আমার বক্তব্য,আর আমার পড়াশুনা মতে ইসলাম কী বলে,সেটা জানাতেই এই মেসেজটা দেওয়া।
আচ্ছা মামা,ধরলাম যে তোমার বাসায় একদিন একটা অনুষ্ঠান আছে। তো ধর যে তুমি ঐ অনুষ্ঠানের জন্য কিছু আনতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করে পা ভাঙলে। বল তো মামা,তুমি বা তোমার ফ্যামিলির লোকজন,তুমি সুস্থ থাকলে ঐ অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ আনন্দ করতে,হাজার চেষ্টা করেও,কি সেই পরিমাণ আনন্দ করতে পারবে?
Simple উত্তর,না,পারবে না।
মামা,চল তো দেখি নিচের হাদীসটা কী বলেঃ
আমার পুরো উম্মত হল একটি দেহের ন্যায়। যদি সেই দেহের কোন একটি অঙ্গে,যেমন মাথায় বা চোখে ব্যথা পায়,তাহলে তার ব্যথায় পুরো শরীর ব্যথিত হয়। (মুসলিম)
এখানেই ইসলামের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য মামা। ইসলাম কোন দেশ,কোন জাতির গণ্ডি মানে না। যখনই একজন মানুষ লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স.) বলে মুসলিম হয়ে যাবে,সে যে দেশেরই হোক,যে জাতিরই হোক,তার অতীত যতই কলুষতাপূর্ণ থাকুক না কেন,from that instant,সে আমার ভাই/আমার বোন। আমি যখনই (সুন্নতি) দাঁড়িওয়ালা একজন মানুষকে সামনাসামনি পাব,তখন আমি এটা খেয়াল করব না,সে বাংলাদেশি,না ইন্ডিয়ান,না পাকিস্তানী,না আরব। আমি শুধু জানব যে সে মুসলিম,সে আমার ভাই,সে মুসলিম উম্মাহর অঙ্গ। তাঁর সামনে গিয়ে হাসিমুখে আমি বলব,"আসসালামু আলাইকুম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক"। সেও হাসিমুখে আমাকে বলবে,"ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রহমতুল্লাহ - আপনার উপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক"।
এখন এটাও ঠিক,যেহেতু একটা অনুষ্ঠানের time & place ঠিক হয়ে গেছে,এটা তো আর change করা যাবে না। তো অনুষ্ঠান ঠিকই হবে,কিন্ত ফ্যামিলির একজন অসুস্থ থাকলে যেভাবে অনুষ্ঠান হয়,অর্থ্যাৎ আনন্দ থাকলেও যেমন বেদনার একটু সুরও সাথে থাকে,আমার কোন মুসলিম ভাই/বোন কাফের দ্বারা আক্রান্ত হলে,আমাদের আচরণও ঠিক ঐ রকম হতে হবে,কারণ তাঁরা আমাদের ভাই/বোন,আমাদের অংশ!
আশা করি এই ব্যাপারটা clear হয়েছে। এবার পরের ব্যাপারটায় যাই,অর্থ্যাৎ আবুল মামার সেঞ্চুরি।
মামা,একটু চিন্তা কর তো। বাংলাদেশ একটা গরীব দেশ। আমি তো সারা জীবনই ঢাকায় থাকলাম,কিন্ত তোমরা তো গ্রামের ছেলে। গ্রামের লোকেদের দুঃখ-দুর্দশা তোমাদের নিজের চোখে দেখা। আলহামদুলিল্লাহ,আমরা তো তারপরও তিনবেলা ঠিকমত খেতে পারছি,একটা-দুইটা শখ মিটাতে পারছি। কিন্ত এখনও,আমাদের দেশে এমন প্রচুর মানুষ আছে,যাদের তিনবেলা ভাতই ঠিকমত জোটে না!
মামা,বল তো,এই রকম একটা মানুষের কাছে যেয়ে যদি আমি বলি,"আরে শুনেছেন না কি,বাংলাদেশের আবুল তো ইতিহাস গড়ে ফেলল,প্রথম দশ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করল",ঐ লোকটা কী বলবে? এটা বলবে,"আরে তাই না কি,আলহামদুলিল্লাহ",না কি,"ভাই কী বললেন কিছুই বুঝলাম না,দুপুরে খাই নাই,দুইটা টাকা দিবেন খাওয়ার জন্য?"?
অবশ্যই দ্বিতীয়টা,তাই না???
মামা,এই যে International Cricket Competition,Football Competition,হেন Competition,তেন Competition,এইগুলোতে ultimately কারো দুনিয়াবী কোন লাভই কি আছে? নাই,কিছুই নাই। মানুষের time waste আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা পানিতে ফেলা ছাড়া এইগুলার কোন লাভই নাই!
এই দেশের মত একটা দেশে,যেখানে মানুষ তিনবেলা ভাত পায় না খাওয়ার জন্য,সেখানে ডাংগুলি খেলার আধুনিক সংস্করণ শেখানোর জন্য বিদেশ থেকে কোচ আনা হয়,ফিজিও আনা হয়,হেন আনা হয়,তেন আনা হয়! আর তাদের বেতন কীসে হয়? ডলারে! টাকায় না,ডলারে,যেখানে ১ ডলার এখন ৮০ টাকা করে যাচ্ছে!
মামা,তুমিই চিন্তা করে দেখ,এই টাকার ১ থেকে ২% মাত্র যদি প্রতি মাসে সঠিকভাবে গরীব মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়,তাহলে এই দেশে at least তিনবেলা ভাত না পাওয়ার মত কোন মানুষ বা ফ্যামিলি থাকবে? ইনশাআল্লাহ থাকবে না।
মামা,এই সব দিক বিবেচনা করেই ইসলামে শুধুমাত্র জিহাদের জন্য প্রস্ততিতে সহায়তা করতে পারে (যেমন আর্চারি,শুটিং,ঘোড়দৌড়) বাদে অন্য যে কোন competition,যেটায় পুরষ্কার আছে,হারাম করা হয়েছে,কারণ এগুলোতে মানুষের দুনিয়াবী কোন উপকার তো নেই-ই,সাথে সাথে মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকেও দূরে সরিয়ে দেয়।
[বিস্তারিত জানতে এই ফতোয়াটা দেখার অনুরোধ রইল।]
এই যে আমাদের আবুল মামা,তার বাকি নামাযগুলোর কথা তো আমি বলতে পারব না। কিন্ত এই যে সেঞ্চুরিটা সে করল,সে কিন্ত আসরের নামায ইচ্ছাকৃত miss দিয়ে,মাঠে কাটিয়েই সে সেঞ্চুরিটা করল। একে তো এক ওয়াক্ত ফরয নামায ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেওয়া কুফরী,তার উপর আসরের নামাযের মর্যাদা অন্যরকম।
যার আসরের নামায ছুটে গেল,তার যেন পরিবার-পরিজন আর ধনসম্পত্তি ধ্বংস হয়ে গেল। (বুখারী,মুসলিম)
যে আসরের নামায ত্যাগ করল,তার আমল শূন্য হয়ে গেল। (বুখারী)
আসলে মামা,সমস্যাটা কোথায় জান? আমাদের সিস্টেমে। আমাদের সিস্টেমটাই এমন হয়ে গেছে যে আমাদের কাছে আল্লাহর আদেশ মানে নামায রোযা ছাড়া আর কিছু না। ইসলাম যে শুধু নামায রোযা না,ইসলাম একটা পরিপূর্ণ "দ্বীন",একটা পরিপূর্ণ সিস্টেম,যতভাবে সম্ভব,এই চেষ্টাটাই চলছে মুসলিমদের মাথা থেকে এই চিন্তাটা সরিয়ে দেবার জন্য।
আমি নিজের কথাই বলি,ঠিক এক বছর আগ পর্যন্ত,আমি তোমাদের মতই চিন্তাভাবনা করতাম,তোমাদের মতই চলতাম। আলহামদুলিল্লাহ,আল্লাহ আমাকে সঠিক পথ,সোজা পথ,সরল পথ,সিরাতাল মুস্তাকীমের দিশা দিয়েছেন।
মামা,তুমিই বল তো,যিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ,যিনি অমুখাপেক্ষী (সূরা ইখলাস),তাঁর আমাদের সাথে compromise করার কোন দরকার আছে? না আমাদের নিজেদের জন্য,নিজেদের চামড়া জাহান্নামের লেলিহান আগুন থেকে বাঁচার জন্য,তাঁর সাথে,তাঁর দেওয়া জীবনব্যবস্থার সাথে,আমাদের compromise করতে হবে?
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান ও বুঝ পাবার তাওফিক দান করুন। আমীন।
ভাল থাক মামা।
আসসালামু আলাইকুম।

No comments:
Post a Comment