Tuesday, February 11, 2014

ফাতিহা ইয়াযদহম

শরীফ আবু হায়াত অপু ভাই তাঁর একটা আর্টিকেলে লিখেছিলেন যে, কেউ যদি ইসলাম নিয়ে সামান্যতম পড়াশুনা করে, তাহলেই সে বিশাল একটা দ্বন্দ্বে পড়ে যাবে। তার তখন ঠিক করতে হবে, কোন ইসলাম সে পালন করবে, বাপদাদার পালন করা ইসলাম, না আল্লাহর দেওয়া ইসলাম!

হিন্দুদের অনুকরণে "বার মাসে তের পার্বণ" সমৃদ্ধ ইসলামের বাংলাদেশি ভার্সনের অন্যতম একটা পার্বণ আগামীকাল, নাম, ফাতিহা ইয়াযদহম।

তো এই পার্বণের উপলক্ষ হচ্ছেন শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী রাহিমাহুল্লাহ। যদিও এই বিদআতের সাথে তাঁর বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক নেই।

শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী রাহিমাহুল্লাহর অফাত উপলক্ষ্যে এই দিন পালিত হয়। ফারসী ভাষায় ' ইয়াযদহম ' মানে ১১ তম। যেহেতু রবিউস সানী মাসের ১১ তারিখে তাঁর অফাত হয় সে জন্য এই দিনটিকে 'ফাতিহা ইয়াযদহম' নামে স্মরণ ও পালন করা হয়। ১১ তারিখের রাতে তাঁর নামে কুরআন-খতম ও মিলাদ-মাহফিল করে লোকেরা 'ফয়য' হাসিল করে থাকে।

আমরা জানি যে, ইসলামে ব্যক্তিপূজার কোন স্থান নেই। খোদ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন করা বিদআত। সুতরাং তাঁর পরে আর কার জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন করা বিধেয় হতে পারে? তাছাড়া তাঁর নামে যা করা হয় তাও তো বিদআত। বলা বাহুল্য, ঐ দিনে ছুটি মানানো বা কাজ-কর্ম বন্ধ করে হালুয়া-রুটি খেয়ে আনন্দ করা কোনমতেই শরীয়ত সম্মত কাজ নয়।

আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ ডান করুক। এসব বিদআতি কাজ হতে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুক। আমীন।

[পোস্ট কৃতজ্ঞতাঃ মাকসুদ বিন আমল ভাই]

Saturday, January 11, 2014

কাছে আসার গল্প

                                              বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

১.

টোনা খুবই নার্ভাস। আজ তার বিয়ে। দশ মাইল দূরের এক গ্রামে বিয়ে করতে যাচ্ছে সে।

কলেজের হোস্টেলে ছিল সে,তখনই এল টেলিগ্রামটা। বাবার নির্দেশ, টেলিগ্রাম পাওয়া মাত্র যেন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সে। সেই মোতাবেক বাড়িতেও সে ভালভাবেই পৌঁছে যায়। কিন্ত বাড়িতে পৌঁছেই সে একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পরে যায়। সবাই তাকে দেখেই কেমন যেন ফিসফিস করছে! অবশেষে বাবার সাথে দেখা করতে এসে সে জানতে পারে, বাবা তার বিয়ে ঠিক করেছেন। মেয়ে দশ মাইল দূরের গ্রামের ডাক্তার সাহেবের মেয়ে, ক্লাস এইট পাস।

বাবার আদেশের উপর কথা বলা বা তা অমান্য করা, কোনটারই সাহস নেই টোনার। তাই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, ঢেঁকি তাকে গিলতেই হচ্ছে!

কিন্ত টোনা অনুভব করে, নার্ভাসনেসের সাথে সাথে আরো কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে তার। রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী গল্প পড়েছে সে আগেই। অপু যখন হৈমন্তীকে বিয়ে করতে যায়, সেই সময়ে অপুর অনুভূতি,আর তার অনুভূতি, কীভাবে কীভাবে যেন মিলে যাচ্ছে।

অবশেষে সারাদিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে টুনিকে নিয়ে বাড়ি ফেরে টোনা। অবাক হয়ে লক্ষ্য করে, যাকে আজকের আগে জীবনে একটাবারও দেখে নি, তার জন্য এত মায়া, এত ভালবাসা কীভাবে জন্মাতে পারে! বারবার কেন মনে হচ্ছে, “পাইলাম, আমি উহাকে পাইলাম!”

শুরু হল আমাদের টোনাটুনির সংসার। টুনি গ্রামে, আর টোনা পড়াশুনার কারণে কলেজের হোস্টেলে। কিন্ত দুজনের মন যেন সারাক্ষণ পরে থাকে দুজনের কাছে।

অবশেষে সরকারি চাকরি হল টোনার, সরকারি বাসা পেল সে। কালবিলম্ব না করে টুনিকে সে নিয়ে এল। নতুন এক যাত্রা শুরু হল দুজনের।

সময় তার মত করে চলে যেতে থাকে। টোনাটুনির ঘর আলো করে আসে এক মেয়ে আর এক ছেলে। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে তারা চারজন একে অপরের হাত ধরে চলতে থাকে।

ছেলেমেয়ে বড় হল, প্রতিষ্ঠিত হল। আর টোনাটুনি হল বুড়োবুড়ি। আর তাদের সাথী হল তাদের তিন নাতী-নাতনি।

বয়সের কারণেই টোনা এক সময় খুবই অসুস্থ হয়ে পরল। চারপাশ সম্বন্ধে পুরোপুরি হুঁশ হারিয়ে যেন এক বাচ্চা ছেলে হয়ে গেল সে। নিজে নিজে খাওয়ার ক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলল। আর বিছানায় শৌচকর্ম সারাতো রুটিনে পরিণত হল!

টুনি নিজেও এখন বুড়ি, এত জ্বালা আর কাঁহাতকই সহ্য করা যায়? কিন্ত তারপরও, সব বিরক্তি একপাশে ফেলে নিবিড়ভাবে টোনার সেবায় মনোনিবেশ করল সে।

অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় টোনার ঠাঁই হল হাসপাতালে। আর তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হল টুনি। ডাক্তার দেখে বলে গেলেন, “আর খুব বেশিদিন তিনি আর আপনাদের বিরক্ত করবেন না।“

এক-দেড় সপ্তাহ পরেই টোনার ডাক এসে গেল। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে সে চলে গেল এই দুনিয়া ছেড়ে।

টুনি ভেঙ্গে পড়ল। কিন্ত তার তিন নাতী-নাতনির দিকে তাকাতেই তার মনে হল, না, তার ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। টোনার বংশধর তো এরাই। টুনি এদের না দেখলে, আর কে দেখবে?

এখন টুনির দিন কাটে নাতী-নাতনিদের পরিচর্যায়, তাদের দেখভালে। আর সেই দিনের প্রতীক্ষায়, যে দিন সে ইনশাআল্লাহ আবার টোনার সাথে মিলিত হবে। দুজনে অনন্তজীবনের জন্য সংসার শুরু করবে,তাদের জন্য নির্ধারিত জান্নাতের বাগানে।

২.

পাঠক, কেমন লাগল এই কাছে আসার গল্প?

এই গল্পের রচয়িতা কিন্ত আমি নই! হ্যাঁ, গল্প লেখার জন্য কিছু কিছু কল্পনার আশ্রয় নিয়েছি বটে, কিন্ত উপরের ঘটনাগুলো কিন্ত সত্যি। টোনাটুনিও সত্যি।

এই টোনা হচ্ছেন আমার নানা।

নিশ্চয় বুঝে গেছেন, টুনি হচ্ছেন আমার নানী।

আমার বাবা-মা দুজনই চাকুরীজীবি। তাই ছোটবেলা থেকে নানা-নানীর কাছে বেড়ে ওঠা। তাদের বিয়ের গল্প তাদের মুখেই শোনা। আর নানার শেষ দিনগুলোর বাস্তব সাক্ষী আমি নিজে। নিজে দেখেছি, নানী নানার জন্য কতটা কষ্ট করছেন। কীভাবে আমার “বুড়ো বাচ্চা” নানার সেবা করে যাচ্ছেন।

লক্ষ্য করে দেখুন, তাঁদের এই কাছে আসায় কিন্ত বিয়ের আগের পরিচয়পর্ব ছিল না, রাতবিরেতে ফোনালাপ বা চিঠি আদানপ্রদান ছিল না, লুকিয়ে লুকিয়ে পার্কে ডেটিংও ছিল না।

তারপরও কী চমৎকারভাবেই না জীবনের একটা বিরাট অংশ তাঁরা একে অপরের সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিলেন।

এটা যদি “ভালবাসা” না হয়,“কাছে আসা” না হয়, আমি জানি না ভালবাসা কাকে বলে, কাছে আসা কাকে বলে।

৩.

আসুন বর্তমান কালের “কাছে আসা”-গুলো একটু দেখে আসি।

একদিন এক বন্ধু এসে বললেন, “দোস্ত, নতুন একটা রিলেশনশিপে জড়াইলাম।“

আমি আর কী বলব? বললাম,“আচ্ছা আচ্ছা। তো এনাকে কি বিয়ে করার ইচ্ছা আছে না কি?”

বন্ধুটি বললেন, “এখন কীভাবে বলব? আরো একটু সামনে বাড়ুক, তারপর দেখি।“

দীর্ঘশ্বাস গোপন করলাম।

এক-দেড় মাস পরে জিজ্ঞাসা করলে বন্ধুটি জানান, সেই রিলেশনশিপ ভেঙ্গে গেছে!

৪.

আমি খুব ভালভাবেই জানি,একদল প্রেমিক-প্রেমিকা লেখার এই অংশে এসে বলবেন, “জানি একদল ছেলেমেয়ে এই রকম করে। তো সেটা সবাই করে না কি? প্রেম করে মানুষ কি বিয়ে করে না?”

অবশ্যই করে, কেন করে না?

কিন্ত আমি আমার এই জীবনে,এখন পর্যন্ত, কোন প্রেমের বিয়েকে এতটা সাকসেসফুল হতে দেখি নি, বা শুনি নি, যে রকম সাকসেস আমি তথাকথিত “ব্যাকডেডেট” অ্যারেঞ্জ ম্যারেজগুলোর ক্ষেত্রে দেখেছি।

আমার কথা না হয় উড়িয়ে দিলেন। ভাল কথা। কিন্ত গবেষণাও যে আমার কথাগুলো সাপোর্ট করে!

একজন ফ্রেঞ্চ সমাজবিজ্ঞানী কর্তৃক মাঠপর্যায়ে চালানো এক গবেষণায় উঠে এসেছে,

যখন দুই পক্ষ বিবাহ পূর্ব প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত হয় না তখন সে বিয়ের সফলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।  

প্রফেসর ইসমাঈল আবদ’ আল বারি’ কর্তৃক প্রায় ১৫০০ পরিবারের ওপর চালানো অন্য এক জরিপের ফলাফল ছিল এমন যে শতকরা ৭৫ ভাগ “ভালবেসে বিয়ের” পরিণতি ছিল ডিভোর্স যেখানে “প্রথাগত বিয়ের” ক্ষেত্রে শতকরা ৫ ভাগেরও কম।


ঢাকা সিটি করপোরেশনে জমা পড়া বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনগুলোও ঘেঁটে দেখা গেছে, তালাকের শীর্ষে প্রেমের বিয়ে!!!

৫.

“কাছে এস, কাছে এস, কাছে এস না।“

ক্লোজ আপের বিজ্ঞাপন সঙ্গীত।

বিজ্ঞাপনে দেখানো হচ্ছে, এক তরুণ সকালে উঠে ক্লোজ আপ দিয়ে দাঁত মেজেছেন। যার ফলে তাঁর দাঁত হয়েছে ধবধবে সাদা, নিঃশ্বাস হয়েছে সতেজ, তরতাজা।

ফলাফল, তরুণ সুপারমার্কেটে প্রবেশের রিভলভিং দরজায় একজন তরূণীর নাকের সামনে তার সতেজ নিঃশ্বাস ছেড়ে দেন, এবং এই নিঃশ্বাসের জেরেই তরূণী তরুণের প্রেমে পরে যান!

প্রেম আর নারী, দুটোই কী সস্তা, আহা!

আর এই ক্লোজ আপই যখন “কাছে আসার গল্প” প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, হাসি ঠেকিয়ে রাখা ব্যাপক কষ্টকর হয়ে যায়!
৬.

মীর সাজ্জাদ ভাইয়ের একদিনের স্ট্যাটাস,

বিয়ের আগে......
প্রেমিক : আমি তোমাকে ভালবাসি ।
প্রেমিকা : আমিও তোমাকে ভালবাসি ।
শয়তান : আমি তোদের দুই জনকেই ভালবাসি।

রেফারেন্স : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
"যেখানে দুজন বেগানা নারী-পুরুষ নির্জনে একত্র হয় সেখানে তৃতীয়জন হয় শয়তান।"
-[জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৭১]

বিয়ের পরে...... ...
স্বামী : আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি।
স্ত্রী : আমিও তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি।
> যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর নিষেধ-নির্দেশ মেনে জীবন পরিচালিত করে তাদেরকেও আল্লাহ ভালবাসেন ।

রেফারেন্স :
১ . হাদিসে কুদসীতে আছে মহান আল্লাহ বলেন: "আমার জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী, পরস্পর উঠা-বসা-কারী, পরস্পর সাক্ষাৎকারী, পরস্পর ব্যয়কারীদের জন্য আমার ভালোবাসা অবধারিত।"
[আহমদ:২১৭১৭]
২ . "আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ - যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না- আমি তাদের ছায়া দেব।"
[সহীহ মুসলিম : ৪৬৫৫]

শিক্ষা : বিয়েপূর্ব প্রেম শয়তানের জন্য এবং বিয়ে পরবর্তী প্রেম আল্লাহর জন্য তৈরি হয় ।

রেফারেন্স :
ইবন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
"দুজনের পারস্পারিক ভালোবাসার জন্য বিবাহের মত ভাল কিছু নেই।"
[ইবন মাজাহ , ১৮৪৭]

কোন পথটা সত্যিকারের কাছে আসার পথ, আশা করি এর পরে আর বুঝতে বাকী থাকার কথা না।

৭.

টিভিতে একটা বিজ্ঞাপনে শুনেছিলাম,

“আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনে সবকিছুই হয়, কিন্ত একটু দেরিতে।“

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে এই কথাটা আমার ক্ষেত্রেও একদম খেটে যায়!

প্রতিবার যা কিছু বাবা-মার কাছে চেয়েছি, তাঁরা সবই দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ, কিন্ত একটু সময় নিয়ে।

আর এতে দেখেছি, একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার পর যে জিনিসটা আমি পাই, আশেপাশের অনেকেও সেই জিনিস কিনলেও, কেন জানি আমার জিনিসটাই তাঁদের থেকে ভাল হয়!

আর অন্য দিকে, যতবার তাঁদের অবাধ্য হয়েছি, জিদ করেছি “না,এক্ষুণি কিনে দিতে হবে”, সেই জিনিসটা এমন খারাপ হয়, যে কিছুদিন পরই নিজের মন ওটা থেকে উঠে যায়।

আমাদের একটু চিন্তা করা উচিত, আমাদের জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে যদি আমরা আল্লাহর অবাধ্য হই, তাঁকে পাশ কাটিয়ে নিজে নিজে সবকিছু ঠিক করে ফেলি, তাহলে কি হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকিটাই বেড়ে যায় না?

পাদটিকা

১. যে প্রেমের পরিণতি বিয়ে- সেটা কি হারাম?

কিছু স্মৃতি, কিছু অনুভূতি

                                                  বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

ডিসেম্বর মাসটা নানা কারণেই আমার কাছে প্রিয়, বলা যায় বছরের ১২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়। বেশ কয়েকটা কারণ আছে এর পিছনে, যেমন,

১) ডিসেম্বর দিয়ে শীতকাল শুরু হয়। আর হাঁপানী রোগী হওয়ার পরও শীতকালই কেন যেন আমার কাছে বেশি ভাল লাগে (ঘুমটা বেশি আরামের হয়, এই কারণে হতে পারে)।

২) ছোটবেলা থেকে ডিসেম্বর মাসে সব সময় ছুটি পেয়ে আসছি। এখনো যেহেতু ছাত্রজীবন শেষ হয় নাই (আলহামদুলিল্লাহ), এই ধারা এখনো অব্যাহত আছে।

৩) ডিসেম্বর মাস মানেই একটা নতুন ক্লাসে ওঠার পূর্বপ্রস্তুতি। আর একটু বড় হলাম, এই ফিলিংসটাও কাজ করে (যদিও ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পর এই ধারা উল্টেপাল্টে গেছে, তারপরও এখনো পুরাতন ফিলিংসটা কাজ করে)।

কিন্ত fact of facts মনে হয়ে এই দুইটা,

☛ সার্টিফিকেট অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেরই কোন এক রাতে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার এই পৃথিবীতে আগমন হয়।

☛ ২০১১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেই আমার "পুনর্জন্ম" হয়।

না, পুনর্জন্ম বলতে আমি "দৈহিকভাবে দুনিয়ায় পুনরাগমন" বুঝাচ্ছি না।

২০১১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেই আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি নিজেকে খোলনলচে পালটে ফেলব। আমি ইসলামকে মনেপ্রাণে ধারণ করব। আমি সত্যিকার একজন মুসলিম হব।

আমার অনেক বন্ধুই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, কী এমন হয়েছিল, যে আমি এভাবে পালটে গেলাম?

মাঝেমাঝে যখন নিজের দিকে তাকাই, অতীতের সামীকে মনে করি, আমি নিজেই নিজের বিস্ময় চাপিয়ে রাখতে পারি না! আমি কী ছিলাম, কীভাবে চিন্তা করতাম, আর এখন কীভাবে ইসলামকে নিজের মধ্যে ধারণ করেছি!

কীভাবে সম্ভব হল এটা?

একটু স্মৃতি রোমন্থন করি।

শাইখ আবিদ, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার সকল কাজকর্মের সহযোগী, প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে তো বটেই। বলতে গেলে, শারীরিক গঠনের পার্থক্যটুকু বাদ দিলে মানসিকভাবে আমরা যেন হরিহর আত্মা।

২০১০ সালের রোজার ঈদের পঞ্চম দিন (টিভি চ্যানেলের ভাষা ছাড়া বর্ণনা করার আর কোন ভাল উপায় মাথায় আসছে না)। বেশ এক্সাইটেড হয়ে আছি, কারণ অনেক দিন পর আবিদের সাথে সামনাসামনি দেখা হবে। প্রায় তিন মাসের মত ওর সাথে দেখা হয় না।

আবিদ আসল, আমার সামনে এসে দাঁড়াল। পুরো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম!

এ কাকে দেখছি???

এই দাঁড়িওয়ালা, টাখনুর উপর প্যান্ট তোলা ছেলেটাই কি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড???

অস্বীকার করব না, চরম একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম সেদিন।

ঐদিন আবিদ কিছু বই দিয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে একটা বই ছিল আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত মিলাদের উপর।

"দ্বিতীয়" চরম ধাক্কা খেলাম সেই বইটা পড়তে গিয়ে।

এত আবেগ দিয়ে, এত পূণ্যের কাজ মনে করে এত বছর ধরে যে মিলাদ পড়ে আসছি, সেই মিলাদ বিদআত???

কেমন যেন নিজেকে নিজের কাছে ছোট লেগেছিল। আমার ধর্ম, ইসলাম নিয়ে আমি এত কম জানি?

সেই থেকে শুরু। তারপর থেকে অল্প অল্প করে, একেবারেই অল্প অল্প করে ইসলাম সম্বন্ধে আমার জানা শুরু।

২০১০ এর তখন থেকে ২০১১ এর ডিসেম্বর, সেটা ছিল আমার transition period, সারাজীবনের লালিত সেক্যুলার দর্শনের সাথে ইসলামের সংঘর্ষ। আবিদের সাথেও মাঝেমাঝেই ঝগড়া লেগে যেত। যদিও সেই ঝগড়ায় আমার "লজিক্যাল এস্পেক্ট" নিতান্তই দুর্বল থাকত, তারপরও তর্কের ব্যাপারে মানুষের চিরন্তন নীতি (যুক্তি যাই হোক, তালগাছ আমার), শয়তান আর নফসের কুমন্ত্রণা, এই মিলিয়ে গলা ফাটাতে তেমন কোন অসুবিধা হত না।

কিন্ত পরে ঠাণ্ডা মাথায় বিবেচনা করে স্বীকার করতে বাধ্য হতাম, আবিদের অবস্থানটাই ঠিক, আমিই ভুল, যদি আমি সত্যি সত্যি মেনে থাকি ইসলাম সত্য, আল্লাহর বাণী সত্য, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা সত্য।

এভাবে খুব অল্প অল্প করে এগিয়ে চলা, খুব অল্প অল্প করে ইসলামকে জানা, আর নিজের মনের সাথে নিয়মিত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া।

দিন তারিখ ঠিক বলতে পারব না, তবে ২০১১ সালের সেই ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই।

আর দেরি নয়।

সময় হয়েছে সত্যকে আঁকড়ে ধরার।

সময় হয়েছে ইসলামকে মনেপ্রাণে নিজের জীবনে ধারণ করার।

পরে যখন ইসলামের ব্যাপারে আরো পড়াশোনা করলাম, বিষয়টা নিজের কাছে আরো পরিষ্কার হয়ে গেল।

নাজমুস সাকিব ভাই বিষয়টা খুব সুন্দরভাবে একটা স্ট্যাটাসে ব্যাখ্যা করেছিলেন,

"আল্লাহ আমাকে হিদায়াত দেয় না কেন?"

প্রায়ই এই প্রশ্নটা শুনি। যারা প্রশ্নটা করেন, তারা মুসলিম। ইসলাম নিয়ে যখন কারো সাথে আলোচনায় যাই, ইসলাম প্র্যাকটিস করতে বলি, অনেকেই বলে “ভাই আল্লাহ তো আমাকে হিদায়াত করেনা তাই আসে না।”

প্রশ্নটার কিছু সিম্পল জবাব যেমন আছে, তেমনি জটিল জবাব ও আছে। তবে কম্প্রিহেনসিভ কিছু উত্তর পেলাম মুহাম্মাদ মিতওয়ালি আল শা'রাউই এর একটি বইতে।

আল্লাহ্‌র হিদায়াত বা guidance বা পথ প্রদর্শনকে দুইভাবে ক্লাসিফাই করা যায়।

১. সাধারণ হিদায়া বা গাইডেন্স
২. স্পেশাল হিদায়া বা গাইডেন্স

ধরুন আপনি ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আছেন, আর কেউ এসে আপনাকে জিজ্ঞেস করলো ভাই মেডিকেল কোনদিকে? আপনি বললেন, “প্রবর্তক মোড়ে। এখান থেকে ডানে গিয়ে বামে যাবেন।”
এটা হল সাধারণ হিদায়া বা গাইডেন্স।

কিন্তু ঐ লোক যদি বলে, “ভাই আমাকে আরেকটু ক্লারিফাই করুন। ডানে গিয়ে বামে যাবো, কতদূর যাবো? কি দেখলে চিনবো? কোন সাইনবোর্ড? কোন গেইট?” আপনি এবার উত্তর দিলেন, “জি। বামে গিয়ে ২০ গজ হাঁটবেন। এরপর দেখবেন চৌরাস্তা। চৌরাস্তার উত্তরমুখী রাস্তা ধরবেন। সেখান দিয়ে ১০ গজ। এরপর হাতের বামে আরেকটা রোড। সেটার একদম শেষ মাথায় পাবেন মেডিকেল।”
এটা হল স্পেশাল হিদায়া বা গাইডেন্স।

লক্ষ্য করুন, যে-ই আপনার কাছে মেডিকেল কোথায় জানতে চাইবে সবাইকেই আপনি প্রথম হিদায়া দেবেন। কিন্তু স্পেশাল হিদায়া দেবেন তাকেই, যে নিজ থেকে আরো জানতে আগ্রহী। আরো বুঝত চায়। আরো স্পেসিফিকালী রাস্তাটা চিনে নিতে চায়।

আল্লাহ্‌র হিদায়াও ঠিক তেমনই। আল্লাহ সাধারণ হিদায়া সবাইকেই দিয়েছেন। মুসলিম-অমুসলিম সবাইকে। কিভাবে? ইসলামকে পাঠিয়ে। সেই আদম আলাইহিস সালাম থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম পর্যন্ত যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসূল আল্লাহ পাঠিয়েছেন মানুষের সাধারণ পথনির্দেশিকা তথা হিদায়া সরূপ। তাওহীদের প্রতি সবাইকেই আল্লাহ ডেকেছেন। সবাইকেই আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে ইসলাম হল একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন।
এটা হল আল্লাহ্‌র সাধারণ হিদায়াহ।

আর আল্লাহ্‌র স্পেশাল হিদায়া লাভ করবে তারাই, যারা সাধারণ হিদায়া আমলে নিয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে যাবে। ইসলামকে আরো জানার চেষ্টা করবে, মানার চেষ্টা করবে, বুকে ধারণ করার চেষ্টা করবে। ‘ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম’ – শুধুমাত্র এই ফাঁকা বুলি ছুঁড়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে স্পেশাল হিদায়া লাভ কঠিন।

তাই কেউ যদি নিজেই আল্লাহ্‌র দিকে অগ্রসর না হয়, ইসলামকে জানার ব্যাপারে, হার্ট এন্ড সোল মানার ব্যাপারে আগ্রহী না হয়, আল্লাহ্‌র কিতাবে, রাসূলের হাদীসে কি বলা আছে, কোনটা আমার জন্যে অনুমোদিত কাজ, কোনটা নিষিদ্ধ কাজ, এইসব জানার জন্যে চেষ্টা না করে, তার স্পেশাল হিদায়া লাভ করার আশা ক্ষীণ।

তাই নিজে পাপের মধ্যে আয়েশি ভঙ্গিমায় ডুবে থেকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে ‘আল্লাহ আমাকে হিদায়া দেয় না কেন?’ - দ্যাট ইজ এ পিওর জোক।

পয়েন্ট ঠিক এইটাই।

আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার দ্বীনকে জানার জন্য আমার যে সামান্য প্রচেষ্টা, সেই সামান্য প্রচেষ্টার ফলই আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।

দুনিয়ার স্রোতে গা ভাসানো সামীকে ইসলামের বুঝ দিয়েছেন। তাকে ইসলাম মনেপ্রাণে ধারণ করার হিদায়াত দিয়েছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে আমরা ঠিক এই নির্দেশনাই পাই,

আল্লাহ বলেনঃ "বান্দা যখন আমার দিকে আধ হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে দুই হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার কাছে দৌড়িয়ে যাই।" [সহীহ বুখারী ৯৬]

দুনিয়ার জীবনে ভাল থাকার জন্য আমাদের কত প্রচেষ্টা, কত কষ্ট স্বীকার! এই আমি, যে EA Sports FIFA গেমের বিশাল ভক্ত, দিনে ৫-৬টা করে ম্যাচ না খেললে রাতের ঘুম হয় না, সেখানে একটা পরীক্ষা থাকলে কই থাকে FIFA খেলা, আর কই থাকে রাতের ঘুম!

আর আল্লাহর তৈরি জান্নাত, এটা আমরা বিনা পরিশ্রমে পেয়ে যাব, এটা কি সত্যি সত্যি সম্ভব?

আবু হুরাইরাহ রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

"আল্লাহ জান্নাত ও জাহান্নাম তৈরি করে জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন,'যাও,জান্নাত এবং এর অধিবাসীদের জন্য আমি কী কী তৈরি করলাম,গিয়ে দেখে এস।'"

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

"আদেশমত জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) জান্নাত এবং এর অধিবাসীদের জন্য আল্লাহ যা যা তৈরি করেছেন,তা দেখে আসলেন। অতঃপর,তিনি আল্লাহকে বললেন,'আপনার মহিমার কসম। এমন কেউ নেই,যে এই জান্নাতের কথা শুনে এর ভিতরে প্রবেশ করার জন্য আগ্রহবোধ করবে না।'

এরপর আল্লাহ জান্নাতকে দুঃখ-কষ্ট দ্বারা আবৃত করলেন এবং জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন,'যাও,জান্নাত এবং এর অধিবাসীদের জন্য আমি কী কী তৈরি করলাম,এবার গিয়ে দেখে এস।'

জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) ফিরে এসে বললেন,'আপনার মহিমার কসম। আমার সন্দেহ হচ্ছে,কেউ এই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে কী না!'

এবার আল্লাহ জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন,'যাও,জাহান্নাম এবং এর অধিবাসীদের জন্য আমি কী কী তৈরি করলাম,গিয়ে দেখে এস।'

আদেশমত জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) জাহান্নাম দেখতে গেলেন,এবং এর নানা স্তর দেখে আসলেন।

জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) ফিরে এসে বললেন,'আপনার মহিমার কসম। এমন কেউ নেই,যে এই জাহান্নামের কথা শুনে এর ভিতরে প্রবেশ করার জন্য আগ্রহবোধ করবে।'

অতঃপর আল্লাহ জাহান্নামকে ভোগ-লালসা দ্বারা আবৃত করলেন এবং জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন,'যাও,এবার গিয়ে দেখে এস,জাহান্নাম এবং এর অধিবাসীদের জন্য আমি কী কী তৈরি করলাম।'

জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) ফিরে এসে বললেন,'আপনার মহিমার কসম। আমার সন্দেহ হচ্ছে,কেউ এই জাহান্নামে ঢোকার হাত থেকে বাঁচতে পারবে কী না!'"

[তিরমিযী,আবু দাউদ,নাসাঈ]

হাদীসটা প্রথম শুনেই বুকে একটা ধাক্কা লেগেছিল। এখনো যখনই হাদীসটা শুনি,বুকে চরম একটা ধাক্কা এসে লাগে।

আর চারপাশের বাঁধভাঙা আনন্দ-উল্লাসের কবলে আবার ভেসে যাওয়ার আগমূহূর্তে,এই হাদীসটা একদম টনিকের মত কাজ করে!

Wednesday, December 18, 2013

মূর্খের বসতি

প্রশ্নঃ আমার একজন পরিচিত আরব, তিনি আরব হবার কারণে বেশ গর্বিত। আমি অনারব, আর সে কারণে তিনি আমাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অবজ্ঞা করেন।

আমি এ কারণে তার উপর বেশ ক্ষেপে আছি, আর আমি তাকে সূরা আল-জুমআর আয়াত "তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন" শুনিয়ে তাকে বুঝিয়ে দিতে চাই যে সে আসলে কিছুই না!

এটা কী গ্রহণযোগ্য, না কী তাঁকে হেয় করার জন্য আমি পাপী হব?

উত্তরঃ

আপনারা দুইজনই মূর্খ!

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীরা ছিলেন আরব। এ কারণে আপনি আরবদের ব্যাপারে বাজে কথা বলতে পারেন না।

আর আবু জাহেলও কিন্ত আরব ছিল। তাই "শুধুমাত্র" আরব হবার কারণে কিন্ত গর্বিত হওয়া কোনভাবেই সাজে না।

http://assimalhakeem.net/node/6880

---------------------------------------------------------------------------------

শায়খ আসিম আল-হাকিম মাঝেমাঝেই উত্তর দেবার ক্ষেত্রে কিছু কড়া ভাষা ব্যবহার করেন।

কিন্ত পুরো উত্তরটা পড়ে মনে হল, দুইজনকে "মূর্খ" বলাটা ঠিকই আছে।

সমস্যা একটাই।

এই রকম মূর্খ দিয়ে আমাদের চারপাশটা ভর্তি।

শয়তানের পদাংক অনুসরণ বলতে কী বোঝায়?

"হে ঈমানদারগণ, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ কোর না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।"

এক শুক্রবারে শায়খ শহীদুল্লাহ মাদানী আমাদের মসজিদে খুতবা দিতে এসে সূরা বাকারার এই আয়াতটার উপর অসম্ভব সুন্দর একটা আলোচনা করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন,

"এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের ১০০% ইসলাম পালন করতে বলেছেন। ৭০% না, ৮০% না, ৯০% না, পুরো ১০০%। আর এই ১০০% ইসলাম ভিত্তি হচ্ছে কুরআন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ।

অর্থ্যাৎ আমরা যাই করি না কেন, তার মূল ভিত্তি কুরআন আর হাদীসে থাকতে হবে।

আর এর বাইরে আমরা যাই করি না কেন, তার প্রত্যেকটা হচ্ছে শয়তানের পদাংক অনুসরণ করা।

যেমন, আপনার কাজকর্মের ৬০%-এর ভিত্তি যদি হয় কুরআন আর হাদীস, তাহলে বাকী ৪০% হচ্ছে শয়তানের পদাংক অনুসরণ।

আপনার কাজকর্মের ৫০% যদি হয় কুরআন আর হাদীসের অনুসরণ, তাহলে বাকী ৫০% হচ্ছে শয়তানের পদাংক অনুসরণ।"

খুব সোজা বাংলায়, আমরা যাই করি, আর যাই বলি, তার সমর্থন যদি কুরআন এবং হাদীসে থাকে, এবং সহীহ আক্বীদার আলেমগণ যদি তার ব্যাপারে হ্যাঁ-বাচক উত্তর দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটা ইসলামে অনুমোদিত।

আর যদি তা না হয়, তাহলে সেই জিনিসের ব্যাপারে আপনার যতই আবেগ থাক না কেন, আর যতই আপনার বাপ-দাদা চৌদ্দগোষ্ঠী পালন করে থাক না কেন, সেটা আর কিছুই না, আল্লাহর দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, শয়তানের পদাংক অনুসরণ।

Monday, December 2, 2013

রাজনৈতিক অস্থিরতার চক্র - মুক্তির পথ বেছে নিতে হবে আমাদেরই

আমার একটা অভ্যাস (না কি বদভ্যাস বলব?) আছে। যদি কোন বিষয়ে কোন কিছু ভবিতব্য বলে মনে হয়, তাহলে কেমন যেন একটা দায়সারা গা-ছাড়া ভাব চলে আসে। মনে হয়, "ধুর, এটা ঘটার সম্ভাবনাই বেশি, এত মাথা ঘামিয়ে লাভ কী?"

অস্বীকার করব না, অনেক ক্ষেত্রেই আমার এই "বিজ্ঞ" prediction ভুল প্রমাণিত হয়েছে, তারপরও কেন যেন এই অভ্যাস (না বদভ্যাস?) ছাড়তে পারি না।

এই যে গত কয়েক দিন ধরে নিয়মিত সহিংসতায় মানুষের মৃত্যুর খবর শুনছি, আর প্রায় প্রতিদিনই তো টিভিতে শাহবাগের পুড়ে যাওয়া মানুষদের দেখছি, তাঁদের স্বজনদের আহাজারি শুনছি। মন খারাপ হয়, কিন্ত কেন যেন মনকে ঐভাবে ছুঁতে পারে না।

কারণ, জানি যে যা ঘটছে, তার পিছনের মূল কারণ আমরা নিজেরা।

অবাক হচ্ছেন?

নিচের কথাগুলো পড়ে দেখুন।

"সর্বশক্তিমান আল্লাহর জ্ঞানের অন্যতম নিদর্শন হল এই যে, তিনি তাঁর দাসের উপর এমন শাসক নিযুক্ত করে দেন, যাঁরা তাঁদের (শাসক) কর্ম ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাদের দ্বারা শাসিতদের কর্ম ও সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটান।

☛ তারা (শাসিত) যদি হক্বের (আল্লাহর দেওয়া হুকুম-আহকাম) উপর অটল থাকে, তাহলে তাদের শাসকরাও হক্বের উপর অটল থাকবেন। আর তারা যদি হক্বের পথ থেকে সরে যায়, তাদের তাদের শাসকরাও অনুরূপভাবে হক্বের পথ থেকে সরে যাবেন।

☛ তারা যদি নিজেদের এবং অন্যদের উপর জুলুম করতে থাকে (নিয়মিত পাপে নিমজ্জিত হওয়াই ইসলামে নিজের উপর জুলুম), তাহলে তাদের শাসকও তাদের উপর জুলুম করতে শুরু করবেন।

☛ তারা যদি প্রতারণায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাদের শাসকও তাদের সাথে প্রতারণা করবেন। এরই সাথে, তারা যদি একে অন্যের অধিকার প্রদানে গড়িমসি শুরু করে আর কৃপণতার আশ্রয় নেয়, তাদের শাসকও অনুরূপভাবে তাদের অধিকার প্রদানে গড়িমসি শুরু করবেন আর তাদের ক্ষেত্রে কৃপণতার আশ্রয় নেবেন (অর্থ্যাৎ জনকল্যাণে সামান্য অর্থই ব্যয় করা হবে)।

☛ তারা যদি দূর্বলদের সম্পত্তি, যা কোনভাবেই তাদের প্রাপ্য নয়, হরণ করতে শুরু করে, তাহলে তাদের শাসক তাদের উপর একের পর এক কর চাপিয়ে দিবেন।

☛ আর দূর্বলদের কাছ থেকে যতটুকুই অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নিক না কেন, তাহলে তাদের শাসক তাঁর ক্ষমতা দিয়ে সেই সম্পত্তি তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবেন। 

সোজা কথায়, শাসকেরা হবেন তাদের নিজেদের প্রতিফলন।"

না, কথাগুলা আমার না। কথাগুলা ইমাম ইবনুল কায়্যিমের।

একটু নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখি তো, এই কাজগুলো কি আমাদের আশেপাশে ঘটছে? 

তারচেয়েও বড় কথা, আমরা নিজেরা, প্রত্যেকে, কি এই কাজগুলোর সাথে জড়িত?

উত্তর আমরা সবাই জানি বলেই মনে হয়।

আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন, কী করলে এই রাজনৈতিক অস্থিরতার চক্রের হাত থেকে আমরা মুক্তি পাব?

উত্তর আসলে একেবারেই সোজা। নৈর্বক্তিক প্রশ্নের মত, দুটো অপশন থেকে আমাদের একটা বেছে নিতে হবে।

এক, নিজেরা যা খুশি, যেভাবে খুশি, সেভাবেই চলা।

দুই, আল্লাহর কাছে তওবা করে নিজেদের সংশোধন করা, কুরআন হাদীসের আলোকে নিজেদের জীবন পরিচালিত করা।

দ্বিতীয়টার পরিণতি, এই ভয়াবহ রাজনৈতিক অস্থিরতার চক্র, যা স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশকে কুরে কুরে খাচ্ছে, ইনশাআল্লাহ, তার থেকে মুক্তিলাভ।

প্রথমটার পরিণতি, আমরা যেমন যেভাবে খুশি সেভাবে চলব, ঠিক তেমনিভাবে আমাদের শাসকেরাও যেভাবে খুশি সেভাবেই চলবেন!

পছন্দ এখন আমাদের।

আর সেই অনুযায়ী কর্মফলটাও ভোগ করতে হবে আমাদের।


Friday, November 15, 2013

কী অনুভূতি নিয়ে আশুরাকে পালন করা উচিত?

ইসলামের ইতিহাসে আশুরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মৃতিবিজরিত দিন। একদিকে জালিম ফিরআউনের কবল থেকে মুসা আলাইহিস সালাম ও বনী ইসরাইলের মুক্তি, আবার অন্যদিকে কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেন রাযিআল্লাহু আনহু এবং তার সঙ্গীদের মৃত্যু।

কিন্ত কীভাবে আমরা আশুরাকে পালন করব? অর্থ্যাৎ, আশুরা পালনের সময় মনের মধ্যে কোন আবেগটি আমাদের মধ্যে কাজ করা উচিত, মুসা আলাইহিস সালামের বিপদ থেকে পরিত্রাণ লাভের আনন্দ, না কী ইমাম হোসেন রাযিআল্লাহু আনহুর শহীদ হওয়ার জন্য দুঃখ?

→ "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছেলে ইবরাহীম যে মাসে মারা যান, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বা সাহাবীগণ, কেউই সে মাসকে 'শোকের মাস' হিসেবে পালন করেন নি, আর সে মাসে বিয়ে করাও বাদ দেন নি। অথবা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণপ্রিয় চাচা, হামযা রাযিআল্লাহু আনহু যে মাসে শহীদ হয়েছিলেন, আর তাঁর কলিজা কেটে চিবানো হয়েছিল, সেই মাসকেও তাঁরা 'শোকের মাস' বা 'বিবাহ বর্জনের মাস' হিসাবে পালন করেন নি। অতএব, মহররমকে 'শোকের মাস' হিসাবে পালন করা আর এই মাসে বিয়ে বর্জন করা সুস্পষ্ট বিদআত ছাড়া কিছুই নয়।"


→ "আমাদের অন্যতম আনন্দের উপলক্ষ হচ্ছে আশুরা। এই দিনে মুসা আলাইহিস সালাম ও বনী ইসরাইলকে জালিম ফিরআউনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে থাকি। কিন্ত বেশিরভাগ মানুষ এটাকে ইমাম হোসেন রাযিআল্লাহু আনহুর শহীদ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোক পালন করে।

প্রকৃতপক্ষে, এই শোক প্রকাশের আবহের মূল সূচনাকারী শিয়া সম্প্রদায়। তারা এই দিনে তাজিয়া মিছিল বের করে, চাবুক আর ছুরি দিয়ে নিজেদের শরীর রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত করে, যার সাথে ইসলামের নূন্যতম সম্পর্ক নেই।

মজার ব্যাপার হল, শিয়াদের মূল বিশ্বাসের সাথে ঘৃণা আর প্রতিশোধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইতিহাসে তারা ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতারক হিসেবেই পরিচিত। অতীতের প্রতিটি ঘটনায় তারা ইসলামের শত্রুদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহায়তা করেছে। তাদের বিশ্বাসের তিনটি ভিত্তি হলঃ শির্ক, কুফরী এবং তাদের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ তাদের ইমামদের প্রদান!

তারা কি কাফির?

এখানে যে বিষয়টা বুঝতে হবে, কোন ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে কাফির বলার আগে তার বিশ্বাস সম্পর্কে প্রকৃত ও সুস্পষ্ট ধ্যারণা থাকতে হবে। সাধারণত, যদি কারো বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকে, তার আগ পর্যন্ত তাকে মুসলিম হিসেবেই ধরে নিতে হবে।

কিন্ত কেউ যদি আয়িশা রাযিআল্লাহু আনহাকে গালি দেয়, আবু বকর আর উমার রাযিআল্লাহু আনহুকে অভিশাপ দেয়, তাহলে অবশ্যই সে কাফির। অথবা যদি বলে যে কুরআন অপরিবর্তিত নয়, অথবা তাদের কাছে অন্য একটি কুরআন রয়েছে, তাহলেও সে কাফির। যদি কেউ মনে করে যে তাদের ইমাম অদৃশ্য ক্ষমতার অধিকারী, অথবা মৃতকে জীবিত করতে পারে, তাহলে তা শির্ক।

আল্লাহ তাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক বুঝ দান করুন এবং তাদের সুন্নাহ আঁকড়ে ধরার তৌফিক দান করুন।"


অতএব, আমাদের একটি খুশির উপলক্ষ হিসেবেই আশুরাকে পালন করতে হবে।

কিন্ত এরই সাথে, ইসলামের জন্য, আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য, ইমাম হোসেন রাযিআল্লাহু আনহুর আত্মৎসর্গের কথাও আমাদের স্মরণে রাখা উচিত, কিন্ত অবশ্যই এটা মাথায় রাখতে হবে, ইসলামে "শোক দিবস" নামক কোন কনসেপ্ট নেই।

[ড. বিলাল ফিলিপস এবং শায়খ আসিম আল-হাকিমের কথাগুলো সিফাত মাহজাবীন আপুর সৌজন্যে।]