Sunday, March 17, 2013

স্ত্রীঃ সম্পত্তি নয়,সম্পদ - শায়খ আসিম আল-হাকিম

প্রশ্নঃ শায়খ,আমি আমার স্ত্রীকে যাই করতে বলি না কেন,সেটা পালন করা কি তার উপর অত্যাবশ্যকীয় নয়? যেমন,আমি যদি তাকে বসতে বলি,অথবা এভাবে এভাবে চলতে বলি,সেটা পালন করতে সে কি বাধ্য নয়?

উত্তরঃ

প্রথমেই আপনার যেটা বোঝা উচিত,তিনি আপনার "স্ত্রী",আপনার কুকুর নন। সুতরাং, আপনি বসতে বললেই তাঁর বসতে হবে,এমন কোন বাধ্যবাধকতা তাঁর উপর নেই।

গৃহস্থালী যে কোন ব্যাপার,যাতে আপনার ও আপনার পরিবারের উপকার হতে পারে বলে আপনি মনে করেন,এমন কোন বিষয়ে আপনি আপনার স্ত্রীকে কিছু করতে আদেশ দিতেই পারেন। কিন্ত তাই বলে তিনি এমন কিছু করতে বাধ্য নন,যাঁতে তাঁর ক্ষতি হতে পারে,অথবা তাঁর জন্য অপমানজনক হতে পারে।

আর "শুধুমাত্র" তাঁকে নিজের ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রণ করতেই একের পর এক আদেশ দিয়ে যাওয়া,এটা ইসলাম কোনভাবেই সমর্থন করে না।

- শায়খ আসিম আল-হাকিম।

মন্তব্যঃ

বাবা সামী,সবার আগে এটা নিজের মাথায় ঢুকিয়ে রাখো!!!

Tuesday, March 5, 2013

বাংলাদেশি মুসলিমদের জন্য - শায়খ আসিম আল-হাকিম

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলার জন্য আমাকে বেশ কয়েকজন অনুরোধ করেছেন। আমার কাছে স্পষ্ট তেমন কোন তথ্য নেই যা দিয়ে আমি এ বিষয়ে আমার মতামত ব্যক্ত করতে পারি। যাই হোক,আমি কিছু দিকনির্দেশনা দিতে পারি যেটা হয়তোবা উপকারে আসতে পারে।

স্পষ্ট প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও কোন কিছু প্রমাণ করতে গিয়ে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়লে কাজের কাজ কিছুই হবে না,বরং এই মুহূর্তে তা পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে তুলবে। যাদের হাতে অস্রভাণ্ডার মজুদ রয়েছে,তাদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে জীবন বিপন্ন করা ইসলাম কোনভাবেই সমর্থন করে না।

কেউ কেউ বলছেন যে সরকার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবমাননাকারীদের সমর্থন দিচ্ছে। অবশ্যই যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননা করেছে,তাদের ইসলামিক আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে। কিন্ত,মনে রাখতে হবে,এটা রাষ্ট্রীয় ফরয,ব্যক্তিগত ফরয নয়। সরকার যদি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেয়,তাহলে ব্যক্তিগত কোন আক্রমণ ইসলামে সমর্থনযোগ্য নয়।

খারাপ পরিস্থিতি চলাকালে,"কান নিয়েছে চিলে" শুনেই চিলের পিছনে দৌড়ানো কোনভাবেই ঠিক নয়। বর্তমানে মানুষের জীবন বিপন্ন,এবং এই সময় যে কোন একটা গুজব ভয়ংকর বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।

প্রত্যেকের এটা মাথায় রাখা উচিত যে,যে কোন অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটে গেলে,এটাকে শুধু তাদের বিরুদ্ধেই পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করা হবে না,বরং একই সাথে ইসলামের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হবে। তাই,এ সময় সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করতে হবে।

এ পরিস্থিতিকে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। ধ্বংসাত্মক পথ বাদ দিয়ে,যে সকল পন্থা অনুমোদিত,শুধু সেগুলোই ব্যবহার করতে হবে। যেমন,সত্য প্রচারে মিডিয়াকে ব্যবহার করে ন্যায়বিচারের আহবান জানাতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহর পথে আসার জন্য বেশি বেশি করে মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে।

সর্বোপরি,এটা মাথায় রাখতে হবে,ইসলাম কোন ব্যক্তিনির্ভর দ্বীন নয়। এই দ্বীন,এই বিশ্বজাহানের সৃষ্টিকর্তা,রক্ষণাবেক্ষণকারী,প্রতিপালক,মহান আল্লাহ সুবহানাতা'আলার। সকল দুঃখ-দুর্দশা শেষে,আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে তাঁর জমীনে প্রতিষ্ঠিত করবেনই ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ বলেনঃ

আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন। [সূরা আলে ইমরান,আয়াত ১৪৪]

আল্লাহ মুসলিমদের তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জ্ঞান,প্রজ্ঞা ও বল দান করুন। আমীন।

- শায়খ আসিম আল-হাকিম।

হিজাবের অপব্যাখ্যা

আমার হোমপেজে একটা ছবি দেখলাম।

ছবিটা simple,একজন "আধুনিক" বাংলাদেশি বধূর। লাল (বা গোলাপি) শাড়ি পরা,কড়া মেকআপ ("ফর্সা না হয়ে যাবি কই?" টাইপ) এবং কয়েক ভরি গহনায় মোড়া দেহ।

শুধু একটা পার্থক্য আছে।

তিনি এক টুকরো কাপড় দিয়ে মাথার চুল ঢেকে রেখেছেন।

এবং ছবির ক্যাপশনঃ Bride "in hijab"!!!

ফলাফলঃ

আর কী,ধুমায়া লাইক এবং শেয়ার! "সুবহানাল্লাহ","মাশাআল্লাহ","♥" কমেন্ট তো আছেই!

আর এই রকম একটা শেয়ারের কারণেই আমার হোমপেজে ছবিটার আবির্ভাব।

ছবিটা দেখার পর মনের অনুভূতি কী ছিল,তা আর বলতে চাই না। তবে মনে হয়,ভবিষ্যতে এই জিনিসগুলো দেখারও মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবেঃ

☼ X-Channel Y Superstar Contest "in hijab".

☼ P-Channel R Model Hunt "in hijab".

☼ Swimsuit Contest "in hijab".

☼ Bed Scene "in hijab".

সমস্যা কী? এক টুকরো কাপড় দিয়ে চুল ঢেকে রাখাই তো হিজাব,তাই না???

ইয়াজুজ-মাজুজ

কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে "ইয়াজুজ-মাজুজ"-এর উত্থান অন্যতম। কিন্ত আমাদের অনেকেই ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে জানা তো দূরে থাক,এদের নামই শোনেন নি! এ কারণেই খুব সংক্ষেপে ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে কিছু লেখা হল।

☞ ইয়াজূজ মাজূজ সম্প্রদায় আদম (আঃ)-এর বংশধর। তারা ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে ঈসা (আঃ)-এর সময় পৃথিবীতে উত্থিত হবে।

☞ শাসক যুলক্বারনাইন তাদেরকে এখন প্রাচীর দিয়ে আটকিয়ে রেখেছেন (সূরা কাহফ, আয়াত ৯২-৯৭)।

[এখানে একটা কথা বলে রাখি,অনেকেই হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে এটা মনে করেন যে যুলক্বারনাইন হচ্ছেন আলেকজান্ডার,এবং তিনি একজন নবী। প্রকৃতপক্ষে,এটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, যুলক্বারনাইন মুমিন ছিলেন আর আলেকজান্ডার কাফের। আর প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী,যুলক্বারনাইন নবী ছিলেন না,ছিলেন এক সৎ ঈমানদার বাদশা। পৃথিবীর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভ্রমণ করেছেন বলে তাঁকে যুলক্বারনাইন বলা হয়।]

☞ ঐ প্রাচীর ভেঙ্গে তারা সেদিন বেরিয়ে আসবে এবং সামনে যা পাবে সব খেয়ে ফেলবে। এমনকি তাদের প্রথম দলটি নদীর পানি খেয়ে শেষ করে ফেলবে এবং শেষদলটি এসে বলবে 'হয়ত এখানে কোন একসময় নদী ছিল' । তাদের সাথে কেউ লড়াই করতে পারবে না।

☞ এক সময় তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের এক পাহাড়ে গিয়ে বলবে,"দুনিয়াতে যারা ছিল তাদের হত্যা করেছি। এখন আকাশে যারা আছে তাদের হত্যা করব।" তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তাদের তীরে রক্ত মাখিয়ে ফেরত পাঠাবেন।

☞ এসময় ঈসা (আঃ) তাদের জন্য বদদো‘আ করবেন। এতে স্কন্ধের দিক থেকে এক প্রকার পোকা সৃষ্টি করে আল্লাহ্‌ তাদেরকে ধ্বংস করবেন। তারা সবাই মারা যাবে ও পঁচে দুর্গন্ধ হবে। সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের লাশ থাকবে । আল্লাহ শকুন পাঠাবেন। লাশগুলোকে তারা নাহবাল নামক স্থানে নিক্ষেপ করবে। মুসলিমরা তাদের তীর ও ধনুকগুলো ৭ বছর জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করবে।

( বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭৫) ।

বিশ্ব হিজাব দিবস - শায়খ আসিম আল-হাকিম

অনেকেই আমার কাছে বিশ্ব হিজাব দিবস সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তারা বলছেন, মুসলিম মহিলারা কেন হিজাব করেন আর এটার প্রয়োজনীয়তাটাই বা কী, এই দিনে এ সম্পর্কে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।

যেহেতু এই দিনটা পালনের উদ্দেশ্য হল মানুষকে হিজাব সম্পর্কে জানানো এবং মুসলিম মহিলাদের হিজাব পালনের অধিকার সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা, তাই এই দিবস উদযাপনে কোন অসুবিধা নেই।

তবে, এটা কখনোই কোন মাসের কোন নির্দিষ্ট দিনে উদযাপন করা যাবে না। কারণ তাতে এর সাথে ঈদের সাদৃশ্যতা এসে যাবে। তখন এটাও মা দিবস বা মে দিবসের মত হারাম বলে পরিগণিত হবে।


- শায়খ আসিম আল-হাকিম

অমর একুশে বইমেলা আর কিছু ব্যক্তিগত অনুভূতি

ফেব্রুয়ারি মাস সবসময় আমার কাছে ছিল স্পেশাল একটা মাস। না ,"বসন্ত উৎসব" বা "ভ্যালেন্টাইনস ডে"-এর জন্য নয় (কখনো গার্লফ্রেন্ড ছিল না ,বুঝতেই পারছেন)! শুধুমাত্র একটা কারণ ,আর সেটা হল অমর একুশে বইমেলা!!!

অহংকার করব না ,তবে বইমেলায় আমি যেতাম বই কিনতেই ,বন্ধুদের সাথে ঘুরতে নয়।

জ্ঞান-বুদ্ধি হবার পর থেকে ,কখনো একটা বইমেলাও মিস করি নি। শুধুমাত্র কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে থাকাকালীন চিকেন পক্স হবার কারণে সে বছরের মেলাতে যেতে পারি নি। কী যে কষ্ট পেয়েছিলাম সে বার!!!

এমন কোন বইমেলা ছিল না যে মেলায় আমি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করি নি ,এবং সর্বনিম্ন ৪০-টার নিচে বই কিনি নি! গত বছরও এর ব্যতিক্রম ছিল না!

আল্লাহর অসীম দয়া আর রহমতে,আমি পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে বুঝতে শুরু করি তারপর থেকে ,অল্প অল্প করে।

অবাক হয়ে একটা জিনিস তখন খেয়াল করলাম!

এই বইমেলার বইগুলো আমাকে কখনো শিখায় নি ,আমার এই পার্থিব জীবন একটি পরীক্ষার হল। আমি এখানে পরীক্ষা দিতে এসেছি ,আনন্দ করতে নয়।

এই বইগুলো থেকে আমি কখনো শিখি নি ,at the very end,আমি একটা সাদা কাপড়ে মোড়ানো লাশ ছাড়া আর কিছুই না!!!

এই বইগুলো ,কখনো আমাকে এই নামগুলো শিখায় নি:

- শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা  [যাঁর সম্পর্কে সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তি হল ,তিনি যে হাদীস জানতেন না ,তা হাদীসই না!]

- ইমাম ইবনুল কায়্যিম  [যাঁকে বলা হয় "শামসুদ্দিন" - দ্বীন ইসলামের সূর্য]

- শায়খ ইবনে উসাইমীন,শায়খ আল-আলবানী,শায়খ বিন বায [যাঁরা এ যুগের সবচেয়ে জ্ঞানী তিনজন শাইখ,যাঁদের ফতোয়া ছাড়া বর্তমান যুগে সহীহভাবে ইসলাম পালন প্রায় অসম্ভব]

খুব ভালভাবে এখন বুঝতে পারি ,কেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন ,

হে আল্লাহ,আমাকে সেই জ্ঞান থেকে বাঁচিয়ে রাখ ,যে জ্ঞান আমার কোন কাজে আসে না। [তিরমিযী,দাওয়াত,৬৮]

যে কারণেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ,ইনশাআল্লাহ ,বাকী জীবন অনর্থক বই পড়া ও কেনা থেকে যতদূর সম্ভব দূরে থাকব।

রাসুল (সাঃ) বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি নিজের অবসর সময় তৈরী কর ও ইবাদতে মন দাও, তাহলে আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাতকে ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব কখনোই দূর করব না। [তিরমিযী : ২৬৫৪; ইবন মাজা : ৪১০৭]

একটু ভেবে দেখবেন কি?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

ধরুন,আপনি বিবাহিত,আপনার স্ত্রী (বা স্বামী)-কে অসম্ভব ভালবাসেন! তো বিয়ের দুই বছরের মাথায় আপনার স্ত্রী (বা স্বামী)-র কিডনি নষ্ট হয়ে গেল! কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

তো আপনি এখন কী করলেন?

যা করার তাই করলেন,অর্থ্যাৎ,আপনি আপনার একটি কিডনি দান করলেন।

তার এক বছর পর,হঠাৎ আপনি আবিষ্কার করলেন,আপনার স্ত্রী (বা স্বামী) পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন!

আপনি তখন কী করবেন?

ধরেই নিলাম যে,আপনি খুবই একজন নিরীহ মানুষ। কিন্ত তারপরও,এই দোয়াটুকু কিন্ত অবশ্যই করবেন,"আল্লাহ,আমি তাকে আমার নিজের শরীরের অংশ দিয়ে বাঁচিয়ে তুললাম,আর সে আমার সাথে এই করল? আল্লাহ,তুমি এর বিচার কর।"।

[উপরের এই ঘটনাটা কিন্ত নিউ ইয়র্ক শহরে সত্যি সত্যি ঘটেছিল! ঘটনার স্বীকার স্বামী তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এই বলে মামলা করেছিল যে,তার কিডনি যেন তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়! শেষ পর্যন্ত ১.৫ মিলিয়ন ডলারে একটা রফা হয়!]

যাই হোক,এই ঘটনাটার আদলে,আসুন কয়েকটা বিষয় চিন্তা করি।

  • আপনার দুটি হাত আছে,এবং হাত দুটি মাশাআল্লাহ সুস্থ-সবল। আপনি এই হাত দিয়ে খাচ্ছেন,পড়াশোনা করছেন,আরও নানা কিছু করছেন
  • আপনার দুটি সুস্থ-সবল পা আছে,আর এই পা দুটি দিয়ে আপনি সারা দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছেন।
  • আপনার দুটি চোখ আছেন,এবং এই চোখ দুটি দিয়ে আপনি এই সুন্দর দুনিয়ার রং-রুপ-সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হচ্ছেন (সম্ভবত এই কারণেই বলে,মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল চোখ)।

আমি যদি এভাবে তালিকা করতে থাকি,তাহলে সারা জীবনেও শেষ হবে না!!!

এবার একটু চিন্তা করে দেখুন তো,এই জিনিসগুলোর কয়টা জিনিস আপনি টাকা দিয়ে কিনেছেন? অথবা নিজে বানিয়েছেন?

যদি percentage-এ হিসাব করি,খুব বেশি হলে ১%,বা ২%,তাই নয় কি?

আর বাকিগুলো?

বাকিগুলোর প্রত্যেকটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য উপহার! এমনকি যে জিনিসটা আপনি টাকা দিয়ে কিনেছেন,সেই টাকাটাও আল্লাহরই দান! আবার যে বুদ্ধিটা খরচ করে আপনি একটা জিনিস বানিয়েছেন,সেই বুদ্ধিটাও আল্লাহরই দেওয়া!

যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা কর,তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। [সূরা ইবরাহীম,আয়াত ৩৪]

যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা কর,তবে শেষ করতে পারবে না। [সূরা নাহল,আয়াত ১৮]

আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা ঘণ্টা,প্রত্যেকটা মিনিট,প্রত্যেকটা সেকেন্ড,আমরা আল্লাহর দেওয়া রহমতের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি।

এখন একটু চিন্তা করে দেখুন তো,
  • আপনি যখনই সিগারেট কিনতে যাচ্ছেন,তখন আল্লাহর দেওয়া পা ব্যবহার করছেন।
  • আপনি যখনই একটা সিগারেট স্পর্শ করছেন,আপনি আল্লাহর দেওয়া হাত ব্যবহার করছেন!
  • আপনি যখনই সিগারেটটা হাতে নিয়ে পরখ করছেন ভিতরে তামাক ঠিকমত ভরা আছে কি না,আপনি আল্লাহর দেওয়া চোখ ব্যবহার করছেন!

এইভাবে লক্ষ্য করে দেখুন,জীবনের প্রত্যেকটা পাপকাজে আপনি সেই নিয়ামতগুলোই ব্যবহার করছেন,যা আল্লাহ আপনাকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। আর সাথে তিনি এতটুকুই প্রত্যাশা করেন,তার এই নিয়ামতগুলো দিয়ে আমরা তাঁর দেখানো পথে চলব,তাঁর দেওয়া হুকুম-আহকামগুলো মেনে চলব। আর সেটাও এমনি এমনি না,এর পুরষ্কার তিনি তো এই দুনিয়ায় কিছু দেবেনই,পরকালেও তিনি এই দুনিয়ার চেয়ে হাজার হাজারগুণ বেশি অফুরন্ত নিয়ামতসম্পন্ন জান্নাত তিনি আমাদের জন্যই তৈরি করে রেখে দিয়েছেন!

এরপরও যদি আমরা তাঁর অবাধ্য হই,আমরা কি ওই মহিলার মত হয়ে যাচ্ছি না,যে তার পূর্ববর্তী স্বামী,যার জন্য সে (স্বামী) নিজের অঙ্গটা বিসর্জন দিয়েছিল,তার সাথে প্রতারণা করেছিল? তাহলে,পরকালের শাস্তিটা কি আমাদের পাওনা হয়ে যায় না?

শেষ করার আগে,একটি গল্প দিয়ে শেষ করতে চাই।

একদিন এক লোক হযরত হুসাইন (রা.)-এর কাছে আসল। সে বলল,"আমি কিছুতেই পাপকাজ ছাড়তে পারছি না। আমকে কিছু উপদেশ দিন।"। হুসাইন (রা.) বললেন,"ঠিক আছে। আমি তোমাকে পাঁচটা option দিব। তুমি যদি এই পাঁচটা option-এর যে কোন একটা পূরণ করতে পার,আমি তোমাকে পাপকাজ করার অনুমতি দেব।"। লোকটা খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল,"আচ্ছা,আমাকে বলুন।"।

হুসাইন (রা.) বললেন,"যখনই তুমি একটা পাপ করতে যাবে,সেটা আল্লাহ তোমাকে খাদ্য ও পানি দ্বারা যে শক্তি দিয়েছেন,সেটা বাদে অন্য কোন শক্তি দিয়ে করবে।"! লোকটা বলল,"এটা কীভাবে সম্ভব? পৃথিবীর সব খাদ্য ও পানিই তো আল্লাহর দান!"।

হুসাইন (রা.) বললেন,"ঠিক আছে,দেখ তো এটা পার কি না! যখনই একটা পাপ করতে যাবে,সেটা আল্লাহর যমীনের বাইরে গিয়ে করবে!"। লোকটা বলল,"তা তো কোনক্রমেই সম্ভব না। পুরা যমীনের মালিক তো আল্লাহপাক।"!

হুসাইন (রা.) বললেন,"ঠিক আছে,দেখ তো এটা সম্ভব না কি! যখনই একটা পাপ করতে যাবে,সেটা আল্লাহর দৃষ্টিসীমার বাইরে গিয়ে করবে,যেন তিনি তোমাকে না দেখেন!"। লোকটা বলল,"এটা তো অসম্ভব! আল্লাহ তো আল-রাকিব (সর্বদ্রষ্টা)! তার দৃষ্টির বাইরে কেউ যেতে পারে না!"।

হুসাইন (রা.) বললেন,"আচ্ছা,তাহলে দেখ তো,এটা সম্ভব হয় কি না! যখন মালাকুল মাউত তোমার জান কবজ করতে আসবেন,তাঁকে বলবে,'আমি এখন যেতে পারব না! আমার কাজ এখনও বাকি,আপনি পরে আসুন!'!"। লোকটা বলল,"এটা তো কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব না!"।

হুসাইন (রা.) বললেন,"আচ্ছা,অধৈর্য হয়ো না! আরও একটা option তো বাকিই আছে! আচ্ছা,তাহলে তোমাকে যখন জাহান্নামে ঢোকানো হবে,তখন তুমি বরং বের হয়ে এস,কেমন?"।

লোকটা বলল,"আর বলবেন না। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। আমি আর পাপ করব না!"।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন! সবাইকে সত্যটা বোঝা ও মানার তাওফীক দিন! সবাইকে আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে তাওবা করে তাঁর নির্দেশিত পথে,সরল পথে ফিরে আসার তাওফীক দান করুন!

আমীন!

নিশিদিন ভরসা রাখিস..................

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

অস্বীকার করার কোনই উপায় নেই,মানুষের জীবনে একজন সঙ্গীর খুব,খুব প্রয়োজন। কেউ একজন আমার খোঁজ নেবে,অন্য দশজনের চেয়ে আমাকে একটু বেশি গুরুত্ব দেবে,আমাকে একটু ভাল করে বুঝবে - এই কাঙ্গালপনা মানুষের সহজাত। ধনসম্পদ-প্রাচুর্যের অভাব মানুষের মনে তেমন কোন প্রভাব না ফেললেও,সঙ্গীর অভাব মানুষকে কাবু করে ফেলার জন্য যথেষ্ট।

ঠিক এইজন্যই দেখি,আদম আলাইহিস সালাম জান্নাতের অফুরন্ত ভোগ-বিলাসের মধ্যে থেকেও একজন সঙ্গীর তীব্র অভাব অনুভব করতে থাকেন,যার ফলে আল্লাহ হাওয়া আলাইহিস সালামকে তার সঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করেন।

এই কারণেই,আল্লাহ আমাদের জন্য সঙ্গীর ব্যবস্থা করে রেখেছেনঃ

আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। [সূরা আর-রুমঃ ২১]

কিন্ত দেখা যায়,এই কাঙ্গালপনা,সহজাত চাওয়া,অনেক ক্ষেত্রেই limit cross করে ফেলে।

যেমনঃ
  • ব্যাচেলর থাকাকালীন "আমি একা,বড় একা,আমার আপন কেউ নেই..............." সিনড্রোম।
  • বিয়ের পর সঙ্গীর উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা,"তোমায় ছেড়ে বহু দূরে যাব কোথায়..............." সিনড্রোম।

আচ্ছা,এই যে একজন সঙ্গীর জন্য এত কাঙ্গালপনা,কেন?

কারণটা খুবই সাধারণ। কারণ আমরা ভাবি,

  • সে হবে এমন একজন,যার উপর আমরা চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে পারি।
  • সে হবে এমন একজন,যে কখনোই ভুল বুঝে আমাদের দূরে ঠেলে দেবে না।
  • সর্বোপরি,সে হবে এমন একজন,যে হবে আমার জন্য perfect

সোজা বাংলায়,তার প্রতি আমাদের expectation থাকে অসীম,যার ফলে তার জন্য আমাদের কাঙ্গালপনাও থাকে অসীম।

আর ঠিক এই জায়গাতেই,আমরা চরম একটা ভুল করে বসি।

আচ্ছা,আমাদের যে ভবিষ্যত সঙ্গী/সঙ্গিনী,তিনি কে?

Simple. তিনিও একজন সৃষ্টি

অর্থ্যাৎ আমাদের মত,আমাদের মা-বাবা-ভাই-বোন এবং আর বাকি সব আত্মীয়-স্বজনের মত,তিনিও একজন সৃষ্টি ব্যতীত আর কিছুই নন।

আমাদের নিজেদের যেমন কিছু ভাল দিক আছে,তাঁরও সে রকম কিছু ভাল দিক আছে। আমাদের নিজেদের যেমন কিছু খারাপ দিক আছে,তাঁরও কিছু খারাপ দিক আছে। আমাদের যেমন হাসি-কান্না-রাগ-ঘৃণা আছে,ঠিক তেমনি তাঁরও এই অনুভূতিগুলো আছে।

তাঁর মানে,এক কথায়,আমরা বলতে পারি,তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ নন,আমাদের মতই একজন মাটির মানুষ।

তার মানে,আমাদের অসীম expectation,অসীম চাওয়া,অসীম কামনা,তাঁর পক্ষে মেটানো কোনভাবেই সম্ভব না!

অবশ্য এটা আমাদের সঙ্গী কেন,কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়।

মুফতি ইসমাইল মেনকের কথায়ঃ

যেমন একজন পুরুষ খোঁজেন তার জন্য perfect স্ত্রী,ঠিক তেমনিই একজন নারী খোঁজেন তার জন্য perfect স্বামী। কিন্ত উভয়েই ভুলে যান,তাঁরা একে অন্যকে perfect করার জন্যই সৃষ্টি।

তাহলে,এমন কেউ কি নেই যার উপর আমরা আমাদের সম্পূর্ণ ভরসা সঁপে দিতে পারি? এমন কেউই কি নেই,যিনি আমাকে বুঝবেন,আমি ভুল করে ক্ষমা চাইলে সাথে সাথে ক্ষমা করে দেবেন? যিনি আমার ইচ্ছা,আমার কামনা-বাসনা,সব পূর্ণ করতে সক্ষম।

এগুলো তাঁর পক্ষেই সম্ভব,যিনি নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ!


আচ্ছা,আমরা কি এভাবে কখনো চিন্তা করেছি,যাকে নিয়ে স্বপ্ন নিয়ে,যার বিরহ বেদনায় ভুগে,আমরা দিনের পর দিন কষ্ট পাচ্ছি,নানা রকম দুনিয়াবী কাজকর্ম করে অশান্ত মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছি,তাকে পাওয়ার পর,যে কোন এক মুহূর্তে সে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে? অথবা সে মারাও যেতে পারে? এমন কি,তাকে পাওয়ার পর,আমি নিজেই যে মারা যাব না,তার গ্যারান্টি বা কী?

তার বদলে,আমরা নিজেরা কেন perfect হবার জন্য চেষ্টা করি না? কেন আল্লাহর একজন প্রিয়পাত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার টার্গেট আমরা নিই না? কেন আমরা আমাদের সকল আশা-ভরসার স্থল হিসেবে আল্লাহকেই বেছে নিই না?

আমরা যদি আল্লাহর বিধান মেনে,একমাত্র তাঁকে আমাদের সকল আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল বানিয়ে,তাঁর দেওয়া বিধান অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার die hard চেষ্টা করে,আমাদের নিজেদের জীবনকে,নিজেদের চরিত্রকে,নিজেকে সাজানো-গুছানোর চেষ্টা করি,তাহলে ইনশাআল্লাহ তিনিই এমন একজন সঙ্গীকে আমাদের জুটিয়ে দেবেন,যিনি শুধু এই দুনিয়াতেই আমাদের সঙ্গী হবেন না ইনশাআল্লাহ,বরং পরকালে,অসীম ভোগ-বিলাসের জান্নাতেও,চিরকাল আমাদের সাথেই থাকবেন।

আল্লাহ এই ওয়াদা দিয়েই দিয়েছেন পবিত্র কুরআন মাজীদেঃ

ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে। [সূরা আন-নূরঃ ৩]

আল্লাহ আমাদের সবাইকে শুধুমাত্র তাঁকেই আমাদের একমাত্র আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল বানানোর তাওফিক দান করুন।

আমীন।


দিবস কড়চা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

একটা ফালতু প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি।

আচ্ছা,জাতি মানে কী?

বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে একটা ঢুঁ মেরে যে অর্থগুলো পেলামঃ

  • জন্ম ও উৎপত্তি বিচারে সমলক্ষণ বিচারে শ্রেণিবিভাগ (মানব জাতি,পশু জাতি)
  • ধর্ম অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ (মুসলিম জাতি,হিন্দু জাতি)
  • রাষ্ট্র,দেশ বা সংস্কৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ (ফরাসি জাতি,জার্মান জাতি,বাঙালি জাতি)
  • ব্যবসায় ও আচারগত জাতি (জাতিতে মুচি বা গোয়ালা)
  • Race বা মানব জাতির বিভিন্ন শাখাগত বিভাগ (আর্য জাতি,মঙ্গোলীয় জাতি)
  • গোত্র বা কুলগত বর্ণভেদমূলক সামাজিহ উপবিভাগ (কায়স্থ জাতি,বৈদ্য জাতি)
  • শ্রেণি বা প্রকার (সাহিত্যের নানা জাতি)

উপরের অর্থগুলো থেকে একটা ধারণা স্পষ্ট যে জাতি শব্দটার দ্বারা,কীভাবে একজন মানুষকে define করা হয়,তা সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল।

বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে,জাতি শব্দটা দ্বারা আমরা দুইভাবে একজন মানুষকে define করতে পারিঃ

  • তিনি কোন দেশের নাগরিক।
  • তিনি কোন ধর্মের অনুসারী।

যদিও বর্তমানে ধর্মের বদলে দেশীয় পরিচয়ই মুখ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তো এতক্ষণ আমরা,অর্থ্যাৎ মানুষরা,generally কীভাবে জাতি শব্দটা ব্যবহার করি,তা দেখলাম। এবার একটু দেখে আসি,ইসলাম উম্মাহ বা জাতি শব্দটা দ্বারা কীভাবে একজন মানুষকে define করে।

শাইখ আবদ আল-ওয়াহহাব আল-তুরাইরি বলেন,

ইসলামে উম্মাহ বা জাতি দ্বারা দুই ধরণের মানুষকে বোঝানো হয়েছেঃ

১) যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং ইসলামের আদেশ-নিষেধ পরিপূর্ণভাবে মেনে চলেন,অর্থ্যাৎ প্র্যাকটিসিং মুসলিম (Ummah of response)

২) যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন নি,অথবা গ্রহণ করেছেন কিন্ত পরিপূর্ণভাবে মেনে চলেন না,অর্থ্যাৎ নন-প্র্যাকটিসিং মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্মাবলবম্বী (Ummah of invitation)

বিস্তারিত ফতোয়াটি এখানে দেখুন।

ব্যাখ্যার সুবিধার্থে,আমরা নন-প্র্যাকটিসিং মুসলিমদের বাদ দিয়ে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বলি "Ummah of invitation"।

অর্থ্যাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে,জাতি simply দুইটিঃ

  • মুসলিম
  • অমুসলিম

কে কোন দেশের,কে কোন সম্প্রদায়ের,তার কোন কিছুই এখানে ধর্তব্য নয়।

বিদায় হজ্বের ভাষণে,ঠিক এই কথার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কণ্ঠেঃ

তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর দরবারে অধিকতর সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী,যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া অবলম্বন করে,সব বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে। ইসলামে জাতি,শ্রেণীভেদ ও বর্ণবৈষম্য নেই। আরবের উপর কোন অনারবের,বা অনারবের উপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি সাদার ওপর কালোর বা কালোর ওপর সাদার কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মর্যাদার ভিত্তি কেবল তাকওয়া।

এ ছাড়াও আমরা পাইঃ

আমার সমগ্র উম্মাহ একটি দেহের ন্যায়। যদি সেই দেহের কোন একটি অঙ্গ ব্যথা পায়,তাহলে তার ব্যথায় সারা শরীর ব্যথিত হয়। (মুসলিম)

তো,আমরা বুঝতে পারলাম,সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এক জাতি। তার মানে,ইসলামের যে কোন আদেশ,১৪৫০ বছর আগের একজন মদীনাবাসীর উপর যে রকম প্রযোজ্য ছিল,বর্তমানের একজন সৌদি আরবের মুসলমানের উপর,একজনের মিসরের মুসলমানের উপর,একজন বাংলাদেশের মুসলমানের উপরেও ঠিক তেমনি ভাবে প্রযোজ্য।

এবার একটু অন্যদিকে যাই।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনাতে আগমন করলেন তখন মদীনা বাসীদের দুটো দিবস ছিল, যে দিবসে তারা খেলাধুলা করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন এ দু দিনের কি তাৎপর্য আছে? মদীনা বাসীগণ উত্তর দিলেন : আমরা মূর্খতার যুগে এ দু দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ দু দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটো দিন দিয়েছেন। তা হল ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর।’[ আবু দাউদ : ৯৫৯]

প্রশ্ন হচ্ছে,ঈদ মানে কী?

ঈদ আরবী শব্দ। এমন দিনকে ঈদ বলা হয় যে দিন মানুষ একত্র হয় ও দিনটি বার বার ফিরে আসে। এটা আরবী শব্দعاد يعود থেকে উৎপত্তি হয়েছে। যার অর্থ ফিরে আসা। অনেকে বলেন এটা আরবী শব্দ العادة আদত বা অভ্যাস থেকে উৎপত্তি হয়েছে। কেননা মানুষ ঈদ উদযাপনে অভ্যস্ত। সে যাই হোক, যেহেতু এ দিনটি বার বার ফিরে আসে তাই এর নাম ঈদ। এ শব্দ দ্বারা এ দিবসের নাম রাখার তাৎপর্য হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ দিবসে তার বান্দাদেরকে নেয়ামত ও অনুগ্রহ দ্বারা বার বার ধন্য করেন ও বার বার তার এহসানের দৃষ্টি দান করেন। যেমন রমজানে পানাহার নিষিদ্ধ করার পর আবার পানাহারের আদেশ প্রদান করেন। ছদকায়ে ফিতর, হজ-যিয়ারত, কুরবানীর গোশত ইত্যাদি নেয়ামত তিনি বার বার ফিরিয়ে দেন। আর এ সকল নেয়ামত ফিরে পেয়ে ভোগ করার জন্য অভ্যাসগত ভাবেই মানুষ আনন্দ-ফুর্তি করে থাকে।

এই লাইনটার দিকে আবার তাকাইঃ

এমন দিনকে ঈদ বলা হয় যে দিন মানুষ একত্র হয় ও দিনটি বার বার ফিরে আসে।

অর্থ্যাৎ যে কোন বার্ষিক উৎসব,যে দিনে মানুষ সবাই মিলে আনন্দ-ফূর্তি করে,একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানায়,তারই নাম হচ্ছে ঈদ।

আর উপরের হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট,মুসলিমদের ঈদ দুইটি,শুধুই দুইটিঃ

  • ঈদুল ফিতর
  • ঈদুল আযহা

আর উপরের আলোচনা থেকে আমরা এটাও বলতে পারি,এই দুইটি ঈদের বাইরে আর কোন উৎসব যেমন মদীনা বাসীদের উপর নিষিদ্ধ করা হয়েছিল,ঠিক তেমনি ভাবে তা আমাদের জন্যও নিষিদ্ধ।

এতগুলো কথা বলার মূল উদ্দেশ্যটা এখন বলিঃ

ভাই/আপু,

আপনি সারা জীবন ধরে কুরআন-হাদীস ঘেঁটে যান,একটা কুরআনের আয়াত বা একটা হাদীসও পাবেন না যেখানে দেখবেন যে হিজরী নববর্ষ উদযাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবাগণ,যাঁরা মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম অংশ,তাঁরা হিজরী নববর্ষ পালন করেছেন।

যেখানে হিজরী নববর্ষ পালনেরই কোন নজির ইসলামে নেই,সেখানে এই ইংরেজি নববর্ষ পালন কতটুকু যৌক্তিক?

এই নববর্ষ পালন,নতুন বছরের দিনে "শুভ নববর্ষ" বা "Happy New Year" বলে wish করা,এগুলো সব কাফিরদের সংস্কৃতি।

রাসূলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,যেখানে পেরেছেন,যেভাবে পেরেছেন,কাফিরদের imitate করা থেকে মুসলিমদের বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।

যেমন মুসলিম পুরুষদের দাঁড়ি বড় করা ও গোঁফ ছোট রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,যেন মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্যতা না থাকে [বুখারী,মুসলিম]।

ঠিক একই কারণে,আশুরা অর্থ্যাৎ মহররমের ১০ তারিখে রোজার সাথে ৯ তারিখে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন রাসূলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,যেন ইহুদিদের সাথে সাদৃশ্য না হয়ে যায় [মুসলিম,সিয়াম,হাদীস নং ২৬৬১]।

এরপরও যদি আপনি না মানেন,আমার বলার কিছুই নেই। কিন্ত এই হাদীসটা একটু মাথায় রাখতে বলবঃ

সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। [আবু দাউদ ৩৫১২]

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,

এ হাদীসের বাহ্যিক অর্থ হল, যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে কাফের হয়ে যাবে। যদি এ বাহ্যিক অর্থ (কুফরীর হুকুম) আমরা না-ও ধরি তবুও কমপক্ষে এ কাজটি যে হারাম তাতে সন্দেহ নেই। [আবু দাউদ ৩৫৭৪]

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য জানা,বোঝা ও মানার তাওফিক দান করুন।

আমীন।

শয়তানের ধোঁকা আর আল্লাহর ক্ষমা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

আমাদের বেশিরভাগই হয় ছাত্র,নয় চাকুরীজীবি। Occupation-এর ভিন্নতা থাকলেও একটা জায়গায় কিন্ত আমরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি!

মনে করে দেখুন তো,যেদিন আমাদের ক্লাসে বা অফিসে যেতে দেরি হয়ে যায়,সেদিন আমরা যেতে যেতেই কিন্ত দোয়া করতে থাকি,"আল্লাহ,স্যারের মুখোমুখি যেন পড়তে না হয়! আল্লাহ,বাঁচিয়ে দাও আল্লাহ,স্যারের মুখোমুখি যেন হতে না হয়!"।

এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়,বরং স্বাভাবিক ব্যাপার। মানুষের প্রকৃতিই এরকম যে সে যদি কাউকে disappoint করে,কিছুদিন তার মুখোমুখি হতে চায় না।

Similarly,যখন আমরা কোন পাপ করি,আমাদের মনে ঠিক এই চিন্তাটা আসে যে,আমরা আল্লাহকে disappoint করেছি। শয়তান,ঠিক এই সুযোগটা নেয়,এবং আমাদের বলতে থাকে,"তুমি এত বড় একটা hypocrite! পাপও কর,আবার নামায পড়তেও যাও! ছিঃ,you two-face jerk!"।

আমাদের মধ্যে অনেকেই এই ধোঁকায় পড়ে যাই,এবং চিন্তা করতে থাকি,"আসলেই তো। এত পাপের পরও কীভাবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে যাই?"।

আমাদের আশেপাশে,অনেকেই এই ধোঁকার মধ্যে পরে আছেন। আমি নিজে এমন কিছু মানুষকে চিনি,ইসলাম নিয়ে যাঁদের পড়াশুনা অত্যন্ত ব্যাপক,ইসলাম সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞান অত্যন্ত গভীর। কিন্ত তাঁরা তাঁদের অতীতের পাপ নিয়ে এতটাই চিন্তিত,যে তাঁরা মনে করেন,"আমি এত পাপের পরও কি আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য?"।

ঠিক এই জায়গায়টাতেই,আমরা অনেক বড় একটা ভুল করে বসি।

প্রকৃতপক্ষে,আল্লাহর দয়া,আল্লাহর রহমত,এটা মানুষের বোঝার বাইরে। কোন মানুষের কল্পনাতেই এটা আসে না,আসা সম্ভবও না,যে আল্লাহ,কী পরিমাণ ক্ষমাশীল,কী পরিমাণ দয়ালু।

আমাদের "তাওবা",অর্থ্যাৎ sincere repentance,আল্লাহর কাছে যে কী পরিমাণ প্রিয়,বনী ইসরাইলের একজন মানুষের ঘটনা আমাদের সামনে তা পরিষ্কার করে দেয়।

আবু সাঈদ আল-খুদরী রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

বনী ইসরাইলের এক ব্যক্তি নিয়মিত মানুষ খুন করত। ৯৯ জনকে খুন করার পর সে অনুতপ্ত হয়। কিন্ত কীভাবে,কী করলে আল্লাহর কাছে মাফ পাবে,তা তার জানা ছিল না। এ কারণে সে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির সন্ধান করতে থাকে। তাকে এমন একজনের কাছে পাঠানো হয়,যিনি প্রচণ্ড ধার্মিক ছিলেন,কিন্ত জ্ঞানী ছিলেন না। সে তার (ধার্মিক ব্যক্তি) কাছে যায় এবং জিজ্ঞেস করে যে তার তাওবা আল্লাহ কবুল করবেন কী না। ধার্মিক ব্যক্তি,অজ্ঞানতার কারণে,উত্তর দেন যে তার তাওবা কবুল হওয়ার নয়। এ কারণে সে ধার্মিক ব্যক্তিটিকে হত্যা করে খুনের সেঞ্চুরি পূর্ণ করে। তারপর সে আবার অনুতপ্ত হয়,এবং আবার পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির সন্ধানে বের হয়। এবার সে এমন একজনের সন্ধান পায়,যিনি একই সাথে ধার্মিক এবং জ্ঞানী। সে তাঁর কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করে তার তাওবা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে না কী।

জ্ঞানী ব্যক্তি,উত্তর দেন,"এই দুনিয়ায় এমন কে আছে যে তুমি এবং তোমার তাওবা এবং আল্লাহর ক্ষমার মধ্যে দাঁড়াতে পারে? তুমি যেখানে থাক সেখান থেকে অমুক জায়গায় চলে যাও। সেখানে এমন লোকেদের পাবে যারা ধার্মিক এবং আল্লাহভীরু। তাঁদের সাথে আল্লাহর ইবাদাতে যোগ দাও,এবং আর কখনও তোমার দেশে ফিরে যেও না,এটা জাহেলদের জায়গা।"

তো লোকটি যাত্রা শুরু করল। পথিমধ্যে,এক জায়গায়,সে মারা গেল।

মারা যাওয়ার পর,তার আত্মাকে নিয়ে যেতে রহমতের ফেরেশতাগণ এবং আযাবের ফেরেশতাগণ,উভয়ই উপস্থিত হলেন এবং ঝগড়া শুরু করলেন।

রহমতের ফেরেশতাগণ বললেন,"এ লোক তো আল্লাহর কাছে তাওবা করার মানসিকতা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। অতএব,আমরাই একে নিয়ে যাব।"।

আযাবের ফেরেশতাগণ বললেন,"এ লোক সারা জীবনে একটা ভাল কাজ করে নি। অতএব,আমরাই একে নিয়ে যাব।"।

এ অবস্থায়,আরেকজন ফেরেশতা,মনুষ্যরুপে তাঁদের সামনে আসলেন। তাঁরা তাঁকে (মনুষ্যরুপী ফেরেশতাকে) মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মনোনীত করলেন। মনুষ্যরুপী ফেরেশতা বললেন,"ঠিক এই জায়গা থেকে দুইটা জায়গার দূরত্ব পরিমাপ কর। যে জায়গাটার দূরত্ব কম হবে,সে সেই জায়গার লোক হিসেবেই পরিগণিত হবে।"।

দূরত্ব পরিমাপের পর,দেখা গেল যে লোকটি যে জায়গার দিকে যাত্রা শুরু করেছিল,সে দূরত্বটাই কম। যার ফলে রহমতের ফেরেশতাগণ তার আত্মা নিয়ে চলে গেলেন।

বুখারী এবং মুসলিমে হাদীসটির এটুকু বর্ণনা এসেছে,এবং মোটামুটিভাবে এটুকু আমরা সবাই জানি। কিন্ত ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ তাঁর "আল-বিদায়্যাহ ওয়া-নিহায়্যাহ" গ্রন্থে হাদীসটির আরেকটু extended part বর্ণনা করেছেন এইভাবে,

প্রকৃতপক্ষে,লোকটি যেখানে মারা গিয়েছিল,সেখান থেকে বরং তার নিজ দেশের দূরত্বটাই ছিল কম। কিন্ত আল্লাহ,যে জায়গাটা থেকে লোকটি যাত্রা শুরু করেছিল,সে জায়গাটাকে আদেশ দেন সরে যেতে,আর যে জায়গাটার দিকে লোকটি যাচ্ছিল,তাকে আদেশ দেন কাছে চলতে আসতে,এবং তারপর তিনি ফেরেশতাদের আদেশ দেন পরিমাপ করতে। যার ফলে দেখা যায়,দেখা গেল যে লোকটি যে জায়গার দিকে যাত্রা শুরু করেছিল,সে দূরত্বটাই কম। যার ফলে রহমতের ফেরেশতাগণ তার আত্মা নিয়ে চলে যান,এবং ভয়াবহ পরকালে আযাবের হাত থেকে লোকটি রক্ষা পায়।

এখন একটু চিন্তা করে দেখুন,

লোকটি কি প্রকৃতপক্ষে তাওবা করতে পেরেছিল?

না,পারে নি। সে শুধু অনুতপ্ত হয়ে,sincerely repented একটা মন নিয়ে,শুধুমাত্র আল্লাহর ক্ষমার আশায় যাত্রা শুরু করেছিল। আর শুধুমাত্র এ কারণে,শুধুমাত্র এই একটা কারণেই,আল্লাহ তাকে ভয়াবহ আযাব থেকে মুক্ত করে দেন।

ভাই/আপু,

আল্লাহর ক্ষমার দরজা আমাদের জন্য সবচেয়ে উন্মুক্ত। যেখানে তিনি ঘোষণাই দিয়ে দিয়েছেন,তাওবা করে,sincerely repented একটা মন নিয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে,তিনি তাঁর সাথে শির্কের অপরাধ পর্যন্ত ক্ষমা করে দেবেন,সেখানে,শয়তানের ধোঁকায় পরে,তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে থাকা,এটা কি ভয়াবহ একটা মূর্খামির মত কাজ নয়?

শেষ করার আগে,আপনাদের একটা জিনিস,একটু মনে করিয়ে দিতে চাই। এটা এমন কঠিন কিছু না,আমার,আপনার সবার সাথে জিনিসটা ঘটেছে।

ছোটবেলায়,অনেক সময়ই আমাদের মা আমাদেরকে নিয়ে মার্কেটে গেছেন। আর ছোটবেলায় যেহেতু জগত সংসারের বাস্তবতার কোন কিছুই মাথায় থাকে না,সে রকম দেখা গেছে,যতবারই আমরা মার্কেটে গেছি,ততবারই একটা নতুন খেলনার জন্য বায়না ধরেছি।

এখন আমরা নিজেরাও বুঝি,এরকম প্রত্যেকবার নতুন খেলনা কিনে দেওয়া বেশিরভাগ পরিবারের পক্ষেই সম্ভব না। কিন্ত তখন তো আর এত কিছু মাথায় থাকে না! যার ফলে,মা যখন বুঝাতে চাইতেন,"বাবু,তুমি না গত মাসেই খেলনা নিলে,ওটা তো এখনো পুরনো হয় নি",আমরা স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে চাইতাম না! যার ফলে,মার্কেটের মধ্যেই কান্নাকাটি,মা'র গলার স্বর উঁচু করে ধমক দেওয়া,এমন কি চড় দেওয়া,এটা মোটামুটিভাবে সবার ছোটবেলাতেই ঘটেছে।

এখন একটা জিনিস একটু খেয়াল করে দেখুন তো,

যতই মা বকা দিন,গলার স্বর উঁচু করে ধমক দিন,এমন কি চড় পর্যন্ত দিন,আমরা কি মা'কে ছেড়ে অন্য কোন লোকের কাছে দৌড়ে যেতাম,মা'র ব্যাপারে অভিযোগ করতে?

না,যেতাম না। কারণ আমরা ভাল করেই জানতাম এই মার্কেটে,এত গিজগিজে মানুষের ভীড়ে,একজন মানুষই আমার আপন,আর তিনি হচ্ছেন আমার মা,যতই আমি তাঁর কথার অবাধ্য হই নাই কেন,তাঁকে disappoint করি না কেন।

ঠিক তেমনি ভাবে,যতই আমরা আল্লাহর অবাধ্য হই না কেন,যতই তাঁর দেওয়া হুকুম ভেঙ্গে পাপ করি না কেন,যতই তাঁকে disappoint করি না কেন,তাঁকে ছেড়ে কোথায় যাব? তাঁকে ছেড়ে আর কার কাছেই বা আশ্রয় প্রার্থনা করব? এই সারা দুনিয়া,এই বিশ্বজাহান,সবই তো তাঁর,তাই না?

আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর উপর অটল বিশ্বাস রাখার তাওফিক দান করুন। তাঁর পথে ফিরে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। তাঁর ক্ষমা,তাঁর রহমত পাবার তাওফিক দান করুন।

আমীন।

ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা : ইসলাম কী বলে?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

পূর্বকথাঃ

গতকাল আমার দুইজন খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমার বাসায় এসেছিলেন। দুপুরে খাওয়ার সময় নানা কথা বলতে বলতে একজন বললেন,"ফেসবুকে কিছু স্ট্যাটাস দেখলাম যে ফিলিস্তিনে ইসরাইল হামলা চালিয়েছে,মুসলমানদের মারছে,তারপরও আমরা কিভাবে আবুলের সেঞ্চুরি নিয়ে এত কথা বলছি,এত প্রশংসা করছি? কেন বাবা,আমার বাড়িতে যদি একটা অনুষ্ঠান থাকে,আর ঐ দিনই যদি আমেরিকা ইরাকে একটা বোম ফালায়,তো তাই বলে কী আমি অনুষ্ঠানে মজা করা বাদ দেব?"।

সেই মুহূর্তে তাঁরা খাচ্ছিলেন,আর তাঁদের ফেরার একটু তাড়াও ছিল বলে এ নিয়ে আর কথা বাড়াই নি। আজ সকালে একটা ই-মেইল করে আমার বন্ধুর কথাটার উত্তর দিলাম। তো উত্তরটা লিখতে লিখতেই মনে হল,তাঁর যে প্রশ্নটা,এই প্রশ্নটা তো তাঁর একার নয়,বরং সেক্যুলারিজম আর ন্যাশনালিজমের ব্যাপক প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের বেশিরভাগ তরুণের মনে ঠিক এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাবে। তাই মনে হল,আমি যে মেইলটা পাঠিয়েছি,সেই মেইলটাই নোট হিসেবে পোস্ট করি।

[বি.দ্র. : আমার ঐ দুজন ফ্রেন্ডকেই আমি "মামা" বলে ডাকি,তাই মেইলটাতেও "মামা" সম্বোধনটা ব্যবহার করা হয়েছে।]

আসসালামু আলাইকুম।

মামা কী খবর? কেমন কাটছে?

যাই হোক,মামা,একটু গুরুগম্ভীর টাইপ কথা বলার জন্য এই মেসেজটা পাঠানো! So রেডি হও!!!

মামা,তুমি কালকে একটা কথা বললে না যে ফেসবুকে আবুলের সেঞ্চুরি আর ফিলিস্তিন নিয়ে স্ট্যাটাস দেখেছ,আর বললে যে আমার বাসায় একদিন একটা অনুষ্ঠান আছে,তো আমেরিকা ঐ দিনই ইরাকে একটা বোমা ফেলল,তো আমি কি ঐ অনুষ্ঠানে মজা করব না? তো তোমরা খাচ্ছিলে,আবার তোমাদের তাড়াও ছিল,তাই আমি কথা বাড়াই নি,কারণ খাওয়ার সময় আর তাড়াহুড়ার সময় কোন কিছুই মাথায় ঠিকমত ঢোকে না! আবার যদি চুপ থাকি,কিছুই না বলি,তাহলে প্রবল সম্ভাবনা আছে যে আমার মৌনতাকে সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে তুমি ধরে নিবে যে তোমার কথাটায় আমার সম্মতি আছে। সেক্ষেত্রে আল্লাহর চোখে আমি "দুই মুখো" হয়ে যাব। তো আমার বক্তব্য,আর আমার পড়াশুনা মতে ইসলাম কী বলে,সেটা জানাতেই এই মেসেজটা দেওয়া।

আচ্ছা মামা,ধরলাম যে তোমার বাসায় একদিন একটা অনুষ্ঠান আছে। তো ধর যে তুমি ঐ অনুষ্ঠানের জন্য কিছু আনতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করে পা ভাঙলে। বল তো মামা,তুমি বা তোমার ফ্যামিলির লোকজন,তুমি সুস্থ থাকলে ঐ অনুষ্ঠানে যে পরিমাণ আনন্দ করতে,হাজার চেষ্টা করেও,কি সেই পরিমাণ আনন্দ করতে পারবে?

Simple উত্তর,না,পারবে না।

মামা,চল তো দেখি নিচের হাদীসটা কী বলেঃ

আমার পুরো উম্মত হল একটি দেহের ন্যায়। যদি সেই দেহের কোন একটি অঙ্গে,যেমন মাথায় বা চোখে ব্যথা পায়,তাহলে তার ব্যথায় পুরো শরীর ব্যথিত হয়। (মুসলিম)

এখানেই ইসলামের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য মামা। ইসলাম কোন দেশ,কোন জাতির গণ্ডি মানে না। যখনই একজন মানুষ লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স.) বলে মুসলিম হয়ে যাবে,সে যে দেশেরই হোক,যে জাতিরই হোক,তার অতীত যতই কলুষতাপূর্ণ থাকুক না কেন,from that instant,সে আমার ভাই/আমার বোন। আমি যখনই (সুন্নতি) দাঁড়িওয়ালা একজন মানুষকে সামনাসামনি পাব,তখন আমি এটা খেয়াল করব না,সে বাংলাদেশি,না ইন্ডিয়ান,না পাকিস্তানী,না আরব। আমি শুধু জানব যে সে মুসলিম,সে আমার ভাই,সে মুসলিম উম্মাহর অঙ্গ। তাঁর সামনে গিয়ে হাসিমুখে আমি বলব,"আসসালামু আলাইকুম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক"। সেও হাসিমুখে আমাকে বলবে,"ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রহমতুল্লাহ - আপনার উপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক"

এখন এটাও ঠিক,যেহেতু একটা অনুষ্ঠানের time & place ঠিক হয়ে গেছে,এটা তো আর change করা যাবে না। তো অনুষ্ঠান ঠিকই হবে,কিন্ত ফ্যামিলির একজন অসুস্থ থাকলে যেভাবে অনুষ্ঠান হয়,অর্থ্যাৎ আনন্দ থাকলেও যেমন বেদনার একটু সুরও সাথে থাকে,আমার কোন মুসলিম ভাই/বোন কাফের দ্বারা আক্রান্ত হলে,আমাদের আচরণও ঠিক ঐ রকম হতে হবে,কারণ তাঁরা আমাদের ভাই/বোন,আমাদের অংশ!

আশা করি এই ব্যাপারটা clear হয়েছে। এবার পরের ব্যাপারটায় যাই,অর্থ্যাৎ আবুল মামার সেঞ্চুরি।

মামা,একটু চিন্তা কর তো। বাংলাদেশ একটা গরীব দেশ। আমি তো সারা জীবনই ঢাকায় থাকলাম,কিন্ত তোমরা তো গ্রামের ছেলে। গ্রামের লোকেদের দুঃখ-দুর্দশা তোমাদের নিজের চোখে দেখা। আলহামদুলিল্লাহ,আমরা তো তারপরও তিনবেলা ঠিকমত খেতে পারছি,একটা-দুইটা শখ মিটাতে পারছি। কিন্ত এখনও,আমাদের দেশে এমন প্রচুর মানুষ আছে,যাদের তিনবেলা ভাতই ঠিকমত জোটে না!

মামা,বল তো,এই রকম একটা মানুষের কাছে যেয়ে যদি আমি বলি,"আরে শুনেছেন না কি,বাংলাদেশের আবুল তো ইতিহাস গড়ে ফেলল,প্রথম দশ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করল",ঐ লোকটা কী বলবে? এটা বলবে,"আরে তাই না কি,আলহামদুলিল্লাহ",না কি,"ভাই কী বললেন কিছুই বুঝলাম না,দুপুরে খাই নাই,দুইটা টাকা দিবেন খাওয়ার জন্য?"?

অবশ্যই দ্বিতীয়টা,তাই না???

মামা,এই যে International Cricket Competition,Football Competition,হেন Competition,তেন Competition,এইগুলোতে ultimately কারো দুনিয়াবী কোন লাভই কি আছে? নাই,কিছুই নাই। মানুষের time waste আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা পানিতে ফেলা ছাড়া এইগুলার কোন লাভই নাই!

এই দেশের মত একটা দেশে,যেখানে মানুষ তিনবেলা ভাত পায় না খাওয়ার জন্য,সেখানে ডাংগুলি খেলার আধুনিক সংস্করণ শেখানোর জন্য বিদেশ থেকে কোচ আনা হয়,ফিজিও আনা হয়,হেন আনা হয়,তেন আনা হয়! আর তাদের বেতন কীসে হয়? ডলারে! টাকায় না,ডলারে,যেখানে ১ ডলার এখন ৮০ টাকা করে যাচ্ছে!

মামা,তুমিই চিন্তা করে দেখ,এই টাকার ১ থেকে ২% মাত্র যদি প্রতি মাসে সঠিকভাবে গরীব মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়,তাহলে এই দেশে at least তিনবেলা ভাত না পাওয়ার মত কোন মানুষ বা ফ্যামিলি থাকবে? ইনশাআল্লাহ থাকবে না।

মামা,এই সব দিক বিবেচনা করেই ইসলামে শুধুমাত্র জিহাদের জন্য প্রস্ততিতে সহায়তা করতে পারে (যেমন আর্চারি,শুটিং,ঘোড়দৌড়) বাদে অন্য যে কোন competition,যেটায় পুরষ্কার আছে,হারাম করা হয়েছে,কারণ এগুলোতে মানুষের দুনিয়াবী কোন উপকার তো নেই-ই,সাথে সাথে মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকেও দূরে সরিয়ে দেয়।

[বিস্তারিত জানতে এই ফতোয়াটা দেখার অনুরোধ রইল।]

এই যে আমাদের আবুল মামা,তার বাকি নামাযগুলোর কথা তো আমি বলতে পারব না। কিন্ত এই যে সেঞ্চুরিটা সে করল,সে কিন্ত আসরের নামায ইচ্ছাকৃত miss দিয়ে,মাঠে কাটিয়েই সে সেঞ্চুরিটা করল। একে তো এক ওয়াক্ত ফরয নামায ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেওয়া কুফরী,তার উপর আসরের নামাযের মর্যাদা অন্যরকম।

যার আসরের নামায ছুটে গেল,তার যেন পরিবার-পরিজন আর ধনসম্পত্তি ধ্বংস হয়ে গেল। (বুখারী,মুসলিম)

যে আসরের নামায ত্যাগ করল,তার আমল শূন্য হয়ে গেল। (বুখারী)

আসলে মামা,সমস্যাটা কোথায় জান? আমাদের সিস্টেমে। আমাদের সিস্টেমটাই এমন হয়ে গেছে যে আমাদের কাছে আল্লাহর আদেশ মানে নামায রোযা ছাড়া আর কিছু না। ইসলাম যে শুধু নামায রোযা না,ইসলাম একটা পরিপূর্ণ "দ্বীন",একটা পরিপূর্ণ সিস্টেম,যতভাবে সম্ভব,এই চেষ্টাটাই চলছে মুসলিমদের মাথা থেকে এই চিন্তাটা সরিয়ে দেবার জন্য।

আমি নিজের কথাই বলি,ঠিক এক বছর আগ পর্যন্ত,আমি তোমাদের মতই চিন্তাভাবনা করতাম,তোমাদের মতই চলতাম। আলহামদুলিল্লাহ,আল্লাহ আমাকে সঠিক পথ,সোজা পথ,সরল পথ,সিরাতাল মুস্তাকীমের দিশা দিয়েছেন।

মামা,তুমিই বল তো,যিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ,যিনি অমুখাপেক্ষী (সূরা ইখলাস),তাঁর আমাদের সাথে compromise করার কোন দরকার আছে? না আমাদের নিজেদের জন্য,নিজেদের চামড়া জাহান্নামের লেলিহান আগুন থেকে বাঁচার জন্য,তাঁর সাথে,তাঁর দেওয়া জীবনব্যবস্থার সাথে,আমাদের compromise করতে হবে?

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান ও বুঝ পাবার তাওফিক দান করুন। আমীন।

ভাল থাক মামা।

আসসালামু আলাইকুম।

ধর্ম যার যার,উৎসব ......???

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

ধরুন,কোন একটি occasion-কে কেন্দ্র করে আপনার মা'র পরিবারের একটি reunion হচ্ছে। আপনি,আপনার মা,আপনার maternal কাজিন,আপনার মা'র কাজিন,সবাই মিলে একটা হুলুস্থুল অবস্থা!

হঠাৎ,বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত,আপনার মা'র সাথে আপনার কোন মামার তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেল (এখানে ধরে নিছি যে আপনার ঐ মামা আপনার মা'র চেয়ে বয়সে অনেক ছোট)। ঝগড়ার একপর্যায়ে আপনার ঐ মামা আপনার মা'র দিকে তেড়ে গিয়ে চরম অসভ্যের মত বলে উঠলেন,"চুপ! আর একটা কথাও বলবেন না!"। অনেক চেষ্টা করে তাঁকে আপনার মা'র কাছ থেকে টেনে সরিয়ে আনা হল।

আপনি বলুন তো,আপনার মা'র সাথে এই রকম অসভ্য ব্যবহারের পর,আপনি আর জীবনে কখনো ঐ মামার সাথে আন্তরিক ব্যবহার করতে পারবেন? আমি মেনেই নিচ্ছি যে সামাজিকতার খাতিরে আমাদের মন সায় না দিলেও অনেককিছুই আমাদের মেনে নিতে হয়,কিন্ত আর কখনো আপনি কি তাঁর সাথে আগের মত আন্তরিক ভঙ্গিতে কথা বলতে পারবেন?

উত্তর,না,আপনি পারবেন না।

কেন পারবেন না?

Simple,তিনি আপনার মা'কে চূড়ান্ত অপমান করেছেন

আচ্ছা,তিনি তো আপনার মা'কে অপমান করেছেন,আপনাকে করেন নি! তাহলে আপনার এত গায়ে লাগে কেন?

এর উত্তরও সোজা। আপনার মা আপনাকে নিজের গর্ভে ধারণ করেছেন,অসম্ভব যন্ত্রণা সয়ে আপনাকে এই জন্ম দিয়েছেন,ছোট্টবেলা থেকে তিলে তিলে আপনার সকল যন্ত্রণা সয়ে আপনাকে বড় করেছেন। আর এখনও,যদি কোন কারণে সারা দুনিয়াও আপনাকে ছেড়ে চলে যায়,আপনার মা আপনাকে ঠিক সেই ছোট্টবেলার মত আগলে রাখবেন।

এবার মূল কথায় আসি।

বছর ঘুরে আবার এসেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব,শারদীয় দূর্গাপূজা। "সেক্যুলারিজম" সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক মুসলিম ভাইবোনকেই দেখ যায় তাঁদের হিন্দু বন্ধুদের সাথে এই উৎসবে যোগ দিতে,তাঁদের সাথে আনন্দ-ফূর্তি করতে।

আচ্ছা,ভাইয়া/আপু,একটু চিন্তা করুন তো,

আপনার হিন্দু বন্ধুটি,তিনি কী করছেন? একটি মাটির মূর্তির সামনে মাথা নত করছেন! একটা মূর্তি,যার কোন কিছু সৃষ্টির ক্ষমতা তো দূরের থাক,নিজেকে রক্ষার পর্যন্ত ক্ষমতা নেই,এই মূর্তিটিকে তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর আসনে বসিয়ে তার সন্তষ্টি কামনা করছেন। সোজা বাংলায়,তিনি শির্ক করছেন

আসুন দেখি,যখন শির্ক করা হয়,তখন এই দুনিয়ার কী অবস্থা হয়ঃ

তারা বলে,করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেছেন। তোমরা তো এক বীভৎস কথার অবতারণা করেছ। এতে যেন আকাশসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে,পৃথিবী খণ্ডবিখণ্ড হবে ও পর্বতসমূহ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে। যেহেতু তারা দয়াময়ের উপর সন্তান আরোপ করে। [সূরা মারইয়াম,আয়াত ৮৮-৯১]

চিন্তা করে দেখুন,যখন বলা হয়,আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন,তখনই তা সমগ্র আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে পৌঁছে যায়। সমগ্র সৌরজগৎ তা শুনতে পায়। এবং তা প্রায় বিদীর্ণ হয়ে যায়,খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যেতে চায়। যে প্রত্যেকটা মূহুর্তে এই কথাটা বলা হয়,সেই প্রত্যেকটা মূহুর্তে আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টি তাঁর অপমানে এতটাই অপমানিত হয় যে গায়েবের জগতে সমস্ত আকাশমণ্ডলী ফেটে পড়ার উপক্রম হয়।

শুধুমাত্র এই একটা শির্কেই যদি এই হয়,তাহলে বাকী শির্কের ক্ষেত্রে আর কী কী হতে পারে,তা সহজেই অনুমেয়,তাই নয় কী?

এখন একটু চিন্তা করুন তো,আল্লাহ আপনাকে আপনার মা'র চেয়েও অনেক অনেক বেশি ভালবাসেন (সহীহ মুসলিমের হাদীস)। আপনার হাত,আপনার পা,আপনার চোখ,আপনার জ্ঞান,আপনার বুদ্ধি,এক কথায় এই দুনিয়ায় আপনি যা যা উপভোগ করছেন,each & every single thing,is a gift from Allah to you!

যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা কর,তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। [সূরা ইবরাহীম,আয়াত ৩৪]

এখন উপরের ঘটনার সাথে তুলনা করে বলুন তো,যে উৎসবের উদ্দেশ্যই হল আল্লাহকে চূড়ান্তভাবে অপমান করা,একজন মুসলিম হিসেবে,একজন আত্মসমর্পণকারী হিসেবে,আপনার কি শোভা পায় সেই উৎসবে অংশগ্রহণ করা? এমন কি সেই উৎসব যেন ভালভাবে শেষ হয়,সেই wish-টুকুও করা,যেখানে মুসলমানের wish মানেই হল আল্লাহর কাছে দু'আরই অপর নাম?

কাফিরদের যে কোন উৎসবে অংশগ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য হারাম। ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন,

কাফেরদের তাদের উৎসবে সম্ভাষণ জানানো আলিমদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ। এটা কাউকে মদ খাওয়া বা খুন করা বা ব্যভিচার করায় সাধুবাদ জানানোর মতো। যাদের নিজের দ্বীনের প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই, তারাই কেবল এ ধরনের ভুল করতে পারে। যে অন্যকে আল্লাহ্-র অবাধ্যতা, বিদ’আত অথবা কুফরীতে জড়ানোর কারণে শুভেচ্ছা জানাবে সে আল্লাহ্-র ক্রোধ ও শাস্তির সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করে দিল।

বিস্তারিত জানার জন্য এই ফতোয়াটা দেখার অনুরোধ করছি।

তাহলে,আমাদের দ্বায়িত্ব কী?

অবশ্যই অন্য ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ উৎসব পালন করবেন,কিন্ত মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলঃ
  • তাঁদের উৎসবের সময় তাঁদের উপাসনালয়ের ধারেকাছেও না যাওয়া
  • তাঁরা নিমন্ত্রণ করলেও যথাসম্ভব নিমন্ত্রণ রক্ষা না করা
  • তাঁরা যেন ভালভাবে তাঁদের উৎসব সম্পন্ন করতে পারেন,এই wish না জানানো
  • বিশেষ করে তাঁদের উৎসর্গকৃত খাদ্য কোনভাবেই না খাওয়া
  • এবং কোনভাবেই তাঁদের এই উৎসব উপলক্ষ্যে আনন্দ প্রকাশ না করা
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য জানা ও বোঝার তাওফীক দান করুন। আমরা সবাই যেন পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করতে পারি। প্রতি মূহুর্তে যেন আমাদের মনে থাকে সূরা ইখলাসের সেই কালজয়ী অমর বাণীঃ


আমীন।

কৃতজ্ঞতাঃ

মূল ভাবনাঃ শুআইব ইসহাক

সূরা ইখলাসের অনুবাদের ক্যালিগ্রাফিঃ মুহাম্মাদ আরশাদুল ইসলাম

এই নোটটা শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য...............

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

“আমাকে আমার মত থাকতে দাও
আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি......”

অথবা

“I'm doing what I want
This is my life...........”

পশ্চিমা সভ্যতার এই type গানগুলো আমাদের দেশের মানুষের এখন মুখে মুখে। শুধু মুখেই না,আমাদের চিন্তা-ভাবনা,সবকিছু এই ভাবধারার সাথে মিশে গেছে। যত ভাল কথাই হোক,আমরা এখন তা আর শুনতে নারাজ। নিজে এটা বুঝেছি,তাই এটাই ঠিক! জ্ঞান,বুদ্ধি,যুক্তি,সব রসাতলে যাক, “আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে”।

ইসলাম কি আমাদের এটাই শিখায়? যে যার খুশিমত চলুক,কাউকে কিছু বলবে না,নিজে ঠিক থাক,তাহলেই চলবে,এটাই কি ইসলামের ভাবধারা? আসুন একটু বিশ্লেষণ করে দেখি। 

একটি রূপক গল্পঃ

ধরুন,আমি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড। তো যাই হোক,ধরুন একদিন আপনি আপনার প্রিয়জনের সাথে দেখা করার জন্য “ক” জায়গায় যাবেন! তো “ক”-তে যাওয়ার দুটি পথ রয়েছে,একটা বড় রাস্তা,ধরি “খ”,এবং আরেকটা shortcut, “গ”। আপনাদের দেখা করার সময় বিকাল ৩টা। 

তো যাই হোক,নির্দিষ্ট দিনটায় আপনি যে কোন কারণেই বাসা থেকে বের হতে আড়াইটা বাজিয়ে ফেললেন! এখন তো আপনার “খ” দিয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই,আপনাকে “গ” রাস্তাটাই নিতে হবে!

তো আপনি যখন “গ” রাস্তায় ঢুকছেন,তখনই দেখলেন যে আমি “গ” দিয়ে দৌড়ে এসে আপনার গায়ের উপর পড়ে গেলাম!

আপনিঃ আরে দোস্ত তুই! কী হয়েছে?

আমি (হাঁপাতে হাঁপাতে) : দোস্ত আর বলিস না! ঐ রাস্তায় হঠাৎ করে কাসেম গ্রুপ আর হাফিজ গ্রুপের লোকজন গোলাগুলি শুরু করে দিয়েছে! কোনমতে জান নিয়ে আল্লাহর রহমতে পালিয়ে এসেছি!

আপনিঃ বলিস কী! আলহামদুলিল্লাহ। কিন্ত একটা সমস্যা হয়ে গেল যে!

আমিঃ কেন কী হয়েছে?

আপনিঃ আরে বলিস না,ও আমার জন্য “ক”-তে অপেক্ষা করছে। ৩টার সময় দেখা করার কথা। আমার হাতে তো আর সময় নেই! আমাকে এই রাস্তাটা দিয়েই যেতে হবে।

আমিঃ আরে পাগল না কি! ভয়াবহ রকমের সংঘর্ষ বেঁধে গেছে! এর মধ্যে গিয়ে জানটা খোয়াবি না কি?

আপনিঃ আরে সমস্যা নাই! আমি পাশ দিয়ে পাশ দিয়ে চলে যাব! ওর সাথে ঠিক ৩টার সময় দেখা না হলে ভয়াবহ রাগ করবে।

আমিঃ আরে তুই বেঁচে থাকলে না রাগ করবে! তুই যদি মরেই যাস,তাহলে কার সাথে রাগ করবে? না দোস্ত,আমি তোকে ঐ রাস্তায় যেতে দেব না। চল,আমিও তোর সাথে “খ” দিয়ে যাই,ওকে আমি বুঝিয়ে বলব নি দেরির কারণ। 

আপনিঃ আরে না,সেটা হয় না কি? তুই চিন্তা করিস না,আমি ঠিক চলে যাব। 

আমিঃ আরে কী পাগলের মত কথা বলিস! কীভাবে গুলি চলছে জানিস? একেবারে বৃষ্টির মত! না,তোকে আমি কিছুতেই যেতে দেব না এই রাস্তায়!

আপনিঃ আরে আমাকে যেতেই হবে..................

এইভাবে কথপোকথন চলতেই থাকল। একপর্যায়ে আপনি বললেন, “এই ঝামেলা পাকাইস না তো! এটা আমার ব্যাপার,আমি দেখব!”। এই পর্যায়ে আমি দুইটা কাজ করতে পারিঃ 

১) আমি “যা ব্যাটা,গুলি খেয়ে মর গা,আমার কী?” বলে আপনাকে নিশ্চিন্ত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আমার পথে চলে যেতে পারি।

২) আপনাকে আরো বুঝিয়ে,দরকার হলে জাপটে ধরে,টেনেহিঁচড়ে আপনাকে “খ” রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতে পারি!

আপনিই বলুন,আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে আমার দ্বায়িত্ব কোনটি? আপনার শত অপমানসূচক কথার পরেও আপনাকে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচানো,না “ওর ব্যাপার,ও বুঝুক গে” বলে আপনার অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে আপনাকে নিশ্চিন্ত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া?

অবশ্যই প্রথমটি।

আর আমি যদি তাই না করি,আপনিই বলুন তো,আমি কোন অধিকারে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড তো দূরের কথা,শুধু “ফ্রেন্ড” হিসেবে নিজেকে দাবী করতে পারি?

এবার এই রূপক গল্পটার আড়ালে কিছু বাস্তব সত্যি কথায় আসি!

আমি আপনার ফ্রেন্ড! আমি ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করি,পাঁচ ওয়াক্ত নামায সঠিক সময়ে আদায় করি,দাঁড়ি রাখি,যতটা সম্ভব ইসলামের নিয়মকানুনগুলো মানার চেষ্টা করি। অন্যদিকে আপনি,ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা তো দূরের ব্যাপার,পাঁচ ওয়াক্ত নামায শেষ কবে একদিনে আদায় করেছেন মনে করতে পারেন না!

আমি খুব ভালভাবেই জানি,আপনার এই কর্মকাণ্ডগুলোর জন্য প্রতিটা মুহুর্তে আপনি নিশ্চিন্ত জাহান্নামের দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে চলেছেন! তো ঐ গল্পটার আদলে চিন্তা করে বলুন তো,আমি কীভাবে নিজেকে আপনার বন্ধু হিসেবে নিজেকে দাবী করব,নিশ্চিন্তভাবে এটা জানার পর যে আপনি এই মূল্যবান মুহুর্তগুলো হেলায় নষ্ট করছেন,এবং সবকিছু জেনেও আপনাকে কিছু বলছি না?

"পনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন,যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে?আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন,তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা।অতএব,আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে?তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না?"[সূরা জাসিয়া,আয়াত ২৩]

"হে জ্বিন ও মানব সম্প্রদায়,তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বরগণ আগমন করে নি?যাঁরা তোমাদেরকে আমার বিধানাবলী বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনের সাক্ষাতের ভীতি প্রদর্শন করতেন?তারা বলবেঃ আমরা স্বীয় গোনাহ স্বীকার করে নিলাম।পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে।তারা নিজেদের বিরুদ্ধে স্বীকার করে নিয়েছে যে, তারা কাফের ছিল।"[সূরা আল আন-আম: ১৩০]

বলুন,আমি কী ধরণের বন্ধু,যে জেনেশুনে আমার বন্ধুকে নিশ্চিন্ত শাস্তির পথে ঠেলে দিচ্ছি?

"তুমি কি জান 'সাকার' (জাহান্নামের আগুন) কি? এটা এমন ভয়াবহ আযাব যা এর অধিবাসীদের জ্বালিয়ে অক্ষত অবস্থায়ও ফেলে রাখবে না,আবার শাস্তি থেকে রেহাইও দেবে না,বরং তা মানুষের গায়ের চামড়া জ্বালিয়ে দেবে।" [সূরা আল মোদ্দাসসের , ২৭-২৯]

বর্তমান চিন্তাভাবনা ও ইসলামঃ

আপনি হয়ত এখন বলবেন, “এ দায়িত্ব তো ছিল আল্লাহর রাসূলদের,এবং ওনারা তা পালন করে গেছেন। তুমি কে আমাকে এইসব কথা বলার? কে তোমাকে এই দ্বায়িত্ব দিয়েছেন?”। 

অবশ্যই প্রত্যেক নবী-রাসূলের দায়িত্ব ছিল মহান আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া,এবং প্রত্যেকেই ওনাদের দ্বায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছেন! There is no doubt on that. কিন্ত ইসলামে প্রবেশ করার পর প্রতিটি মুসলমানের fundamental দ্বায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি হল,ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেওয়া,যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব,যেভাবে সম্ভব!

নিচের কথাগুলো দেখুনঃ

"কালের শপথ,মানুষ অবশ্য-ই ক্ষতির মধ্যে (ডুবে) আছে,কিন্তু তারা নয়,যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়।"(সূরা আল-আসর)

 "তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত,মানবজাতির কল্যাণ্যের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে।তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।"(সূরা আল-ইমরান,আয়াত ১১০)

আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা (মানুষকে) সৎকর্মের প্রতি আহবান জানাবে,ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে,আর তারাই হলো সফলকাম।"(সূরা আল ইমরান,আয়াত ১০৪)

আর তুমি সতর্ক কর তোমার নিকটাত্মীয় স্বজনদের।"(সূরা আশ-শু'আরা, আয়াত ২১৪)

 "যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?"(সূরা ফুসিলাত,আয়াত ৩৩)

"প্রচার কর,যদি একটিমাত্র আয়াতও হয়।"(সহীহ বুখারী ৩৪৬১)

দেখুন,আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.)-ই এই দ্বায়িত্ব দিয়েছেন প্রতিটি মুসলমানকে,যেন তাঁরা তাঁদের আপনজনদের,তাঁদের কাছের মানুষদের সঠিক পথের দিকে আহবান করেন!

একটু চিন্তা করে দেখুন তো,সবাই নিজ নিজ ভাবেই যদি চলে,তাহলে আর আল্লাহ কেন নবী-রাসূলদের পাঠালেন? কী দরকার ছিল তাওরাত,যাবূর,ইনজীল এবং মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ আলোকবর্তিকা আল-কুরআন নাযিলের??? বা নূহ (আ.),মুসা (আ.),ইবরাহীম (আ.) আর পরিশেষে রাসূলুল্লাহ (স.)-এরই বা কেন এত struggle তাঁদের নিজেদের জীবনটাকে আমাদের সামনে উদাহরণ হিসেবে set করার?????

উত্তর একটাই,মানুষ যেন সঠিক পথের সন্ধান পায়। মানুষ যেন তাগুতের (শয়তান,কুপ্রবৃত্তি) উপাসনা ছেড়ে সর্বশক্তিমান মহাজ্ঞানী আল্লাহর উপাসনায় লিপ্ত হয়,স্বাদ পায় মহাসাফল্যের।

একটি প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ

এখন হয়ত প্রশ্ন করবেন, “অনেক তো বকর-বকর কর। আমাকে দেখলেই বল নামায পড়তে,আমাকে দেখলেই বল দাঁড়ি রাখতে (অথবা হিজাব করতে),কিন্ত কই,মিথ্যা কথা না বলতে,ক্লাসের সময় অন্যদিকে মনোযোগ না দিতে,পরীক্ষার সময় অন্যের খাতা না দেখতে তো আমাকে বল না? এই তোমার ইসলাম???”।

তথাকথিত “মুক্তমনা”-দের top favorite এই প্রশ্নটা এখন মুসলিমদের মুখে মুখে! তো আসুন,দেখি কেন আগে নামায পড়ার বিষয়ে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়,এবং অবশ্যই কুরআন-হাদীসের আলোকে!

) “নিশ্চয় নামায মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” [সূরা আনকাবূত,আয়াত ৪৫]

অর্থ্যাৎ যে ব্যক্তি নিয়মিত একাগ্র মনে নামায পড়বে,আল্লাহই ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে সে কোন মন্দ কাজ করতে পারে না! অর্থ্যাৎ নিজের মনকে পাপ থেকে,মিথ্যা থেকে রক্ষা করার প্রধান অস্র হচ্ছে এই পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায! আর এর সাথে বাকি নফল নামাযগুলো মনকে পাপের বিরুদ্ধে আরো তৈরি করে।

) ''...তবে এখন যদি তারা তাওবাহ করে, সালাত আদায় করে, যাকাত প্রদান করে, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।” [সূরা আত-তাওবাহ-১১]

এই আয়াতে "দ্বীনি ভাই",অর্থ্যাৎ মুসলিম হওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলা কিছু শর্তারোপ করেছেন—

১ম শর্তঃ যেন তারা শিরক হতে তাওবাহ করে।

২য় শর্তঃ যেন তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে।

৩য় শর্তঃ আর যেন তারা যাকাত প্রদান করে।

) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—“নিশ্চয়ই মানুষ ও কুফরীর (শিরক) মাঝে পৃথককারী বিষয় হচ্ছে সালাত ত্যাগ করা।” (সহীহ মুসলিম)

) "আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের, অতএব, যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করল সে কুফরী করল।” (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)

অতএব,যে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের এক ওয়াক্ত নামাযও ইচ্ছা করে কাযা করেন,সে কুফরী অর্থ্যাৎ আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার ও অবিশ্বাস করার সমতুল্য গুনাহ করে ফেলেন! আর আল্লাহ বলে দিয়েছেন,তিনি কোনভাবেই শির্ক আর কুফরীর পাপ ক্ষমা করবেন না,যদি না মৃত্যুর পূর্বে তাওবা করা হয়!

আর যে লোক তা অস্বীকার করবে (অর্থ্যাৎ কুফরী করবে) এবং আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পাবে, তারাই হবে জাহান্নামবাসী; তারা অনন্তকাল সেখানে থাকবে।” [সূরা বাকারা,আয়াত ৩৯]

অবশ্যই মিথ্যা বলা একটি কবীরা গুনাহ,এবং এর শাস্তিও ব্যাপক! কিন্ত আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বিশুদ্ধ মত হচ্ছে যে ব্যক্তি শির্ক আর কুফর থেকে বেঁচে থাকবে এবং একমাত্র আল্লাহকেই ইলাহ হিসেবে মনে-প্রাণে স্বীকার করবে,আল্লাহ তার নির্দিষ্ট শাস্তি শেষ হওয়ার পর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেবেন,এবং একবার জান্নাতে প্রবেশ করার পর থেকে সে সেখানেই থাকবে! কিন্ত শির্ক আর কুফরীর গুনাহ কোনভাবেই মাফ করা হবে না!

এর স্পষ্ট আরো একটি উদাহরণ নিচের হাদিসটি।

একবার রাসূলুল্লাহ(স.)মায়ের কবর যিরায়তে গেলেন। সঙ্গে ছিলেন কিছু সাহাবা। সেখানে পৌঁছে তিনি কেঁদে উঠলেন। সাহাবাগণ কাঁদার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, “আমি আল্লাহর কাছে আম্মার কবর যিয়ারতের এবং তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলাম,কিন্ত আল্লাহ আমাকে সে অনুমতি দেন নি।"

চিন্তা করে দেখুন। রাসূলুল্লাহ (স.) নিজের পিতামাতার জন্য দোয়া করার অনুমতি পর্যন্ত পান নি,কারণ তাঁরা মুশরিক তথা কাফির অবস্থায় মারা গেছেন!

এখন আমাকে বলুন তো,ভাই,আপনাকে প্রথম দাওয়াত কীসের দেওয়া উচিত? নামায পড়ার,না মিথ্যা বলা পরিত্যাগ করার?

আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলতে পারি,কোন ব্যক্তি,যতদিন না পর্যন্ত আল্লাহকে “প্রকৃত” ভয় না করতে শুরু করে,সে কখনো মিথ্যা বলা পরিত্যাগ করতে পারবে না! কারণ যার মনে এই ভয়টাই নেই,যে আল্লাহ 24/7 আমাকে দেখছেন,আর একটি মিথ্যা বলার জন্যই আমাকে শাস্তি পেতে হবে,সে কীভাবে মিথ্যা পরিত্যাগ করবে? আপনি দেখুন,আল্লাহর রাসূল (সা.) তাঁর সারা জীবনে এবং সাহাবীরা ইসলাম গ্রহণের পর একটিবারের জন্যও মিথ্যা বলেন নি! কারণ কী? আল্লাহর ভয়,তথা তাক্বওয়া!

এবং এই তাক্বওয়াটাই কীভাবে আসবে? একাগ্র চিত্তে,শুধুমাত্র আল্লাহর ভয়ে,শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তষ্ট করার উদ্দেশ্যে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে দাঁড়িয়ে!!!

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ইসলাম বোঝার তাওফীক দান করুন! আল্লাহ আমাদেরকে মুসলমান হিসেবে মরার তাওফীক দান করুন! আল্লাহ হাশরের দিনে আমাদেরকে তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবার তাওফীক দান করুন!

আমীন!

কুরআন - সত্যিই কি আল্লাহর বাণী???


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

মাঝেমধ্যেই চিন্তা করি,আমি এখন যে রকম ইসলাম নিয়ে চিন্তা করি,একজন practicing মুসলিম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি,সেটা আগে কেন করি নি? আগে কেন এই চিন্তাগুলো মাথায় আসে নি যে এই দুনিয়ায় যা কিছু করছি,যা কিছু বলছি,তার প্রত্যেকটা কাজের জন্য পাই পাই করে হিসাব দিতে হবে???

উত্তরটা যেটা পাই সেটা হলঃ


আমি ইসলামকে নিজের কাছে কখনো verify করি নি! কখনো জানার চেষ্টা করি নি কেন ইসলাম এক আল্লাহর বাণী! কেন ইসলামই সত্য,আর বাদবাকি যা আছে সব ভুল,ভ্রান্তিতে ভরা! আমার মা-বাবা মুসলিম,আমার পরিবাব মুসলিম,এইজন্য আমিও মুসলিম!

আসুন দেখি উমার(রাঃ) কীভাবে ইসলাম গ্রহণ করলেন। রাসূলুল্লাহ(সঃ)-কে হত্যা করতে গিয়ে যখন জানতে পারলেন,তার বোন খাব্বাব ফাতেমা এবং ভগ্নীপতি সাঈদ বিন যায়েদ ইসলাম গ্রহণ করেছেন,তখন তাঁদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁদের ঘরে গিয়ে সর্বপ্রথম তিনি কুরআনের সান্নিধ্যে আসেন। কুরআনের সূরা ত্বহার প্রথমাংশ পাঠ করেই তিনি বললেন,"কত সুন্দর এই কালাম।",এবং রাসূলুল্লাহ(সঃ)-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন!

এভাবে আমরা যদি অন্যান্য সাহাবীদের দিকেও তাকাই,তাহলে দেখতে পারব,তাঁরা প্রত্যেকেই কুরআন অনুধাবন করেই ইসলামে এসেছিলেন। অর্থ্যাৎ,প্রত্যেকেই বুঝতে পেরেছিলেন যে,এই গ্রন্থ কোন মানুষের দ্বারা রচিত হতে পারে না,বিশেষত ঐ মানুষটি যদি হন একজন নিরক্ষর মানুষ! সে কারণেই,এত যন্ত্রণা,এত লাঞ্ছনা,এত কষ্ট,সব কিছু সহ্য করেও তাঁরা ইসলাম আঁকড়ে পড়ে ছিলেন!

বর্তমান যুগে,এই সময়ে,কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্কটা কী রকমঃ


  • আরবিই জানি না,কুরআন কী পড়ব???
  • আরবি জানতাম,ভুলে গেছি!!!
  • আরবি জানি,কিন্ত কুরআন পড়ি না!!!
  • আরবি জানি,কুরআনও পড়ি,কিন্ত অর্থ জানি না!!!
  • কুরআন অর্থসহ পড়ি ও বুঝি!

শেষের type সম্পর্ক রাখেন,এমন হাতে গোণা কয়েকজন বাদে বাকি সবার অবস্থা মোটামুটিভাবে বাকি চারটার মধ্যেই ফেলা যায়! যেহেতু আমরা কুরআনই বুঝি না,so আমরা এইটাও বুঝি না যে কুরআন আসলেই বিশ্বের আর যে কোন বইয়ের চেয়ে আলাদা! কুরআনকে জাগতিক আর কোন কিছুর সাথে মিলানো যায় না! এটি আসলেই ঐশ্বরিক এবং কোন মানুষের দ্বারা এটি রচনা সম্ভব নয়! এই বোধটা আমাদের আসে না বলে এই বোধটাও আমাদের মাঝে পুরোপুরিভাবে আসে না যে ইসলামই আমাদের একমাত্র মুক্তির পথ,আর এই ইসলাম আমাদের দিয়েছেন যিনি তিনি আর কেউ নন,এই বিশাল বিশ্বের একমাত্র অধিপতি,পরম করুণাময়,অসীম দয়ালু,আল্লাহ!!!

আমরা যদি বুঝে বুঝে কুরআন পড়ি,তাহলে আমরা খুব সহজেই identify করতে পারব যে,মহান আল্লাহ কী অসম্ভব রকম জ্ঞানী,আর তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আর তিনি যা যা বলেছেন,তা সবই বলেছেন,আমাদের কল্যাণের জন্য,আমাদের দুনিয়ার জীবনটা সুখে-শান্তিতে কাটানোর জন্য,এবং একইসাথে তার হুকুম মেনে চলার জন্য তিনি পুরষ্কার হিসেবে আমাদের জন্য রেখে দিয়েছেন জান্নাত!

আমি এই লেখায় কুরআনের কিছু অলৌকিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করব,যাতে আমরা বুঝতে পারি যে কুরআন মহান আল্লাহর রচিত গ্রন্থ,এবং একইসাথে যেন ইসলামটাও আমাদের কাছে verify হয়ে যায়! আর এর মাধ্যমে যেন আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে বোঝার ও পালন করার তাওফিক দান করেন! আমীন!

যেহেতু আমি বিজ্ঞানের ছাত্র,সুতরাং কুরআনের সাথে বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের সাদৃশ্যতা এই নোটটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। পরবর্তীতে অন্যান্য বিষয়গুলো তুলে ধরব ইনশাল্লাহ!

শুরু করি মরিস বুকাইলির কথা দিয়ে,যিনি গভীর অধ্যয়নের ফলস্বরূপ ‘বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান’ নামক একটি বই লিখেছেন। এ বইয়ে তিনি প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক বিষয়ে প্রাপ্ত বাইবেল ও কুরআনের বক্তব্য তুলনা করেছেন। বিচার-বিশ্লেষণের পরে তাঁর সিদ্ধান্ত হচ্ছে:




“পূর্ববর্তী দুটি ঐশীবাণী অর্থাৎ তাওরাত ও ইঞ্জিলের পর কুরআন অবতীর্ণ হয়। কুরআনের বাণীসমূহ যে শুধুমাত্র স্ববিরোধিতা থেকেই মুক্ত তা নয়, বাইবেলের মত এতে মানুষের কোন হস্তক্ষেপের প্রমাণ নেই। কেউ যদি নিরপেক্ষভাবে এবং বৈজ্ঞানিক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর বক্তব্যসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে চায়, তাহলে দেখতে পাবে যে তা আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তদুপরি বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বক্তব্য ও বাণী সেখানে রয়েছে। তারপরও এটা অচিন্তনীয় যে মুহাম্মাদের সময়ের একজন মানুষ এর রচয়িতা হতে পারে।
এতকাল যাবত যে সব আয়াতের বক্তব্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছিল না, আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আমাদেরকে সে সবের অর্থ বোঝার ব্যাপারে সাহায্য করেছে। একই বিষয়ে বাইবেল ও কুরআনের বক্তব্যের তুলনা করলে কিছু মৌলিক পার্থক্য ধরা পড়ে। বাইবেলের বর্ণনা যেখানে বৈজ্ঞানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, সেখানে কুরআনের বর্ণনা আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রাপ্ত জ্ঞান ও তথ্যের আলোকে সঙ্গতিপূর্ণ। উদাহরণ হিসাবে সৃষ্টিতত্ত্ব ও মহাপ্লাবনের বিষয নেওয়া যেতে পারে। ইহুদীদের মিসর-ত্যাগের ঘটনার বর্ণনায় কুরআন বাইবেলের সম্পূরক। যেমন প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারে দেখা গেছে, মূসার আমলকে চিহ্নিত করা যায় এমন সব নিদর্শন কুরআন ও বাইবেলের বর্ণনার মিল প্রমাণ করছে। এছাড়া অন্য সব বিষয়ে এই দুই গ্রন্থের পার্থক্য বিরাট। যা আসলে এতদিন যাবত মুহাম্মাদ সম্পর্কে চলে আসা এই অভিযোগকেই খণ্ডন করছে যে তিনি কুরআন রচনা করেছেন বাইবেল থেকে নকল করে, কোন প্রমাণ দেওয়া ছাড়াই এসব অভিযোগ করা হতো। মুহাম্মাদের আমলের জ্ঞানের উৎকর্ষতার আলোকে এটা ধারণাতীত যে কুরআনের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বক্তব্য কোন মানুষের করা। সুতরাং এটা স্বীকার করে নেওয়া অত্যন্ত যথাযথ যে কুরআন শুধু অবতীর্ণ কিতাব নয়, বরং এর সঠিকত্বের নিশ্চয়তার জন্য এবং এতে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক তথ্যের জন্য একে বিশেষ মর্যাদার স্থান দেওয়া উচিত, কারণ কুরআনের অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা একথাই প্রমাণ করে যে এর কোন মানবিক ব্যাখ্যা অসম্ভব।”

আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা সমর্থিত কিছু বক্তব্য

১। ভ্রূণসৃষ্টি ও এর বিকাশ সম্পর্কিত যথাযথ বর্ণনা:

নবী মুহাম্মাদের সময়ে এ সম্পর্কে বিরাজমান তত্ত্বের ভিতরে এরিস্টটলের এই ধারণা অন্তর্ভুক্ত ছিলো যে একটি শিশু রক্তের জমাট বাঁধা অবস্থা থেকে সৃষ্ট, যেভাবে পনীর তৈরী হয়। আঠারশ শতাব্দীতে হার্টসিকার দাবী করেন যে তিনি আদি মাইক্রোস্কোপ-এর সাহায্যে স্পার্ম এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে গঠিত মানুষ দেখতে পেয়েছেন। কুরআন এসব কিছুই বলছে না, বরং মানবের ভ্রূণাবস্থার বিকাশের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা দিচ্ছে:


“আমি তো মানুষকে মাটির উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক নিরাপদ আধারে স্থাপন করি, পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাট রক্তে, অতঃপর জমাট রক্তকে পরিণত করি পিণ্ডে এবং পিণ্ডকে পরিণত করি অস্থিপিঞ্জরে, অতঃপর অস্থিপিঞ্জরকে মাংস দ্বারা ঢেকে দিই, অবশেষে তাকে রূপ দান করি। সুনিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান! এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে।” (সূরা আল মু’মিনুন, ২৩, ১২-১৬)
নবী (সঃ) আরো ব্যাখ্যা করেন যে “নুতফা” পুরুষের শুক্রাণু ও নারীর ডিম্বাণু উভয়টিকেই বোঝায়। “আলাকা” শব্দটির তিনটি অর্থ আছে আরবীতে: (১) আঁকড়ে থাকা বস্তু, (২) জমাট রক্তবিন্দু, (৩) জোঁকের মত বস্তু। তিনটি অর্থই বিকাশমান ভ্রূণের প্রথম ধাপকে সঠিকভাবে বর্ণনা করে। নিষিক্ত ডিম্বাণু এমন হয় যে তা জরায়ূর দেওয়াল আঁকড়ে ধরে রাখে। তারপর আকার ও আচরণের দিক থেকে সেটা জোঁকের সাদৃশ্য অবলম্বন করে। জোঁক এবং ভ্রূণ উভয়েই রক্ত শোষণ করে। এটা জমাট রক্তবিন্দুর মতও হয়ে থাকে। পরবর্তী স্তরে এটা চিবানো-বস্তুর মত হয় দেখতে, এটাও সঠিক। এটাও সত্যি যে পেশী ও মাংসের পূর্বে অস্থি তৈরী হয়। রাসূলের হাদীসে এসেছে:


“যখন বিয়াল্লিশ দিন পার হয়, আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠান যখন সে ভ্রূণকে আকার দান করে, এর কান, চোখ, চামড়া, মাংস এবং হাড় তৈরী করে। তারপর সে জানতে চায়, “হে রব, এটা কি পুরুষ অথবা নারী? এবং তোমাদের প্রভু স্থির করেন যা তিনি চান এবং তখন ফেরেশতারা তা লিখে নেয়।”
এই যথাযথ তথ্য বর্ণিত দিকগুলির বিকাশের সঠিক সময় জানাচ্ছে এবং ভ্রূণের লিঙ্গ ঠিক বিয়াল্লিশ দিনের পূর্বে সুনিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব নয়। মাত্র কয়েক দশক পূর্বেও শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের আগে এটা জানা সম্ভব ছিল না। শীর্ষস্থানীয় ভ্রূণতত্ত্ববিদগণের অন্যতম কিথ মুর, কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান, কুরআনের এই সমস্ত বক্তব্য ও সহীহ হাদীসের বক্তব্য সম্পর্কে বলেন,


“উনিশ শতক পর্যন্ত, মানবীয় বিকাশের ধাপগুলি সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না। উনিশ শতকের শেষ দিকে বর্ণমালার প্রতীকের উপর ভিত্তি করে মানব ভ্রূণের বিকাশের বিভিন্ন ধাপ চিহ্নিত করা হয়। বিশ শতকে সংখ্যার সাহায্যে এর ২৩টি ধাপ বর্ণনা করা হয়। এই সংখ্যার সাহায্যে চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি অনুসরণ করা সহজ নয় এবং একটি ভালো পদ্ধতি হবে অঙ্গসংস্থান বিদ্যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা পদ্ধতি। সামপ্রতিককালে কুরআনের অধ্যয়নের ফলে ভ্রূণবিকাশের বিভিন্ন ধাপ চিহ্নিতকরণের আর একটি পদ্ধতি প্রকাশিত হয়েছে যা এর সহজবোধ্য আকৃতির পরিবর্তন ও নড়াচড়ার উপর ভিত্তি করে তৈরী। এখানে যেসব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা আল্লাহ জিবরাইলের মাধ্যমে রাসূল (সঃ) কে জানিয়েছেন এবং তা কুরআনে লিপিবদ্ধ হয়েছে…. এটা আমার কাছে পরিষ্কার যে এসব বক্তব্য নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছ থেকে মুহাম্মাদ (সঃ) এঁর কাছে এসেছে কারণ এই জ্ঞানের প্রায় সবটুকুই অবিষ্কৃত হয়েছে এর বহু শতক পরে। এটা আমার কাছে প্রমাণ করছে যে মুহাম্মাদ নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল।”
ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান এবং ফিলাডেলফিয়ার টমাস জেফারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল বাও ইনস্টিটিউটের পরিচালক মার্শাল জনসন বলেন,


“বিজ্ঞানী হিসাবে আমি সেসব বস্তু নিয়ে কাজ করি যা আমি নির্দিষ্টভাবে দেখতে পারি। আমি ভ্রূণতত্ত্ব এবং ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি বুঝতে পারি। আমি কুরআনে যে শব্দগুলি আমার কাছে অনুবাদ করে দেওয়া হয়েছে তা বুঝতে পারি। আমাকে যদি আমার আজকের জ্ঞান ও বর্ণনার যোগ্যতা সহকারে সেই যুগে স্থানান্তর করা হয়, আমি ব্যাপারগুলি যেভাবে বর্ণনা করা আছে সেভাবে বর্ণনা করতে পারব না। আমি এটা প্রত্যাখ্যানের কোন কারণ দেখি না যে মুহাম্মাদ এই তথ্য অন্য কোথাও থেকে পেয়েছেন, সুতরাং আমি এই ধারণার সাথেও সাংঘর্ষিক কিছু দেখতে পাই না যে তিনি যা বলেছেন তাতে ঐশী হস্তক্ষেপ রয়েছে।”
     
২। মহাকাশবিজ্ঞান:


“অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম; এবং জীবন্ত সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?” (সূরা আল আম্বিয়া, ২১:৩০)
এই আয়াতটি বিশ্বের উৎপত্তির সাধারণ তত্ত্ব বর্ণনা করছে, যে সত্য আজ থেকে চল্লিশ বছর আগেও নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্যার সূচনার আগে আবিষ্কৃত হয়নি। এখানে যে পৃথক করার বলা হয়েছে তা বিজ্ঞানীদের কথিত “বিগ-ব্যাং” তত্ত্বের অনুরূপ। তাছাড়া, সমস্ত জীবিত প্রাণী প্রটোপ্লাজম দিয়ে তৈরী যার ৮০-৮৫% ভাগই পানি।


“অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধূম্রপুঞ্জ বিশেষ। অনন্তর তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আমার আদেশ পালনের জন্য ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় প্রস্তুত হও।’ তারা বলল, ‘আমরা তো অনুগত থাকতে পস্তুত আছি।” (সূরা আল ফুসসিলাত, ৪১:১১)
এখানে ধূম্রপুঞ্জ শব্দটি বিশ্বের আদিম অবস্থার সঠিক বর্ণনা দিচ্ছে, যা ছিল গরম গ্যাসের পিণ্ড যাতে বস্তুকণা দ্রুত ছোটাছুটি করছে, ধোঁয়ার মত। এ থেকে গ্রহ, নক্ষত্র ও পৃথিবী তৈরী হয়।


“আমি আমার ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমিই একে সমপ্রসারিত করছি।” (সূরা আয যারিয়াত, ৫১:৪৭)
এটা একটা স্বীকৃত সত্য যে আমরা যে বিশ্বে বাস করছি তা সমপ্রসারণশীল। “আল্লাহই দিন এবং রাত তৈরী করেছেন, এবং চাঁদ ও সূর্য। প্রত্যেকেই নিজ নিজ গতিতে কক্ষপথে সাঁতার কাটছে/ঘুরছে।”
নিজ গতিতে চলার জন্য যে আরবী শব্দ ব্যবহৃত হয় তা হচ্ছে সাবাহাহ্‌ (এই আয়াতে ইয়াসবিহুনা)। এটা এমন গতি নির্দেশ করছে যা বস্তুর নিজের। যদি এটা পানিতে ঘটত, তাহলে এটা হত সাঁতার কাটা; এটা সেই নড়াচড়া যা একজনের পায়ের মাধ্যমে হয়। মহাশূন্যে নড়াচড়ার সময় এটা হবে নিজের অক্ষের উপর ঘুরে যাওয়া। সূর্য নিজের কক্ষপথে পৃথিবীর চারপাশে নয়, বরং ছায়াপথের কেন্দ্রের চারপাশে ঘোরে, সুতরাং এখানে কোন বৈপরীত্য নেই, কারণ কুরআন সূর্যের কক্ষপথ নির্দিষ্ট করেনি।


“তুমি কি দেখ না আল্লাহ রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিবর্তন করেন?” (সূরা আল লুকমান, ৩১:২৯) “তিনি রাত্রি দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা।” (সূরা আয যুমার, ৩৯:৫)
পেঁচানো বা জড়ানো আরবী শব্দ কাওওয়াররার অনুবাদ। এর মূল অর্থ হচ্ছে মাথার চারপাশে পাগড়ী পেঁচিয়ে বাঁধা। অবিরত পেঁচানোর পদ্ধতি-যাতে এক অংশ আরেক অংশের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে, কুরআনে এমনভাবে বলা হয়েছে যে মনে হয় সে সময়ে পৃথিবীর গোলাকৃতি হওয়ার ধারণার সাথে মানুষ পরিচিত ছিল, যা স্পষ্টতঃই সত্য নয়।


“তিনিই সূর্যকে তেজষ্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তার তিথি নির্দিষ্ট করেছেন…” (সূরা ইউনুস, ১০:৫)
কুরআনে সূর্যকে “সিরাজ” হিসাবে বলা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে “মশাল” যা নিজের তাপ ও আলো উৎপন্ন করে যেখানে চন্দ্রকে “নূর” বা আলো হিসাবে বলা হয়েছে যার অর্থ অন্য উৎস থেকে নেয়া আলোর আভা।

৩। ভূতত্ত্ব:


আমি কি ভূমিকে বিছানা ও পর্বতকে কীলক সদৃশ করিনি?” (সূরা আন নাবা’, ৭৮:৬-৭)“আল্লাহই পৃথিবীতে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যাতে এ তোমাদের নিয়ে ঢলে না পড়ে।” (সূরা আল লুকমান, ৩১:১০)
সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে যে পর্বতমালার মূল ভূত্বকের ভিতরে চলে গেছে যা সাতটি টেকটোনিক প্লেট দিয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলির নড়াচড়াই ভূমিকম্পের কারণ। এটা ধারণা করা হচ্ছে যে এই মূল ও পর্বতের ওজন ভূত্বকের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪। প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত:

কুরআনের ষষ্ঠতম পারায় বলা আছে যে মধু সংগ্রহকারী মৌমাছি হচ্ছে স্ত্রী মৌমাছি; যদিও এটা সাধারণ ধারণা যে মৌমাছিরা সৈনিক এবং তারা রাজার অধীন। কুরআনে আরো বলা আছে যে উদ্ভিদের মাঝেও স্ত্রীপুরুষ রয়েছে এবং বায়ুর সাহায্যেও উদ্ভিদের প্রজনন ঘটে থাকে।


“আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু প্রেরণ করি।” (সূরা আল হিজর, ১৫:২২)
এগুলি সবই সামপ্রতিককালে আবিষ্কৃত হয়েছে।

৫। পরমাণু বিজ্ঞান:

গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস (৪৬০-৩৬১ খৃ.পূ.) এই তত্ত্বের উদ্‌গাতা যে বস্তু ছোট অবিভাজ্য কণা দিয়ে তৈরী, যার নাম এটম। আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে এটম আছে, তবে তা বিভাজ্য। কুরআন বলছে:


“তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে অণু-পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু যাঁর অগোচর নয়।” (সূরা সাবা, ৩৪:৩)

৬। ত্বক বিজ্ঞান:


“মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারব না? বস্তুত আমি তার অঙ্গুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।” (সূরা আল ক্বিয়ামাহ, ৭৫:৩-৪)
কোন দুটি আঙ্গুলের ছাপ একরকম নয়। [সংকলক - দুইটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপ এক রকম না হওয়ায়, এই বৈশিষ্ট্যকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভেরিফিকাশন নামে অন্যতম সিকিউরিটি অথেন্টিক্যাশেন মেথড হিসেবে বর্তমানে ব্যবহত হচ্ছে।] এই আয়াতে আমাদের পুনর্জীবিত করার আল্লাহর জ্ঞান ও ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে যা সবচেয়ে একক ও স্বতন্ত্র অঙ্গ পর্যন্ত করা হবে।


“যারা আমার আয়াতকে অবিশ্বাস করে তাদের আগুনে দগ্ধ করবই। যখনই তাদের চর্ম দগ্ধ হবে তখনই তার স্থলে নতুন চর্ম সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আন নিসা, ৪:৫৬)
যেসব স্নায়ুপ্রান্ত বেদনা বোধ করে তা চামড়ায় রয়েছে। যখন চামড়া মারাত্মকভাবে পুড়ে যায়, তখন স্নায়ুপ্রান্ত ধ্বংস হয়ে যায় ও বেদনা আর টের পাওয়া যায় না। জাহান্নামে আল্লাহ পুনরায় চামড়া সৃষ্টি করবেন যাতে তার অধিবাসীরা স্থায়ীভাবে তীব্র ব্যথা অনুভব করে।


“নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ হবে পাপীর খাদ্য; গলিত তাম্রের মত তা উদরে ফুটতে থাকবে, ফুটন্ত পানির মত।’ ‘আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত। তোমরা তো এ শাস্তি সম্পর্কে সন্দিহান ছিলে।’ (সূরা আদ দুখান, ৪৪:৪৩-৫০)
“…এবং যাদের পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়িভুড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।” (সূরা মুহাম্মাদ, ৪৭:১৫)
অন্ত্রে তাপ বহনকারী ধারক থাকে না। এটা জানা আছে যে, যদি নাড়িভুঁড়ি কেটে যায় তাহলে এর ভিতরের উপাদানসমূহ উচ্চ সংবেদনশীল পেরিটোনিয়া ক্যাভিটিতে চলে যায়, যেখানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। এটা বর্তমানের প্রচলিত জ্ঞান নয়, মুহাম্মাদের সময়ের তো নয়ই। সে যাই হোক, কুরআনের রচয়িতা এসব সত্যের সাথে সুপরিচিত!

৭। পানি চক্র:

কুরআনে সঠিকভাবে পানি চক্রের বর্ণনা দেওয়া আছে এবং ভূগর্ভের ঝরণার পানির উৎস হিসাবে বৃষ্টির পানিকে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক প্রতীয়মান হলেও গ্রীক দার্শনিকগণ এটা মনে করতেন না, তাঁরা ভাবতেন মাটির তলার ঝর্ণাধারা তৈরী হত সমুদ্রের পানির ধারা গুহায় জমে গিয়ে, যা বিরাট পাতালের সমুদ্রে গহ্বরের মাধ্যমে সরবরাহ হতো। আসলে অষ্টাদশ শতকের পূর্বে পানি চক্র সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। অথচ কুরআন এদিকে বলছে,


“তুমি কি দেখনা, আল্লাহ আকাশ থেকে বারিবর্ষণ করেন, অতঃপর ভূমিতে স্রোতরূপে প্রবাহিত করেন?” (সূরা আয যুমার, ৩৯:২১)
সংক্ষিপ্ত রাখতে গিয়ে আমি শুধু কয়েকটি বক্তব্যের উল্লেখ করেছি এবং বিজ্ঞান বিষয়ক কুরআনের বক্তব্যের ও হাদীসের বর্ণনার সীমাবদ্ধ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছি। কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন ও ডেন্টিস্ট্রির এনাটমি বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান টি.ভি.এন পারসাদ বলেছেন,


“মুহাম্মাদ একজন সাধারণ লোক ছিলেন, তিনি পড়তে জানতেন না, লিখতে পারতেন না, আসলে তিনি নিরক্ষর ছিলেন…আমরা যে বিষয়ে আলোচনা করছি তা হল যে চৌদ্দশত বছর পূর্বে কিছু নিরক্ষর লোক গভীর কিছু উচ্চারণ করেছিল ও বক্তব্য দিয়েছিল যা বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক। আমি ব্যক্তিগতভাবে বুঝতে পারি না এটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা কিভাবে হতে পারে, এতে অসংখ্য অত্যন্ত সঠিক ব্যাপার রয়েছে… আমার মনে কোন সংশয় নেই এই সত্য স্বীকার করতে যে কোন ঐশী প্রেরণা বা ওহী তাঁকে এই বক্তব্যগুলি দিতে নির্দেশ দিয়েছে। আমরা যেন ড. মরিস বুকাইলির কথাগুলি ভুলে না যাই যে এই সত্যগুলো “মানবীয়ভাবে ব্যাখ্যার ব্যাপারে একটি চ্যালেঞ্জ।”
এবং প্রফেসর পারসাদ এর বিবৃতি যে এটা হঠাৎ ঘটে যেতে পারে না, এখানে অসংখ্য সঠিক তথ্য রয়েছে! মুহাম্মাদের জন্য অনুমান করা এবং প্রতিটি সঠিক হওয়ার সম্ভাব্যতা আসলেই বিস্ময়কর। এ সমস্ত বিজ্ঞানীরা, যাঁরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপরিচিত, সেই আরবদের মত যারা তাদের ভাষা পাণ্ডিত্য সহকারে আয়ত্ব করেছিল মুহাম্মাদের সময়ে, স্পষ্ট প্রমাণ চিনতে পারেন এবং কুরআনের প্রকৃতির অলৌকিকত্ব অনুধাবন করতে পারেন। “আমরা তাদেরকে আমাদের নিদর্শন দেখাবো দূর দিগন্তে এবং তাদের মধ্যে যতক্ষণ না তারা জানতে পারে যে এটাই সত্য।”

কুরআন বাহ্যিক বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং আভ্যন্তরীণের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ। অসঙ্গতি ও বৈপরীত্য রয়েছে আসলে মানুষের কাজের প্রকৃতিতে, তা তারা বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাধু অথবা সূফী যাই হোক না কেন। এটা ঐশী ওহীর জন্য সত্য হতে পারে না, যেমন কুরআন বলছে, “তারা কি সতর্কতার সাথে কুরআন নিয়ে চিন্তাভাবনা করে না, যদি এটা আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছ থেকে হতো, তারা এতে বহু অসামঞ্জস্য খুঁজে পেতো।

আল্লাহ আমাদের সঠিক চিন্তাভাবনা করার ও সত্যকে বুঝার তাওফিক দিন! আমীন!

["কুরআনের আলো ডট কম" ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত ও সামান্য নিজস্ব সংযোজিত]

ভালবাসার এপিঠ-ওপিঠ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

ছোটবেলায় কমিকসের ভীষণ ভক্ত ছিলাম। কলকাতার ডায়মন্ড কমিকসের চাচা চৌধুরী,বিল্লু,পিংকি,রমন - কত যে কিনেছি আর কত পড়েছি,তার কোন হিসেব নেই।

তো রমনের কমিকসের একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। একদিন রমনের বাসায় একজন সেলসম্যান আসল। রমন তখন অফিসে। রমনের বউ কমলা যখন দরজা খুললেন,তখন সেলসম্যান বলল,"আমাদের চমৎকার রঙ ফর্সাকারী ক্রিম,মাত্র ৫০ টাকা। একবার লাগান আর ফিল্মস্টার হয়ে যান।"!

মেয়েমানুষ মাত্রই ফর্সা চামড়ার প্রতি দুর্বল। তো কমলা,যথেষ্ট পরিমাণ ফর্সা হওয়া সত্ত্বেও ঐ ক্রিম কিনতে চাইলেন এবং টাকা আনতে বাসার ভিতরে চলে গেলেন। ইতিমধ্যে রমন বাসায় ফিরে এলেন এবং গেটের বাইরে সেলসম্যানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোজা বেরিয়ে যেতে বললেন। কমলা দৌড়ে এসে ঐ সেলসম্যানকে আটকালেন আর বললেন যে তিনি ক্রিম কিনবেনই। রমন যখন বললেন,"তুমি এই ক্রিম কিনতে পারবে না।",কমলা বললেন,"তুমি অন্তত একটা কারণ দেখাও কেন আমি ক্রিমটা কিনব না",তখন রমন বললেন,

"ওর রঙ ফর্সাকারী ক্রিম সত্যিই যদি রঙ ফর্সা করত,তাহলে ও নিজে এত কাল কেন?"
এবং ঐ সেলসম্যান আসলেই কাল ছিল!

কখনো কখনো শুধুমাত্র একটা কারণই যথেষ্ট হয়ে যায়। ৯৯%-এর বদলে ১%-ই তখন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়।

তো এখন মূল কথায় আসি।

আমাদের চারপাশে ভালবাসার ছড়াছড়ি। গানে ভালবাসা,নাটকে ভালবাসা,সিনেমায় ভালবাসা,বিলবোর্ডে ভালবাসা! টেলিভিশন,রেডিও খুললেই ভালবাসা। এমন কি আমি যখন এই নোটটা লিখছি,আমারই পাশের কোন এক বাসায় লাউডস্পিকারে ভালবাসার গান হচ্ছে,আর আমি ধৈর্যের চরম পরিচয় দিয়ে (নিরুপায় হয়েই) সেই গান কর্ণকুহরে প্রবেশ করাচ্ছি। সদ্যপ্রয়াত হূমায়ূন আহমেদের ভাষায়," হে বাঙ্গালী জাতি,প্রেম কর,প্রেম। হে বাঙ্গালী জাতি প্রেমে ধর হাত মম।"

তো এই যাঁরা আমাদের প্রেমের প্রতি নিয়মিত আহবান জানাচ্ছেন,গায়ক/গায়িকা গানের মাধ্যমে,অভিনেতা/অভিনেত্রী অভিনয়ের মাধ্যমে,মডেল মডেলিং-এর মাধ্যমে,আরজে/ভিজে (বাংলা ভাষায় উপস্থাপক) উপস্থাপনার মাধ্যমে,আমরা তো এটুকু আশা করতেই পারি,যে তাঁরা নিজেরা ভালবাসার মানে বুঝেছেন,এবং ভালবাসাকে নিজের জীবনে আত্মস্থ করেছেন,তাই না?

চলুন একটু দেখে আসি,তাঁদের জীবনে ভালবাসার কী অবস্থা?

এটা কারো অজানা নয় যে "সেলিব্রিটি কাপল" মানেই হল ভাঙ্গাগড়ার সংসার। কিছুদিন একসাথে থাকা,তারপর ইচ্ছা হলেই সাজানো-গোছানো সংসারটাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া। উদাহরণস্বরুপ আছেন সুবর্ণা মুস্তাফা-হূমায়ূন ফরিদী,তিন্নী-হিল্লোল,কেট মস-ব্র্যাড পিট প্রমুখ (লিস্ট বাড়াতে থাকলে এই নোট আর শেষ হবে না!)।

আর একেবারে গরম খবর তো আমাদের বিখ্যাত সঙ্গীতপরিচালক ইমনের। এক বছর একটা মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে একদম স্ত্রীর মত রাখা,তার শরীরের যাবতীয় সুধা উপভোগ করা,তারপর যখন সাধ মিটে গেল,মেয়েটার নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাকে বের করে দেওয়া,সবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাকে বিয়ে করা - এরই নাম ভালবাসা?

এই খবরটা তো তাও exposed হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এভাবে কত জীবন ঝরে গেছে,নষ্ট হয়েছে,কে বলতে পারে?

এই সেলিব্রিটিদের ব্যক্তিগত জীবন যে কী পরিমাণ নোংরা,একজন চোখ-কান-নাক খোলা সাধারণ মানুষ মাত্রই জানেন।

তো এখানেই আমার প্রশ্ন,

যাদের গান শুনে,যাদের ছবি দেখে,যাদের অভিনয় দেখে,আমরা মনে করছি যে একটা মেয়ে/একটা ছেলেই আমাদের জীবনের সবকিছু,তার ভালবাসা ছাড়া আমাদের জীবন ব্যর্থ,তাদের ব্যক্তিগত জীবনটার দিকে একবার তাকিয়ে কেন দেখি না আমরা? কেন আমদের মনে আসে না,তাদের কথাগুলো যদি সত্যি হত,তাদের ভালবাসার definition যদি আসলেই perfect হত,তাহলে তাদের ব্যক্তিগত জীবন এতটা নোংরা কখনোই হত না? তাদের দেওয়া ভালবাসার সংজ্ঞা যদি সত্যিই হত,তাহলে কেন তাদের নিজেদের জীবনই লণ্ডভণ্ড? রমনের সেই একটা প্রশ্নের মত,এই একটা প্রশ্নই কি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে আসল দৃশ্যটা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়?

প্রসঙ্গত,নিজের জীবনের একটা experience বলতে চাই।

স্টার জলসা নামে একটা কলকাতার বাংলা চ্যানেল আছে। সেই চ্যানেলে একটা অনুষ্ঠান দেখেছিলাম,নাম মনে নেই। তবে অনুষ্ঠানটা ছিল বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে যে মান-অভিমান হয়,তার ফলে একে অপরের  কাছ থেকে তাঁরা দূরে সরে যান,তাঁদের মধ্যে মিল করিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে। উপস্থাপনা করছিলেন ওপার বাংলার বিখ্যাত অভিনেত্রী কোয়েল মিত্র।

তো সেই পর্বে এসেছিল একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। ছেলেটার বয়স ১৯,মেয়েটার ১৮। পালিয়ে গিয়ে দুইজন বিয়ে করে এবং নিজেরাই ঘর-সংসার চালানোর দ্বায়িত্ব নিতে চায়। যেহেতু সিনেমা আর লাইফ এক না,তাই ছেলেটা আর সংসারের ঘানি টানতে না পেরে একপর্যায়ে তার বউকে ফেলে পালিয়ে যায়। মেয়েটা অনেক খুঁজেও তার স্বামীকে না পেয়ে শেষমেষ ওই অনুষ্ঠানের আশ্রয় নেয়,এবং অনেক দিন পর তারা এক হয়।

যাই হোক,তো কথাবার্তার একপর্যায়ে কোয়েল ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করেন,"যদি সংসারের ঘানি টানতে না পার,তাহলে বিয়ে করলে কেন?"। ছেলেটার সরল উত্তর,"আপনাদের ছবি দেখে দেখে মনে করেছিলাম যে ভালবাসার শক্তি দ্বারা সব জয় করা সম্ভব!"। কোয়েল এরপর যে উত্তর দিলেন,তাতে আমি হাসব,না কাঁদব,কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না!

কোয়েলের উত্তরঃ

"তোমরা কেন দুই-তিন ঘণ্টার একটা ছবিকে জীবনের সমতুল্য মনে কর? ছবি তৈরি করা হয় তোমাদের এন্টারটেইমেন্টের জন্য! ছবি দেখে আনন্দ নিবে,ফুর্তি করবে,ব্যস ফুরিয়ে গেল!"

ওয়াও!

নিজেরা ছবিতে দেখাচ্ছেন,শিখাচ্ছেন,প্রেম স্বর্গ থেকে আসা অমূল্য রত্ন,প্রেমই জীবনের একমাত্র সত্য,প্রেমের কাছে জীবনের সকল বাধা তুচ্ছ।

যৌবনের স্বাভাবিক আবির্ভাবে একটা ছেলে বা একটা মেয়ে যখন এমনিতেই বিপরীত লিঙ্গের একজন সঙ্গীর জন্য পাগল,তখন তারা কোয়েলদের দেখে শিখছে,প্রেমে পড়লে একটা ছেলে হয়ে যায় সুপারম্যান,আর একটা মেয়ে হয়ে যায় ওয়ান্ডার ওম্যান! পৃথিবীর কোন বাধাই তাদের কাছে আর কোন বাধা থাকে না,"ভালবাসা" নামক কোন এক জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় এরা হয়ে ওঠে অসীম শক্তির অধিকারী!!!

কিন্ত এরকম কোন মর্মস্পর্শী বাস্তব ঘটনা কোয়েলদের সামনে আসে,তখনই গলার সুর পালটে তাঁরা বলে ওঠেন,"আরে এটা তো শুধু এন্টারটেইমেন্ট!"।

এইরকম কিছু এন্টারটেইমেন্টের কাছেই শেষ হয়ে যায় অগণিত মুসলিম যুবক-যুবতীর সুন্দর ভবিষ্যৎ।

যাই হোক,শেষ করার আগে,একটা গল্প দিয়ে শেষ করতে চাই। না,ঠিক গল্প বললে ঠিক হয় না,বরং বলি,"লাভ স্টোরি"।

তাঁরা বিয়ে করলেন। না,বিবাহপূর্ব প্রেমপ্রীতি ভালবাসা নয়,ঠিক যেভাবে ইসলাম আদেশ করেছে,একেবারেই সেভাবে।

বিয়ের পরে,তাঁরা একে অন্যের সান্নিধ্যে দিন কাটাতে লাগলেন। না,ভালবাসার কোন কমতি তাঁদের মধ্যে ছিল না। তাঁরা একে অপরকে আগলে রাখলেন,ঠিক সেভাবে,যেভাবে দুই অর্ধ একসাথে যোগ হয়ে এক তৈরি করে।

তাঁরা নানাভাবে একে অন্যের সান্নিধ্য উপভোগ করতে লাগলেন। কখনো কখনো তাঁরা একে অন্যের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা পর্যন্ত করতেন! স্বামী ইচ্ছে করেই হেরে যেতেন,কারণ তাঁর স্ত্রীর উচ্ছল হাসিমুখ তাঁর কাছে বড়ই প্রিয়। আবার মাঝেমধ্যেই স্ত্রীর অভিমান বানানোর জন্য তাঁকে হারিয়ে দিতেন,কারণ স্ত্রীর অভিমান ভাঙ্গানোর আনন্দও যে অসাধারণ!

কয়েক বছর পর,স্বামী অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গেলেন,বোঝা গেল,তাঁর দিন শেষ হয়ে এসেছে। তারও কিছুদিন পর,স্বামী মারা গেলেন,স্ত্রীর হাঁটুর উপর মাথা রেখে। আর তাঁর কবর হল স্ত্রীর ঘরেই।

স্ত্রী এই ঘটনার পর,অনেক বছর বেঁচে ছিলেন। কিন্ত তাঁর স্বামীকে এতটাই তিনি ভালবাসতেন,দ্বিতীয়বার কোন পুরুষের দিকে চোখ তুলে পর্যন্ত তাকান নি। আর এভাবেই,জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি তাঁর স্বামীর হয়েই ছিলেন।

"লাভ স্টোরি" এখানেই শেষ। স্বামী আর স্ত্রীর পরিচয় দেওয়ার আগে একটা তথ্য দিতে চাই।

বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন,এই "লাভ স্টোরি"-র একটা কথাও কিন্ত আমরা স্বামীর মুখ থেকে জানতে পারি নি। প্রত্যেকটা বাক্য,প্রত্যেকটা ঘটনা,জেনেছি স্ত্রীর মুখ থেকে।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার কি জানেন? তাঁর মুখ থেকে তাঁর স্বামী সম্পর্কে একটা খারাপ মন্তব্য পাওয়া যায় নি!

আমি আমার বোনদের হেয় করে কোন কথা বলছি না,কিন্ত আমরা জানি যে তাঁরা একটু বেশিই বিষোদগার করে থাকেন (স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস আছে এ ব্যাপারে)। আর বর্তমান কালে এমন কোন স্ত্রী আমি দেখি নি,যিনি তাঁর স্বামীর অন্তত একটা ব্যাপার নিয়ে কিছুটা হলেও বিরক্ত নন।

By the way,এই "লাভ স্টোরি" কিন্ত এখানেই শেষ না। সহীহ হাদীস থেকে সরাসরি প্রমাণিত,তাঁদের এই "লাভ স্টোরি" শেষ হয় নি,বরং এটা আবার শুরু হবে ইনশাআল্লাহ,এবং চলতেই থাকবে,জান্নাতে

এবার বলে দেই এটা কাদের "লাভ স্টোরি"।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আয়িশা রাযিআল্লাহু আনহা।

Isn't it the BEST love story anyone can ever tell?

আসুন,নিজেদের সংযত করি। স্ত্রোতের সাথে না মিশে গিয়ে এক আল্লাহর উপর নিজেদের পূর্ণ বিশ্বাস সঁপে দেই। তাঁর কাছে এমন একজন প্রার্থনা করি,যাঁর সাথে ঠিক এরকম একটা "লাভ স্টোরি" আমরা রচনা করতে পারব। যে "লাভ স্টোরি"-র চিত্রনাট্যে কোন একজনের মৃত্যুতে "THE END" লেখা পর্দা উঠবে না,বরং উঠবে,"TO BE CONTINUED IN JANNAH"!