Friday, September 13, 2013

নির্ভয়ার ধর্ষকদের ফাঁসির আদেশ,অতঃপর...............

"সিরিয়া যদি রাসায়নিক অস্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হাতে সত্যি সত্যিই তুলে দেয়,তাহলে সিরিয়ায় আর হামলা চালানোর কোন প্রয়োজন হবে না।"

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে সাক্ষাৎকারে এ মত ব্যক্ত করেছিলেন,ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের পর্দায় সেই সাক্ষাৎকার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।

তো সেই সাক্ষাৎকারটি নিচ্ছিলেন একজন নারী সাংবাদিক।

সাক্ষাৎকারের সময়,as always,প্রেসিডেন্ট ছিলেন স্যুট-টাই পরিহিত। সাংবাদিক সাহেবাও পরেছিলেন স্যুট।

কিন্ত যেটা ছিল সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়,সেটা হল,

প্রেসিডেন্ট যদিও ফুলপ্যান্ট পরিহিত ছিলেন,কিন্ত সাংবাদিকের পরনে ছিল হাফপ্যান্ট!

পাশ্চাত্য সভ্যতাকে "রোল মডেল" হিসেবে যাঁরা আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন,তাঁরাও নিশ্চয় খেয়াল করেছেন,সেখানকার যে কোন উৎসবে,পুরুষেরা যতটা পারেন নিজেদের আবৃত করেন,আর নারীরা যতটা পারেন,শরীরের নানা অংশ দেখাতে সচেষ্ট থাকেন।

আচ্ছা,কেন তখন "সমঅধিকারের" কথা আসে না? কেন এই প্রশ্ন উত্থাপিত হয় না,যেখানে পুরুষেরা পা থেকে গলা পর্যন্ত আবৃত,সেখানে কেন নারীদের যতটা সম্ভব,উন্মুক্ত হয়ে চলাফেরা করতে হবে?

ও না না,তখন এটা আবার "সংস্কৃতির" অংশ হয়ে যায়। এক এক দেশে তো আবার এক এক সংস্কৃতি!

হুমায়ূন আহমেদের "বৃষ্টিবিলাস" বইয়ে পড়েছিলাম,নায়িকা (নাম মনে নাই)-র মা নায়িকাকে বলছেন,"মেয়েদের সেজেগুজে বিয়েবাড়িতে যাওয়া খুব ভাল। এতে অনেকের চোখে পড়ে,ভাল সম্বন্ধ আসে। আমি যতবার বিয়েবাড়িতে গিয়েছি,ততবার আমার জন্য সম্বন্ধ এসেছে।"

আবার হুমায়ূন আহমেদের এই "ডাইহার্ড" মহিলা ফ্যানরাই বলেন,"আমি তাকেই বিয়ে করব,যে 'আমার রূপ'-কে নয়,'আমাকে (অর্থ্যাৎ তাঁর মেধা)' মূল্যায়ন করবে!"

কিন্ত সত্যি সেটাই,যেটা হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বৃষ্টিবিলাস বইয়ে নায়িকার নাম দিয়ে বলেছেন,অথচ তাঁদের মাথায় এটা ঢোকে না।

আমি বুঝি না,মেয়েরা এত কিছু বোঝেন,এই বাংলা কথাটা কেন বোঝেন না (বা বুঝলেও মানেন না) যে,ছোটবেলা থেকে চারপাশ থেকে তাঁদের মাথায় এইটা ঢোকানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা চালানো হচ্ছে যে,"তোমার আসল সম্পদ তোমার রুপ,তোমার সৌন্দর্য। এটা যত expose করবে,তত তোমার দাম বাড়বে। তোমার কাজ,তোমার মেধা,তোমার চরিত্রের কানাকড়ি দামও নাই। তাই নিজের সৌন্দর্য,নিজের শরীরকে কাজে লাগাও।"

অন্যদিকে আল্লাহ হিজাবের সিস্টেমটা দিয়ে এই কথাটাই বোঝাতে চাইলেন,"তোমরা যদি নিজেদের এই শারীরিক সৌন্দর্যটাকে লুকিয়ে রাখ,তাহলেই শুধুমাত্র তোমাদের মেধা,তোমাদের গুণ,তোমাদের চরিত্র,অর্থ্যাৎ,'তোমাকে' সবাই মূল্যায়ন করবে। নইলে,তোমার চারপাশ তোমার শরীরটাকেই চাইবে,'তোমাকে' না।"

কিন্ত কীসের কী?

আজ নির্ভয়ার ধর্ষকদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে (একজন অবশ্য 'নাবালক' হবার কারণে সবচেয়ে active থেকেও লঘু শাস্তি পেয়ে পার পেয়ে গেছেন,যাই হোক)। তো প্রথম আলো ডটকমে এই খবরটার সাথে আরেকটা খবর অ্যাড করা আছে।

দিল্লির নারীদের এই রায়ের পর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,তাঁরা কি এখন নিরাপদ বোধ করছেন?

তাঁরা সত্যি উত্তরই দিয়েছেন,না,তাঁরা নিরাপদ বোধ করছেন না।

তবে,একটা উত্তর পড়ে পুরো টাসকি খেয়ে গেলাম!

"যে দেশে নারীর ছোট পোশাক পরাকে সব সমস্যার মূল হিসেবে মনে করা হয়, সে দেশে নারী নিরাপদ বোধ করবে কীভাবে?"

অর্থ্যাৎ,

"কুমীর ভরা নদীতে কীভাবে সাঁতার কাটা হবে,সেটা যদি কুমীরে টেনে নিয়ে যাওয়ার মূল কারণ হয়,তাহলে সাঁতারু নিরাপদ বোধ করবেন কীভাবে?"

No comments:

Post a Comment