Friday, June 14, 2013

আত্মকথা

প্রথমেই বলে নিই,এই লেখাটা নিতান্তই ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ। তেমন কোন স্পেসিফিক মেসেজ দেবার চেষ্টা করি নি এখানে। তাই যাঁদের চোখে এই লেখাটা পড়বে, তাঁরা অনায়াসে স্কিপ করে যেতে পারেন। 

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম


"অপদার্থ" শব্দটার একটা বাস্তব উদাহরণ হিসেবে আমি নিজেকে বেশ যোগ্য বলে মনে করি। আমার খুব ক্লোজ মানুষ যাঁরা আছেন, তাঁরা বেশ তীব্রভাবেই আমার এই ধারণার সাথে একমত পোষণ করেন।
 
বিশ্বাস করুন,একটুও বাড়িয়ে বলছি না! আমি একটা লিস্ট দিচ্ছি,এটা পড়লেই বুঝতে পারবেন, আমার দাবি কতটুকু সত্যি!

১) আমি খুবই নাদুসনুদুস মাশাআল্লাহ (খেতে খুবই পছন্দ করি)। গোলগাল চেহারা, চোখে হাই পাওয়ারের চশমা। বর্তমান যুগের স্টাইলের সাথে কোনভাবেই নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারি না।

২) যে কোন খেলাধুলায় আমি ডাব্বা। ফুটবলে কিক দিলে যে দিকে মারি,বল তার উল্টো দিকে চলতে শুরু করে। ক্রিকেটে ব্যাট করতে নামলে গোল্ডেন ডাক তো অবধারিত! আর বল করলে তা ব্যাটসম্যানের মাথার এত উঁচু দিয়ে যায়,৮ ফুট লম্বা কোন ব্যাটসম্যানকে নামালেও সে ওটা মারতে পারবে কী না সন্দেহ!

৩) আমি মাইল্ড অ্যাজমা রোগী। পান থেকে একটুখানি চুন খসলেই অসুস্থ হয়ে পরি। আর যা তা অসুস্থ না,একদম গা কাঁপিয়ে জ্বর! ফলাফল : বন্ধুরা নানা জায়গায় ঘুরতে যায়,আম্মু আমাকে কোথাও যেতে দেন না,আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব,এই ভয়ে!

৪) এখন তো নাচগান না শেখা  বা মিউজিক্যাল কোন ইন্সট্রুমেন্ট না চালাতে জানা একটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে! সেখানে আমি নাচ বা গান,এদের ক খ গ ঘ-ও জানি না। আর কোন মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট জীবনে হাতে ধরেও দেখি নি!

 ৫) এই যুগের তরুণ তরুণী প্রেম করবে না,এটা তো এখন কল্পনারও বাইরে! সেখানে গার্লফ্রেন্ড নামক কেউ কখনো আমার জীবনে আসে নি।


৬) উপরের সবকিছু পড়ে নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে, আমি একজন প্রথম শ্রেণীর আঁতেল, সারাক্ষণ পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি,পরীক্ষায় ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড হওয়া আমার কাছে পানিভাত! অতি দু:খের সাথে জানাচ্ছি,পড়াশুনার ব্যাপারে আমি বিশাল ফাঁকিবাজ, আর টেনেটুনে পরীক্ষাগুলোয় পাস করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য!

আমি যদি অপদার্থ না হই,অপদার্থ আর কে,বলুন?


মাঝেমাঝে খুবই হতাশ হয়ে যেতাম। চিন্তা করতাম, মানুষ তো কোন না কোন বিষয়ে পারদর্শী হয়। কেউ পড়াশুনায় বস,কেউ গান করে,কেউ নাচে,কেউ খুব সুন্দর গিটার বাজাতে পারে,কেউ খুব ভাল ক্রিকেট ফুটবল খেলে,কেউ প্রেম করে। আমি কী পারি? কিছুই পারি না,কিছুই না! আমার জীবনের মানে কী তা হলে?

আলহামদুলিল্লাহ, জীবনের একটা বাঁকে এসে,আল্লাহর অশেষ দয়া আর রহমতে, ইসলাম সম্পর্কে জানতে শুরু করলাম। একে একে অজানা সব তথ্য আমার সামনে উন্মোচিত হতে শুরু করল।

জানলাম, নাচগান ক্রিকেট ফুটবল প্রেম ভালবাসা পরীক্ষায় ফার্স্ট সেকেন্ড,এই সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষ্যের জন্য আমার জন্ম হয় নি। আমাকে সৃষ্টি করা হয় নি এ জীবন নিয়ে পরে থাকার জন্য,এ জীবনে কী পেলাম আর কী না পেলাম, কী করলাম আর কী না করলাম, তার হিসাব নিকাশ কষার জন্য। আমাকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য আরো অনেক বড় কিছু। এত বিশাল সে লক্ষ্য,ইহলৌকিক কোন স্ট্যান্ডার্ড ধরে তার হিসাব করা সম্ভব না।


আমি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এ উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করেছি যে,তারা শুধুমাত্র আমারই ইবাদত করবে। আমি তাদের কাছ থেকে জীবিকা চাই না আর এও চাই না যে,তারা আমার আহার্য যোগাবে। (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ৫৬-৫৭)

 ড. বিলাল ফিলিপসের ভাষায় বলি,

আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তাঁর কোন কিছুরই দরকার নেই,কোন কিছুই দরকার নেই। আমাদের ইবাদতের বিন্দুমাত্র প্রয়োজন তাঁর নেই। শুধুমাত্র একটা কারণেই তিনি আমাদের তাঁর ইবাদত করতে বলেছেন, কারণ একমাত্র তাঁর ইবাদতই "মানুষ" হিসেবে আমাদের পূর্ণতা দান করতে পারে। সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী হওয়া একমাত্র তাঁর ইবাদতের মাধ্যমেই  সম্ভব।


সুবহানআল্লাহ!


ইহলৌকিক আর কোন লক্ষ্য, আর কোন উদ্দেশ্য, এই উদ্দেশ্যকে অতিক্রম করতে পারে?

আলহামদুলিল্লাহ, এখন আর হতাশা আসে না। কোন ক্ষোভ,দু:খও না।

 যেখানে আল্লাহকে সন্তষ্ট করাই এই ক্ষুদ্র জীবনটার একমাত্র লক্ষ্য,হতাশা, ক্ষোভ, দু:খ,এগুলোকে মনে স্থান দেওয়ার সময়টাই বা পাই কোথায় বলুন?

যদি আল্লাহকে সন্তষ্ট করাই আপনার দৈনন্দিন কাজের প্রথম উদ্দেশ্য হয়,তাহলে আর কোন কিছু নিয়েই আপনার চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। - জোহরা সরওয়ারী, ইনস্ট্রাক্টর, ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটি।

























































No comments:

Post a Comment