Tuesday, March 5, 2013

শয়তানের ধোঁকা আর আল্লাহর ক্ষমা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

আমাদের বেশিরভাগই হয় ছাত্র,নয় চাকুরীজীবি। Occupation-এর ভিন্নতা থাকলেও একটা জায়গায় কিন্ত আমরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি!

মনে করে দেখুন তো,যেদিন আমাদের ক্লাসে বা অফিসে যেতে দেরি হয়ে যায়,সেদিন আমরা যেতে যেতেই কিন্ত দোয়া করতে থাকি,"আল্লাহ,স্যারের মুখোমুখি যেন পড়তে না হয়! আল্লাহ,বাঁচিয়ে দাও আল্লাহ,স্যারের মুখোমুখি যেন হতে না হয়!"।

এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়,বরং স্বাভাবিক ব্যাপার। মানুষের প্রকৃতিই এরকম যে সে যদি কাউকে disappoint করে,কিছুদিন তার মুখোমুখি হতে চায় না।

Similarly,যখন আমরা কোন পাপ করি,আমাদের মনে ঠিক এই চিন্তাটা আসে যে,আমরা আল্লাহকে disappoint করেছি। শয়তান,ঠিক এই সুযোগটা নেয়,এবং আমাদের বলতে থাকে,"তুমি এত বড় একটা hypocrite! পাপও কর,আবার নামায পড়তেও যাও! ছিঃ,you two-face jerk!"।

আমাদের মধ্যে অনেকেই এই ধোঁকায় পড়ে যাই,এবং চিন্তা করতে থাকি,"আসলেই তো। এত পাপের পরও কীভাবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে যাই?"।

আমাদের আশেপাশে,অনেকেই এই ধোঁকার মধ্যে পরে আছেন। আমি নিজে এমন কিছু মানুষকে চিনি,ইসলাম নিয়ে যাঁদের পড়াশুনা অত্যন্ত ব্যাপক,ইসলাম সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞান অত্যন্ত গভীর। কিন্ত তাঁরা তাঁদের অতীতের পাপ নিয়ে এতটাই চিন্তিত,যে তাঁরা মনে করেন,"আমি এত পাপের পরও কি আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য?"।

ঠিক এই জায়গায়টাতেই,আমরা অনেক বড় একটা ভুল করে বসি।

প্রকৃতপক্ষে,আল্লাহর দয়া,আল্লাহর রহমত,এটা মানুষের বোঝার বাইরে। কোন মানুষের কল্পনাতেই এটা আসে না,আসা সম্ভবও না,যে আল্লাহ,কী পরিমাণ ক্ষমাশীল,কী পরিমাণ দয়ালু।

আমাদের "তাওবা",অর্থ্যাৎ sincere repentance,আল্লাহর কাছে যে কী পরিমাণ প্রিয়,বনী ইসরাইলের একজন মানুষের ঘটনা আমাদের সামনে তা পরিষ্কার করে দেয়।

আবু সাঈদ আল-খুদরী রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

বনী ইসরাইলের এক ব্যক্তি নিয়মিত মানুষ খুন করত। ৯৯ জনকে খুন করার পর সে অনুতপ্ত হয়। কিন্ত কীভাবে,কী করলে আল্লাহর কাছে মাফ পাবে,তা তার জানা ছিল না। এ কারণে সে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির সন্ধান করতে থাকে। তাকে এমন একজনের কাছে পাঠানো হয়,যিনি প্রচণ্ড ধার্মিক ছিলেন,কিন্ত জ্ঞানী ছিলেন না। সে তার (ধার্মিক ব্যক্তি) কাছে যায় এবং জিজ্ঞেস করে যে তার তাওবা আল্লাহ কবুল করবেন কী না। ধার্মিক ব্যক্তি,অজ্ঞানতার কারণে,উত্তর দেন যে তার তাওবা কবুল হওয়ার নয়। এ কারণে সে ধার্মিক ব্যক্তিটিকে হত্যা করে খুনের সেঞ্চুরি পূর্ণ করে। তারপর সে আবার অনুতপ্ত হয়,এবং আবার পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির সন্ধানে বের হয়। এবার সে এমন একজনের সন্ধান পায়,যিনি একই সাথে ধার্মিক এবং জ্ঞানী। সে তাঁর কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করে তার তাওবা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে না কী।

জ্ঞানী ব্যক্তি,উত্তর দেন,"এই দুনিয়ায় এমন কে আছে যে তুমি এবং তোমার তাওবা এবং আল্লাহর ক্ষমার মধ্যে দাঁড়াতে পারে? তুমি যেখানে থাক সেখান থেকে অমুক জায়গায় চলে যাও। সেখানে এমন লোকেদের পাবে যারা ধার্মিক এবং আল্লাহভীরু। তাঁদের সাথে আল্লাহর ইবাদাতে যোগ দাও,এবং আর কখনও তোমার দেশে ফিরে যেও না,এটা জাহেলদের জায়গা।"

তো লোকটি যাত্রা শুরু করল। পথিমধ্যে,এক জায়গায়,সে মারা গেল।

মারা যাওয়ার পর,তার আত্মাকে নিয়ে যেতে রহমতের ফেরেশতাগণ এবং আযাবের ফেরেশতাগণ,উভয়ই উপস্থিত হলেন এবং ঝগড়া শুরু করলেন।

রহমতের ফেরেশতাগণ বললেন,"এ লোক তো আল্লাহর কাছে তাওবা করার মানসিকতা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। অতএব,আমরাই একে নিয়ে যাব।"।

আযাবের ফেরেশতাগণ বললেন,"এ লোক সারা জীবনে একটা ভাল কাজ করে নি। অতএব,আমরাই একে নিয়ে যাব।"।

এ অবস্থায়,আরেকজন ফেরেশতা,মনুষ্যরুপে তাঁদের সামনে আসলেন। তাঁরা তাঁকে (মনুষ্যরুপী ফেরেশতাকে) মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মনোনীত করলেন। মনুষ্যরুপী ফেরেশতা বললেন,"ঠিক এই জায়গা থেকে দুইটা জায়গার দূরত্ব পরিমাপ কর। যে জায়গাটার দূরত্ব কম হবে,সে সেই জায়গার লোক হিসেবেই পরিগণিত হবে।"।

দূরত্ব পরিমাপের পর,দেখা গেল যে লোকটি যে জায়গার দিকে যাত্রা শুরু করেছিল,সে দূরত্বটাই কম। যার ফলে রহমতের ফেরেশতাগণ তার আত্মা নিয়ে চলে গেলেন।

বুখারী এবং মুসলিমে হাদীসটির এটুকু বর্ণনা এসেছে,এবং মোটামুটিভাবে এটুকু আমরা সবাই জানি। কিন্ত ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ তাঁর "আল-বিদায়্যাহ ওয়া-নিহায়্যাহ" গ্রন্থে হাদীসটির আরেকটু extended part বর্ণনা করেছেন এইভাবে,

প্রকৃতপক্ষে,লোকটি যেখানে মারা গিয়েছিল,সেখান থেকে বরং তার নিজ দেশের দূরত্বটাই ছিল কম। কিন্ত আল্লাহ,যে জায়গাটা থেকে লোকটি যাত্রা শুরু করেছিল,সে জায়গাটাকে আদেশ দেন সরে যেতে,আর যে জায়গাটার দিকে লোকটি যাচ্ছিল,তাকে আদেশ দেন কাছে চলতে আসতে,এবং তারপর তিনি ফেরেশতাদের আদেশ দেন পরিমাপ করতে। যার ফলে দেখা যায়,দেখা গেল যে লোকটি যে জায়গার দিকে যাত্রা শুরু করেছিল,সে দূরত্বটাই কম। যার ফলে রহমতের ফেরেশতাগণ তার আত্মা নিয়ে চলে যান,এবং ভয়াবহ পরকালে আযাবের হাত থেকে লোকটি রক্ষা পায়।

এখন একটু চিন্তা করে দেখুন,

লোকটি কি প্রকৃতপক্ষে তাওবা করতে পেরেছিল?

না,পারে নি। সে শুধু অনুতপ্ত হয়ে,sincerely repented একটা মন নিয়ে,শুধুমাত্র আল্লাহর ক্ষমার আশায় যাত্রা শুরু করেছিল। আর শুধুমাত্র এ কারণে,শুধুমাত্র এই একটা কারণেই,আল্লাহ তাকে ভয়াবহ আযাব থেকে মুক্ত করে দেন।

ভাই/আপু,

আল্লাহর ক্ষমার দরজা আমাদের জন্য সবচেয়ে উন্মুক্ত। যেখানে তিনি ঘোষণাই দিয়ে দিয়েছেন,তাওবা করে,sincerely repented একটা মন নিয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে,তিনি তাঁর সাথে শির্কের অপরাধ পর্যন্ত ক্ষমা করে দেবেন,সেখানে,শয়তানের ধোঁকায় পরে,তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে থাকা,এটা কি ভয়াবহ একটা মূর্খামির মত কাজ নয়?

শেষ করার আগে,আপনাদের একটা জিনিস,একটু মনে করিয়ে দিতে চাই। এটা এমন কঠিন কিছু না,আমার,আপনার সবার সাথে জিনিসটা ঘটেছে।

ছোটবেলায়,অনেক সময়ই আমাদের মা আমাদেরকে নিয়ে মার্কেটে গেছেন। আর ছোটবেলায় যেহেতু জগত সংসারের বাস্তবতার কোন কিছুই মাথায় থাকে না,সে রকম দেখা গেছে,যতবারই আমরা মার্কেটে গেছি,ততবারই একটা নতুন খেলনার জন্য বায়না ধরেছি।

এখন আমরা নিজেরাও বুঝি,এরকম প্রত্যেকবার নতুন খেলনা কিনে দেওয়া বেশিরভাগ পরিবারের পক্ষেই সম্ভব না। কিন্ত তখন তো আর এত কিছু মাথায় থাকে না! যার ফলে,মা যখন বুঝাতে চাইতেন,"বাবু,তুমি না গত মাসেই খেলনা নিলে,ওটা তো এখনো পুরনো হয় নি",আমরা স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে চাইতাম না! যার ফলে,মার্কেটের মধ্যেই কান্নাকাটি,মা'র গলার স্বর উঁচু করে ধমক দেওয়া,এমন কি চড় দেওয়া,এটা মোটামুটিভাবে সবার ছোটবেলাতেই ঘটেছে।

এখন একটা জিনিস একটু খেয়াল করে দেখুন তো,

যতই মা বকা দিন,গলার স্বর উঁচু করে ধমক দিন,এমন কি চড় পর্যন্ত দিন,আমরা কি মা'কে ছেড়ে অন্য কোন লোকের কাছে দৌড়ে যেতাম,মা'র ব্যাপারে অভিযোগ করতে?

না,যেতাম না। কারণ আমরা ভাল করেই জানতাম এই মার্কেটে,এত গিজগিজে মানুষের ভীড়ে,একজন মানুষই আমার আপন,আর তিনি হচ্ছেন আমার মা,যতই আমি তাঁর কথার অবাধ্য হই নাই কেন,তাঁকে disappoint করি না কেন।

ঠিক তেমনি ভাবে,যতই আমরা আল্লাহর অবাধ্য হই না কেন,যতই তাঁর দেওয়া হুকুম ভেঙ্গে পাপ করি না কেন,যতই তাঁকে disappoint করি না কেন,তাঁকে ছেড়ে কোথায় যাব? তাঁকে ছেড়ে আর কার কাছেই বা আশ্রয় প্রার্থনা করব? এই সারা দুনিয়া,এই বিশ্বজাহান,সবই তো তাঁর,তাই না?

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর উপর অটল বিশ্বাস রাখার তাওফিক দান করুন। তাঁর পথে ফিরে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। তাঁর ক্ষমা,তাঁর রহমত পাবার তাওফিক দান করুন।

আমীন।

No comments:

Post a Comment