Tuesday, March 5, 2013

নিশিদিন ভরসা রাখিস..................

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

অস্বীকার করার কোনই উপায় নেই,মানুষের জীবনে একজন সঙ্গীর খুব,খুব প্রয়োজন। কেউ একজন আমার খোঁজ নেবে,অন্য দশজনের চেয়ে আমাকে একটু বেশি গুরুত্ব দেবে,আমাকে একটু ভাল করে বুঝবে - এই কাঙ্গালপনা মানুষের সহজাত। ধনসম্পদ-প্রাচুর্যের অভাব মানুষের মনে তেমন কোন প্রভাব না ফেললেও,সঙ্গীর অভাব মানুষকে কাবু করে ফেলার জন্য যথেষ্ট।

ঠিক এইজন্যই দেখি,আদম আলাইহিস সালাম জান্নাতের অফুরন্ত ভোগ-বিলাসের মধ্যে থেকেও একজন সঙ্গীর তীব্র অভাব অনুভব করতে থাকেন,যার ফলে আল্লাহ হাওয়া আলাইহিস সালামকে তার সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করেন।

এই কারণেই,আল্লাহ আমাদের জন্য সঙ্গীর ব্যবস্থা করে রেখেছেনঃ

আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। [সূরা আর-রুমঃ ২১]

কিন্ত দেখা যায়,এই কাঙ্গালপনা,সহজাত চাওয়া,অনেক ক্ষেত্রেই limit cross করে ফেলে।

যেমনঃ
  • ব্যাচেলর থাকাকালীন "আমি একা,বড় একা,আমার আপন কেউ নেই..............." সিনড্রোম।
  • বিয়ের পর সঙ্গীর উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা,"তোমায় ছেড়ে বহু দূরে যাব কোথায়..............." সিনড্রোম।

আচ্ছা,এই যে একজন সঙ্গীর জন্য এত কাঙ্গালপনা,কেন?

কারণটা খুবই সাধারণ। কারণ আমরা ভাবি,

  • সে হবে এমন একজন,যার উপর আমরা চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে পারি।
  • সে হবে এমন একজন,যে কখনোই ভুল বুঝে আমাদের দূরে ঠেলে দেবে না।
  • সর্বোপরি,সে হবে এমন একজন,যে হবে আমার জন্য perfect

সোজা বাংলায়,তার প্রতি আমাদের expectation থাকে অসীম,যার ফলে তার জন্য আমাদের কাঙ্গালপনাও থাকে অসীম।

আর ঠিক এই জায়গাতেই,আমরা চরম একটা ভুল করে বসি।

আচ্ছা,আমাদের যে ভবিষ্যত সঙ্গী/সঙ্গিনী,তিনি কে?

Simple. তিনিও একজন সৃষ্টি

অর্থ্যাৎ আমাদের মত,আমাদের মা-বাবা-ভাই-বোন এবং আর বাকি সব আত্মীয়-স্বজনের মত,তিনিও একজন সৃষ্টি ব্যতীত আর কিছুই নন।

আমাদের নিজেদের যেমন কিছু ভাল দিক আছে,তাঁরও সে রকম কিছু ভাল দিক আছে। আমাদের নিজেদের যেমন কিছু খারাপ দিক আছে,তাঁরও কিছু খারাপ দিক আছে। আমাদের যেমন হাসি-কান্না-রাগ-ঘৃণা আছে,ঠিক তেমনি তাঁরও এই অনুভূতিগুলো আছে।

তাঁর মানে,এক কথায়,আমরা বলতে পারি,তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ নন,আমাদের মতই একজন মাটির মানুষ।

তার মানে,আমাদের অসীম expectation,অসীম চাওয়া,অসীম কামনা,তাঁর পক্ষে মেটানো কোনভাবেই সম্ভব না!

অবশ্য এটা আমাদের সঙ্গী কেন,কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়।

মুফতি ইসমাইল মেনকের কথায়ঃ

যেমন একজন পুরুষ খোঁজেন তার জন্য perfect স্ত্রী,ঠিক তেমনিই একজন নারী খোঁজেন তার জন্য perfect স্বামী। কিন্ত উভয়েই ভুলে যান,তাঁরা একে অন্যকে perfect করার জন্যই সৃষ্টি।

তাহলে,এমন কেউ কি নেই যার উপর আমরা আমাদের সম্পূর্ণ ভরসা সঁপে দিতে পারি? এমন কেউই কি নেই,যিনি আমাকে বুঝবেন,আমি ভুল করে ক্ষমা চাইলে সাথে সাথে ক্ষমা করে দেবেন? যিনি আমার ইচ্ছা,আমার কামনা-বাসনা,সব পূর্ণ করতে সক্ষম।

এগুলো তাঁর পক্ষেই সম্ভব,যিনি নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ!


আচ্ছা,আমরা কি এভাবে কখনো চিন্তা করেছি,যাকে নিয়ে স্বপ্ন নিয়ে,যার বিরহ বেদনায় ভুগে,আমরা দিনের পর দিন কষ্ট পাচ্ছি,নানা রকম দুনিয়াবী কাজকর্ম করে অশান্ত মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছি,তাকে পাওয়ার পর,যে কোন এক মুহূর্তে সে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে? অথবা সে মারাও যেতে পারে? এমন কি,তাকে পাওয়ার পর,আমি নিজেই যে মারা যাব না,তার গ্যারান্টি বা কী?

তার বদলে,আমরা নিজেরা কেন perfect হবার জন্য চেষ্টা করি না? কেন আল্লাহর একজন প্রিয়পাত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার টার্গেট আমরা নিই না? কেন আমরা আমাদের সকল আশা-ভরসার স্থল হিসেবে আল্লাহকেই বেছে নিই না?

আমরা যদি আল্লাহর বিধান মেনে,একমাত্র তাঁকে আমাদের সকল আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল বানিয়ে,তাঁর দেওয়া বিধান অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার die hard চেষ্টা করে,আমাদের নিজেদের জীবনকে,নিজেদের চরিত্রকে,নিজেকে সাজানো-গুছানোর চেষ্টা করি,তাহলে ইনশাআল্লাহ তিনিই এমন একজন সঙ্গীকে আমাদের জুটিয়ে দেবেন,যিনি শুধু এই দুনিয়াতেই আমাদের সঙ্গী হবেন না ইনশাআল্লাহ,বরং পরকালে,অসীম ভোগ-বিলাসের জান্নাতেও,চিরকাল আমাদের সাথেই থাকবেন।

আল্লাহ এই ওয়াদা দিয়েই দিয়েছেন পবিত্র কুরআন মাজীদেঃ

ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে। [সূরা আন-নূরঃ ৩]

আল্লাহ আমাদের সবাইকে শুধুমাত্র তাঁকেই আমাদের একমাত্র আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল বানানোর তাওফিক দান করুন।

আমীন।


No comments:

Post a Comment