প্রথমেই বলে নিই,এই লেখাটা অনুবাদ করাটা হয়তো আমার জন্য একটু ইঁচড়ে পাকামিই হয়ে যাচ্ছে,কারণ স্ট্যাটিস্টিকস বলে,আমার নিজের বিয়ের এখনো অনেক দেরি! কিন্ত আমার অনেক ভাই এবং বন্ধু ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছে বলে আশা করি,সেই জন্যই অনুবাদ করে ফেললাম। পাশাপাশি, self reminder বলে একটা জিনিস তো আছেই!
বাংলাদেশি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি,তার উপর ছেলে। স্বাভাবিকভাবেই,একটু superior মনোভাব নিয়েই আমার বেড়ে ওঠা। পাশাপাশি,বরাবরই ক্লাসে top ranked student ছিলাম,যার ফলে আমার সহপাঠীরা আমার সাথে অনেকটা "celebrity" type আচরণ করত,যদিও আমি সবসময় নিজেকে সাধারণ বলেই মনে করতাম।
আমার কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ অংশ কেটেছে সেক্যুলার মনোভাব নিয়ে। কিন্ত তারপরও,কখনো কোন রিলেশনশিপে জড়াই নি। এর পিছনের একটা কারণ হতে পারে যে,আমি খুবই বুদ্ধিমান ছিলাম!
যাই হোক,আসল কারণটা হচ্ছে,একটা বিব্রতকর অনুভূতি। আমি বুঝেই উঠতে পারতাম না,কীভাবে একজন মানুষ,আরেকজন মানুষকে দিনের ২৪ ঘণ্টা ধরে সহ্য করতে পারে,যেখানে একজন চিন্তাধারা,চালচলন,আচার-আচরণ,আরেকজনের পুরো বিপরীত?
যার ফলে,আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম,আমি বিয়ে করব না।
যাই হোক,সময় তার মত করে চলে,সাথে আমাদের চিন্তাচেতনাও পরিবর্তিত হয়। এর ফলেই,আমার সেক্যুলার ধ্যানধারণা,ইসলাম দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে যায়।
তারপরও,বিয়ে নিয়ে আমার চিন্তাধারার কোন পরিবর্তন ছিল না।
কিন্ত একদিন হঠাৎ করেই,বিয়ে করার জন্য জোর দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদীস আমার চোখে পড়ে।
যার জন্য,অনেকটা নিরুপায় হয়েই,মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে,আমার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা বিয়ের উপর প্রচুর বই পড়েছিলাম আমি (যে সকল ভাইয়েরা বিয়ে করতে যাচ্ছেন বা করে ফেলেছেন,তাদের জন্য একটা ভাল বই হতে পারে ড. গাজী আল-শামরির লেখা "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,সর্বশ্রেষ্ঠ স্বামী")। কিন্ত তারপরও,আমার পারিবারিক জীবন আর অ্যাকাডেমিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছিলাম না। যার ফলে,ঠিক বিয়ের পরপর,আমি আমার পিএইচডি কোর্সের একটা গ্রেডে ফেল করে বসি!
কিন্ত,এর সাথে সাথে,আমি দুটো গুরুত্বপূর্ণ দিক আবিষ্কার করি।
১) বাস্তব জীবনে এমন অনেক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতে পারে,যেগুলো যুক্তিবিদ্যার কোন বইয়ে হাজার ঘাঁটলেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
২) যুক্তিপ্রমাণ ছাড়াও কাউকে কোন কিছু করতে প্ররোচিত করা যায়,আর সেটা করার একমাত্র উপায় হল,ভালবাসা।
যাই হোক,আমরা ঝগড়া করতাম,মাঝে মাঝে তা বেশ তীব্রই হত। কিন্ত প্রতি ঝগড়ার পর আমরা মিটমাট করে তবেই ঘুমাতে যেতাম।
নিজেকে একজন ভাল স্বামী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য,আমি একটা বই পড়তে শুরু করলাম। বইটা লেখা ছিল বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যে মতানৈক্য হয়,তা নিয়ে।
বইটা পড়তে গিয়ে,হঠাৎ একটা লাইনে থেমে যাই।
লাইনটা ছিল এরকম,
লাইনটা পড়ে,আমি কিছুক্ষণের জন্য থমকে যাই। বিয়ের পর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে করতে থাকি।
আমি আমার আশা,আমার স্বপ্ন,আমার বেদনাগুলো ঠিকই মনে করতে পারি।
কিন্ত আমি কি তারগুলো মনে করতে পেরেছি? আমি কি তার স্বপ্নগুলো নিয়ে চলতে পেরেছি? বা তার দুঃখের সময়,তার কষ্টগুলো কি ভাগাভাগি করে নিতে পেরেছি?
আমি একটু পিছন ফিরে দেখতে চাইলাম,বিয়ের পর,তার জন্য,আমি নিজে কতটুকু ছাড় দিয়েছি,আর সে কতটুকু ছাড় দিয়েছে।
সে কি আমার জন্য,তার স্বপ্নগুলো উৎসর্গ করে নি?
আমার সন্তানকে আলোর মুখ দেখানোর জন্য,সে কি চরম কষ্ট সহ্য করে নি?
আমার আর্থিক দুরবস্থার সময়,সেও কি ভুক্তভোগী হয় নি?
হয়তোবা,মানব সভ্যতার শুরু থেকেই,মেয়েরা তাদের আশা,তাদের স্বপ্ন,বেশি উৎসর্গ করেছে,আর বেশি কষ্টও সহ্য করেছে,শুধুমাত্র তাদের অর্ধাঙ্গীদের জন্য।
এইজন্যই হয়তোবা,উমার রাযিআল্লাহু আনহুর মত একজন,তাঁর স্ত্রীর মেজাজ খারাপের সময়,চুপ করে থাকতেন।
যদি উমার রাযিআল্লাহু আনহুর মত একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের আচরণ এই হয়,তাহলে আমি কে?
এখন,মাঝেমাঝে,তার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে চিন্তা করি,আমি কি এগুলো করতে পারতাম? এই যে এতটা শৃঙ্খলাবদ্ধ একটা জীবন,আমি কি এটা সহ্য করতে পারতাম? যখন আমার মেয়ের বিয়ে হবে,আর তার স্বামী যদি তার সাথে ঠিক এই আচরণগুলো করবে,যেগুলো আমি আমার স্ত্রীর সাথে করছি,এটা কি আমি সহ্য করতে পারব?
তবে সত্যি কথাটা হচ্ছে,তার মত করে ১০০% চিন্তা করতে পারি না। আর পারবই বা কীভাবে?
কিন্ত,এখন এটুকু চেষ্টা করি,যেন তার আশা,তার স্বপ্ন,আর তার বেদনাটুকু যেন ভাগাভাগি করে নিতে পারি।
মূল লেখাঃ
http://abuumaimah.wordpress.com/2013/06/16/lovefor-my-wife/
বাংলাদেশি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি,তার উপর ছেলে। স্বাভাবিকভাবেই,একটু superior মনোভাব নিয়েই আমার বেড়ে ওঠা। পাশাপাশি,বরাবরই ক্লাসে top ranked student ছিলাম,যার ফলে আমার সহপাঠীরা আমার সাথে অনেকটা "celebrity" type আচরণ করত,যদিও আমি সবসময় নিজেকে সাধারণ বলেই মনে করতাম।
আমার কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ অংশ কেটেছে সেক্যুলার মনোভাব নিয়ে। কিন্ত তারপরও,কখনো কোন রিলেশনশিপে জড়াই নি। এর পিছনের একটা কারণ হতে পারে যে,আমি খুবই বুদ্ধিমান ছিলাম!
যাই হোক,আসল কারণটা হচ্ছে,একটা বিব্রতকর অনুভূতি। আমি বুঝেই উঠতে পারতাম না,কীভাবে একজন মানুষ,আরেকজন মানুষকে দিনের ২৪ ঘণ্টা ধরে সহ্য করতে পারে,যেখানে একজন চিন্তাধারা,চালচলন,আচার-আচরণ,আরেকজনের পুরো বিপরীত?
যার ফলে,আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম,আমি বিয়ে করব না।
যাই হোক,সময় তার মত করে চলে,সাথে আমাদের চিন্তাচেতনাও পরিবর্তিত হয়। এর ফলেই,আমার সেক্যুলার ধ্যানধারণা,ইসলাম দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে যায়।
তারপরও,বিয়ে নিয়ে আমার চিন্তাধারার কোন পরিবর্তন ছিল না।
কিন্ত একদিন হঠাৎ করেই,বিয়ে করার জন্য জোর দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদীস আমার চোখে পড়ে।
যার জন্য,অনেকটা নিরুপায় হয়েই,মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে,আমার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা বিয়ের উপর প্রচুর বই পড়েছিলাম আমি (যে সকল ভাইয়েরা বিয়ে করতে যাচ্ছেন বা করে ফেলেছেন,তাদের জন্য একটা ভাল বই হতে পারে ড. গাজী আল-শামরির লেখা "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,সর্বশ্রেষ্ঠ স্বামী")। কিন্ত তারপরও,আমার পারিবারিক জীবন আর অ্যাকাডেমিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছিলাম না। যার ফলে,ঠিক বিয়ের পরপর,আমি আমার পিএইচডি কোর্সের একটা গ্রেডে ফেল করে বসি!
কিন্ত,এর সাথে সাথে,আমি দুটো গুরুত্বপূর্ণ দিক আবিষ্কার করি।
১) বাস্তব জীবনে এমন অনেক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতে পারে,যেগুলো যুক্তিবিদ্যার কোন বইয়ে হাজার ঘাঁটলেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
২) যুক্তিপ্রমাণ ছাড়াও কাউকে কোন কিছু করতে প্ররোচিত করা যায়,আর সেটা করার একমাত্র উপায় হল,ভালবাসা।
যাই হোক,আমরা ঝগড়া করতাম,মাঝে মাঝে তা বেশ তীব্রই হত। কিন্ত প্রতি ঝগড়ার পর আমরা মিটমাট করে তবেই ঘুমাতে যেতাম।
নিজেকে একজন ভাল স্বামী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য,আমি একটা বই পড়তে শুরু করলাম। বইটা লেখা ছিল বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যে মতানৈক্য হয়,তা নিয়ে।
বইটা পড়তে গিয়ে,হঠাৎ একটা লাইনে থেমে যাই।
লাইনটা ছিল এরকম,
.....তারা একে অন্যের আশা,স্বপ্ন,আর বেদনা,এগুলো ভাগাভাগি করে নেয়।
লাইনটা পড়ে,আমি কিছুক্ষণের জন্য থমকে যাই। বিয়ের পর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে করতে থাকি।
আমি আমার আশা,আমার স্বপ্ন,আমার বেদনাগুলো ঠিকই মনে করতে পারি।
কিন্ত আমি কি তারগুলো মনে করতে পেরেছি? আমি কি তার স্বপ্নগুলো নিয়ে চলতে পেরেছি? বা তার দুঃখের সময়,তার কষ্টগুলো কি ভাগাভাগি করে নিতে পেরেছি?
আমি একটু পিছন ফিরে দেখতে চাইলাম,বিয়ের পর,তার জন্য,আমি নিজে কতটুকু ছাড় দিয়েছি,আর সে কতটুকু ছাড় দিয়েছে।
সে কি আমার জন্য,তার স্বপ্নগুলো উৎসর্গ করে নি?
আমার সন্তানকে আলোর মুখ দেখানোর জন্য,সে কি চরম কষ্ট সহ্য করে নি?
আমার আর্থিক দুরবস্থার সময়,সেও কি ভুক্তভোগী হয় নি?
হয়তোবা,মানব সভ্যতার শুরু থেকেই,মেয়েরা তাদের আশা,তাদের স্বপ্ন,বেশি উৎসর্গ করেছে,আর বেশি কষ্টও সহ্য করেছে,শুধুমাত্র তাদের অর্ধাঙ্গীদের জন্য।
এইজন্যই হয়তোবা,উমার রাযিআল্লাহু আনহুর মত একজন,তাঁর স্ত্রীর মেজাজ খারাপের সময়,চুপ করে থাকতেন।
যদি উমার রাযিআল্লাহু আনহুর মত একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের আচরণ এই হয়,তাহলে আমি কে?
এখন,মাঝেমাঝে,তার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে চিন্তা করি,আমি কি এগুলো করতে পারতাম? এই যে এতটা শৃঙ্খলাবদ্ধ একটা জীবন,আমি কি এটা সহ্য করতে পারতাম? যখন আমার মেয়ের বিয়ে হবে,আর তার স্বামী যদি তার সাথে ঠিক এই আচরণগুলো করবে,যেগুলো আমি আমার স্ত্রীর সাথে করছি,এটা কি আমি সহ্য করতে পারব?
তবে সত্যি কথাটা হচ্ছে,তার মত করে ১০০% চিন্তা করতে পারি না। আর পারবই বা কীভাবে?
কিন্ত,এখন এটুকু চেষ্টা করি,যেন তার আশা,তার স্বপ্ন,আর তার বেদনাটুকু যেন ভাগাভাগি করে নিতে পারি।
মূল লেখাঃ
http://abuumaimah.wordpress.com/2013/06/16/lovefor-my-wife/