বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
ডিসেম্বর মাসটা নানা কারণেই আমার কাছে প্রিয়, বলা যায় বছরের ১২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়। বেশ কয়েকটা কারণ আছে এর পিছনে, যেমন,
১) ডিসেম্বর দিয়ে শীতকাল শুরু হয়। আর হাঁপানী রোগী হওয়ার পরও শীতকালই কেন যেন আমার কাছে বেশি ভাল লাগে (ঘুমটা বেশি আরামের হয়, এই কারণে হতে পারে)।
২) ছোটবেলা থেকে ডিসেম্বর মাসে সব সময় ছুটি পেয়ে আসছি। এখনো যেহেতু ছাত্রজীবন শেষ হয় নাই (আলহামদুলিল্লাহ), এই ধারা এখনো অব্যাহত আছে।
৩) ডিসেম্বর মাস মানেই একটা নতুন ক্লাসে ওঠার পূর্বপ্রস্তুতি। আর একটু বড় হলাম, এই ফিলিংসটাও কাজ করে (যদিও ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পর এই ধারা উল্টেপাল্টে গেছে, তারপরও এখনো পুরাতন ফিলিংসটা কাজ করে)।
কিন্ত fact of facts মনে হয়ে এই দুইটা,
☛ সার্টিফিকেট অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেরই কোন এক রাতে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার এই পৃথিবীতে আগমন হয়।
☛ ২০১১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেই আমার "পুনর্জন্ম" হয়।
না, পুনর্জন্ম বলতে আমি "দৈহিকভাবে দুনিয়ায় পুনরাগমন" বুঝাচ্ছি না।
২০১১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেই আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি নিজেকে খোলনলচে পালটে ফেলব। আমি ইসলামকে মনেপ্রাণে ধারণ করব। আমি সত্যিকার একজন মুসলিম হব।
আমার অনেক বন্ধুই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, কী এমন হয়েছিল, যে আমি এভাবে পালটে গেলাম?
মাঝেমাঝে যখন নিজের দিকে তাকাই, অতীতের সামীকে মনে করি, আমি নিজেই নিজের বিস্ময় চাপিয়ে রাখতে পারি না! আমি কী ছিলাম, কীভাবে চিন্তা করতাম, আর এখন কীভাবে ইসলামকে নিজের মধ্যে ধারণ করেছি!
কীভাবে সম্ভব হল এটা?
একটু স্মৃতি রোমন্থন করি।
শাইখ আবিদ, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার সকল কাজকর্মের সহযোগী, প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে তো বটেই। বলতে গেলে, শারীরিক গঠনের পার্থক্যটুকু বাদ দিলে মানসিকভাবে আমরা যেন হরিহর আত্মা।
২০১০ সালের রোজার ঈদের পঞ্চম দিন (টিভি চ্যানেলের ভাষা ছাড়া বর্ণনা করার আর কোন ভাল উপায় মাথায় আসছে না)। বেশ এক্সাইটেড হয়ে আছি, কারণ অনেক দিন পর আবিদের সাথে সামনাসামনি দেখা হবে। প্রায় তিন মাসের মত ওর সাথে দেখা হয় না।
আবিদ আসল, আমার সামনে এসে দাঁড়াল। পুরো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম!
এ কাকে দেখছি???
এই দাঁড়িওয়ালা, টাখনুর উপর প্যান্ট তোলা ছেলেটাই কি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড???
অস্বীকার করব না, চরম একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম সেদিন।
ঐদিন আবিদ কিছু বই দিয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে একটা বই ছিল আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত মিলাদের উপর।
"দ্বিতীয়" চরম ধাক্কা খেলাম সেই বইটা পড়তে গিয়ে।
এত আবেগ দিয়ে, এত পূণ্যের কাজ মনে করে এত বছর ধরে যে মিলাদ পড়ে আসছি, সেই মিলাদ বিদআত???
কেমন যেন নিজেকে নিজের কাছে ছোট লেগেছিল। আমার ধর্ম, ইসলাম নিয়ে আমি এত কম জানি?
সেই থেকে শুরু। তারপর থেকে অল্প অল্প করে, একেবারেই অল্প অল্প করে ইসলাম সম্বন্ধে আমার জানা শুরু।
২০১০ এর তখন থেকে ২০১১ এর ডিসেম্বর, সেটা ছিল আমার transition period, সারাজীবনের লালিত সেক্যুলার দর্শনের সাথে ইসলামের সংঘর্ষ। আবিদের সাথেও মাঝেমাঝেই ঝগড়া লেগে যেত। যদিও সেই ঝগড়ায় আমার "লজিক্যাল এস্পেক্ট" নিতান্তই দুর্বল থাকত, তারপরও তর্কের ব্যাপারে মানুষের চিরন্তন নীতি (যুক্তি যাই হোক, তালগাছ আমার), শয়তান আর নফসের কুমন্ত্রণা, এই মিলিয়ে গলা ফাটাতে তেমন কোন অসুবিধা হত না।
কিন্ত পরে ঠাণ্ডা মাথায় বিবেচনা করে স্বীকার করতে বাধ্য হতাম, আবিদের অবস্থানটাই ঠিক, আমিই ভুল, যদি আমি সত্যি সত্যি মেনে থাকি ইসলাম সত্য, আল্লাহর বাণী সত্য, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা সত্য।
এভাবে খুব অল্প অল্প করে এগিয়ে চলা, খুব অল্প অল্প করে ইসলামকে জানা, আর নিজের মনের সাথে নিয়মিত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া।
দিন তারিখ ঠিক বলতে পারব না, তবে ২০১১ সালের সেই ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই।
আর দেরি নয়।
সময় হয়েছে সত্যকে আঁকড়ে ধরার।
সময় হয়েছে ইসলামকে মনেপ্রাণে নিজের জীবনে ধারণ করার।
পরে যখন ইসলামের ব্যাপারে আরো পড়াশোনা করলাম, বিষয়টা নিজের কাছে আরো পরিষ্কার হয়ে গেল।
নাজমুস সাকিব ভাই বিষয়টা খুব সুন্দরভাবে একটা স্ট্যাটাসে ব্যাখ্যা করেছিলেন,
পয়েন্ট ঠিক এইটাই।
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার দ্বীনকে জানার জন্য আমার যে সামান্য প্রচেষ্টা, সেই সামান্য প্রচেষ্টার ফলই আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।
দুনিয়ার স্রোতে গা ভাসানো সামীকে ইসলামের বুঝ দিয়েছেন। তাকে ইসলাম মনেপ্রাণে ধারণ করার হিদায়াত দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে আমরা ঠিক এই নির্দেশনাই পাই,
দুনিয়ার জীবনে ভাল থাকার জন্য আমাদের কত প্রচেষ্টা, কত কষ্ট স্বীকার! এই আমি, যে EA Sports FIFA গেমের বিশাল ভক্ত, দিনে ৫-৬টা করে ম্যাচ না খেললে রাতের ঘুম হয় না, সেখানে একটা পরীক্ষা থাকলে কই থাকে FIFA খেলা, আর কই থাকে রাতের ঘুম!
আর আল্লাহর তৈরি জান্নাত, এটা আমরা বিনা পরিশ্রমে পেয়ে যাব, এটা কি সত্যি সত্যি সম্ভব?
হাদীসটা প্রথম শুনেই বুকে একটা ধাক্কা লেগেছিল। এখনো যখনই হাদীসটা শুনি,বুকে চরম একটা ধাক্কা এসে লাগে।
আর চারপাশের বাঁধভাঙা আনন্দ-উল্লাসের কবলে আবার ভেসে যাওয়ার আগমূহূর্তে,এই হাদীসটা একদম টনিকের মত কাজ করে!
ডিসেম্বর মাসটা নানা কারণেই আমার কাছে প্রিয়, বলা যায় বছরের ১২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়। বেশ কয়েকটা কারণ আছে এর পিছনে, যেমন,
১) ডিসেম্বর দিয়ে শীতকাল শুরু হয়। আর হাঁপানী রোগী হওয়ার পরও শীতকালই কেন যেন আমার কাছে বেশি ভাল লাগে (ঘুমটা বেশি আরামের হয়, এই কারণে হতে পারে)।
২) ছোটবেলা থেকে ডিসেম্বর মাসে সব সময় ছুটি পেয়ে আসছি। এখনো যেহেতু ছাত্রজীবন শেষ হয় নাই (আলহামদুলিল্লাহ), এই ধারা এখনো অব্যাহত আছে।
৩) ডিসেম্বর মাস মানেই একটা নতুন ক্লাসে ওঠার পূর্বপ্রস্তুতি। আর একটু বড় হলাম, এই ফিলিংসটাও কাজ করে (যদিও ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পর এই ধারা উল্টেপাল্টে গেছে, তারপরও এখনো পুরাতন ফিলিংসটা কাজ করে)।
কিন্ত fact of facts মনে হয়ে এই দুইটা,
☛ সার্টিফিকেট অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেরই কোন এক রাতে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার এই পৃথিবীতে আগমন হয়।
☛ ২০১১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেই আমার "পুনর্জন্ম" হয়।
না, পুনর্জন্ম বলতে আমি "দৈহিকভাবে দুনিয়ায় পুনরাগমন" বুঝাচ্ছি না।
২০১১ সালের এই ডিসেম্বর মাসেই আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি নিজেকে খোলনলচে পালটে ফেলব। আমি ইসলামকে মনেপ্রাণে ধারণ করব। আমি সত্যিকার একজন মুসলিম হব।
আমার অনেক বন্ধুই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, কী এমন হয়েছিল, যে আমি এভাবে পালটে গেলাম?
মাঝেমাঝে যখন নিজের দিকে তাকাই, অতীতের সামীকে মনে করি, আমি নিজেই নিজের বিস্ময় চাপিয়ে রাখতে পারি না! আমি কী ছিলাম, কীভাবে চিন্তা করতাম, আর এখন কীভাবে ইসলামকে নিজের মধ্যে ধারণ করেছি!
কীভাবে সম্ভব হল এটা?
একটু স্মৃতি রোমন্থন করি।
শাইখ আবিদ, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার সকল কাজকর্মের সহযোগী, প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে তো বটেই। বলতে গেলে, শারীরিক গঠনের পার্থক্যটুকু বাদ দিলে মানসিকভাবে আমরা যেন হরিহর আত্মা।
২০১০ সালের রোজার ঈদের পঞ্চম দিন (টিভি চ্যানেলের ভাষা ছাড়া বর্ণনা করার আর কোন ভাল উপায় মাথায় আসছে না)। বেশ এক্সাইটেড হয়ে আছি, কারণ অনেক দিন পর আবিদের সাথে সামনাসামনি দেখা হবে। প্রায় তিন মাসের মত ওর সাথে দেখা হয় না।
আবিদ আসল, আমার সামনে এসে দাঁড়াল। পুরো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম!
এ কাকে দেখছি???
এই দাঁড়িওয়ালা, টাখনুর উপর প্যান্ট তোলা ছেলেটাই কি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড???
অস্বীকার করব না, চরম একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম সেদিন।
ঐদিন আবিদ কিছু বই দিয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে একটা বই ছিল আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত মিলাদের উপর।
"দ্বিতীয়" চরম ধাক্কা খেলাম সেই বইটা পড়তে গিয়ে।
এত আবেগ দিয়ে, এত পূণ্যের কাজ মনে করে এত বছর ধরে যে মিলাদ পড়ে আসছি, সেই মিলাদ বিদআত???
কেমন যেন নিজেকে নিজের কাছে ছোট লেগেছিল। আমার ধর্ম, ইসলাম নিয়ে আমি এত কম জানি?
সেই থেকে শুরু। তারপর থেকে অল্প অল্প করে, একেবারেই অল্প অল্প করে ইসলাম সম্বন্ধে আমার জানা শুরু।
২০১০ এর তখন থেকে ২০১১ এর ডিসেম্বর, সেটা ছিল আমার transition period, সারাজীবনের লালিত সেক্যুলার দর্শনের সাথে ইসলামের সংঘর্ষ। আবিদের সাথেও মাঝেমাঝেই ঝগড়া লেগে যেত। যদিও সেই ঝগড়ায় আমার "লজিক্যাল এস্পেক্ট" নিতান্তই দুর্বল থাকত, তারপরও তর্কের ব্যাপারে মানুষের চিরন্তন নীতি (যুক্তি যাই হোক, তালগাছ আমার), শয়তান আর নফসের কুমন্ত্রণা, এই মিলিয়ে গলা ফাটাতে তেমন কোন অসুবিধা হত না।
কিন্ত পরে ঠাণ্ডা মাথায় বিবেচনা করে স্বীকার করতে বাধ্য হতাম, আবিদের অবস্থানটাই ঠিক, আমিই ভুল, যদি আমি সত্যি সত্যি মেনে থাকি ইসলাম সত্য, আল্লাহর বাণী সত্য, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা সত্য।
এভাবে খুব অল্প অল্প করে এগিয়ে চলা, খুব অল্প অল্প করে ইসলামকে জানা, আর নিজের মনের সাথে নিয়মিত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া।
দিন তারিখ ঠিক বলতে পারব না, তবে ২০১১ সালের সেই ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই।
আর দেরি নয়।
সময় হয়েছে সত্যকে আঁকড়ে ধরার।
সময় হয়েছে ইসলামকে মনেপ্রাণে নিজের জীবনে ধারণ করার।
পরে যখন ইসলামের ব্যাপারে আরো পড়াশোনা করলাম, বিষয়টা নিজের কাছে আরো পরিষ্কার হয়ে গেল।
নাজমুস সাকিব ভাই বিষয়টা খুব সুন্দরভাবে একটা স্ট্যাটাসে ব্যাখ্যা করেছিলেন,
"আল্লাহ আমাকে হিদায়াত দেয় না কেন?"
প্রায়ই এই প্রশ্নটা শুনি। যারা প্রশ্নটা করেন, তারা মুসলিম। ইসলাম নিয়ে যখন কারো সাথে আলোচনায় যাই, ইসলাম প্র্যাকটিস করতে বলি, অনেকেই বলে “ভাই আল্লাহ তো আমাকে হিদায়াত করেনা তাই আসে না।”
প্রশ্নটার কিছু সিম্পল জবাব যেমন আছে, তেমনি জটিল জবাব ও আছে। তবে কম্প্রিহেনসিভ কিছু উত্তর পেলাম মুহাম্মাদ মিতওয়ালি আল শা'রাউই এর একটি বইতে।
আল্লাহ্র হিদায়াত বা guidance বা পথ প্রদর্শনকে দুইভাবে ক্লাসিফাই করা যায়।
১. সাধারণ হিদায়া বা গাইডেন্স
২. স্পেশাল হিদায়া বা গাইডেন্স
ধরুন আপনি ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আছেন, আর কেউ এসে আপনাকে জিজ্ঞেস করলো ভাই মেডিকেল কোনদিকে? আপনি বললেন, “প্রবর্তক মোড়ে। এখান থেকে ডানে গিয়ে বামে যাবেন।”
এটা হল সাধারণ হিদায়া বা গাইডেন্স।
কিন্তু ঐ লোক যদি বলে, “ভাই আমাকে আরেকটু ক্লারিফাই করুন। ডানে গিয়ে বামে যাবো, কতদূর যাবো? কি দেখলে চিনবো? কোন সাইনবোর্ড? কোন গেইট?” আপনি এবার উত্তর দিলেন, “জি। বামে গিয়ে ২০ গজ হাঁটবেন। এরপর দেখবেন চৌরাস্তা। চৌরাস্তার উত্তরমুখী রাস্তা ধরবেন। সেখান দিয়ে ১০ গজ। এরপর হাতের বামে আরেকটা রোড। সেটার একদম শেষ মাথায় পাবেন মেডিকেল।”
এটা হল স্পেশাল হিদায়া বা গাইডেন্স।
লক্ষ্য করুন, যে-ই আপনার কাছে মেডিকেল কোথায় জানতে চাইবে সবাইকেই আপনি প্রথম হিদায়া দেবেন। কিন্তু স্পেশাল হিদায়া দেবেন তাকেই, যে নিজ থেকে আরো জানতে আগ্রহী। আরো বুঝত চায়। আরো স্পেসিফিকালী রাস্তাটা চিনে নিতে চায়।
আল্লাহ্র হিদায়াও ঠিক তেমনই। আল্লাহ সাধারণ হিদায়া সবাইকেই দিয়েছেন। মুসলিম-অমুসলিম সবাইকে। কিভাবে? ইসলামকে পাঠিয়ে। সেই আদম আলাইহিস সালাম থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম পর্যন্ত যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসূল আল্লাহ পাঠিয়েছেন মানুষের সাধারণ পথনির্দেশিকা তথা হিদায়া সরূপ। তাওহীদের প্রতি সবাইকেই আল্লাহ ডেকেছেন। সবাইকেই আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে ইসলাম হল একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন।
এটা হল আল্লাহ্র সাধারণ হিদায়াহ।
আর আল্লাহ্র স্পেশাল হিদায়া লাভ করবে তারাই, যারা সাধারণ হিদায়া আমলে নিয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে যাবে। ইসলামকে আরো জানার চেষ্টা করবে, মানার চেষ্টা করবে, বুকে ধারণ করার চেষ্টা করবে। ‘ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম’ – শুধুমাত্র এই ফাঁকা বুলি ছুঁড়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে স্পেশাল হিদায়া লাভ কঠিন।
তাই কেউ যদি নিজেই আল্লাহ্র দিকে অগ্রসর না হয়, ইসলামকে জানার ব্যাপারে, হার্ট এন্ড সোল মানার ব্যাপারে আগ্রহী না হয়, আল্লাহ্র কিতাবে, রাসূলের হাদীসে কি বলা আছে, কোনটা আমার জন্যে অনুমোদিত কাজ, কোনটা নিষিদ্ধ কাজ, এইসব জানার জন্যে চেষ্টা না করে, তার স্পেশাল হিদায়া লাভ করার আশা ক্ষীণ।
তাই নিজে পাপের মধ্যে আয়েশি ভঙ্গিমায় ডুবে থেকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে ‘আল্লাহ আমাকে হিদায়া দেয় না কেন?’ - দ্যাট ইজ এ পিওর জোক।
পয়েন্ট ঠিক এইটাই।
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার দ্বীনকে জানার জন্য আমার যে সামান্য প্রচেষ্টা, সেই সামান্য প্রচেষ্টার ফলই আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।
দুনিয়ার স্রোতে গা ভাসানো সামীকে ইসলামের বুঝ দিয়েছেন। তাকে ইসলাম মনেপ্রাণে ধারণ করার হিদায়াত দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে আমরা ঠিক এই নির্দেশনাই পাই,
আল্লাহ বলেনঃ "বান্দা যখন আমার দিকে আধ হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে দুই হাত এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার কাছে দৌড়িয়ে যাই।" [সহীহ বুখারী ৯৬]
দুনিয়ার জীবনে ভাল থাকার জন্য আমাদের কত প্রচেষ্টা, কত কষ্ট স্বীকার! এই আমি, যে EA Sports FIFA গেমের বিশাল ভক্ত, দিনে ৫-৬টা করে ম্যাচ না খেললে রাতের ঘুম হয় না, সেখানে একটা পরীক্ষা থাকলে কই থাকে FIFA খেলা, আর কই থাকে রাতের ঘুম!
আর আল্লাহর তৈরি জান্নাত, এটা আমরা বিনা পরিশ্রমে পেয়ে যাব, এটা কি সত্যি সত্যি সম্ভব?
আবু হুরাইরাহ রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
"আল্লাহ জান্নাত ও জাহান্নাম তৈরি করে জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন,'যাও,জান্নাত এবং এর অধিবাসীদের জন্য আমি কী কী তৈরি করলাম,গিয়ে দেখে এস।'"
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
"আদেশমত জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) জান্নাত এবং এর অধিবাসীদের জন্য আল্লাহ যা যা তৈরি করেছেন,তা দেখে আসলেন। অতঃপর,তিনি আল্লাহকে বললেন,'আপনার মহিমার কসম। এমন কেউ নেই,যে এই জান্নাতের কথা শুনে এর ভিতরে প্রবেশ করার জন্য আগ্রহবোধ করবে না।'
এরপর আল্লাহ জান্নাতকে দুঃখ-কষ্ট দ্বারা আবৃত করলেন এবং জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন,'যাও,জান্নাত এবং এর অধিবাসীদের জন্য আমি কী কী তৈরি করলাম,এবার গিয়ে দেখে এস।'
জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) ফিরে এসে বললেন,'আপনার মহিমার কসম। আমার সন্দেহ হচ্ছে,কেউ এই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে কী না!'
এবার আল্লাহ জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন,'যাও,জাহান্নাম এবং এর অধিবাসীদের জন্য আমি কী কী তৈরি করলাম,গিয়ে দেখে এস।'
আদেশমত জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) জাহান্নাম দেখতে গেলেন,এবং এর নানা স্তর দেখে আসলেন।
জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) ফিরে এসে বললেন,'আপনার মহিমার কসম। এমন কেউ নেই,যে এই জাহান্নামের কথা শুনে এর ভিতরে প্রবেশ করার জন্য আগ্রহবোধ করবে।'
অতঃপর আল্লাহ জাহান্নামকে ভোগ-লালসা দ্বারা আবৃত করলেন এবং জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন,'যাও,এবার গিয়ে দেখে এস,জাহান্নাম এবং এর অধিবাসীদের জন্য আমি কী কী তৈরি করলাম।'
জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) ফিরে এসে বললেন,'আপনার মহিমার কসম। আমার সন্দেহ হচ্ছে,কেউ এই জাহান্নামে ঢোকার হাত থেকে বাঁচতে পারবে কী না!'"
[তিরমিযী,আবু দাউদ,নাসাঈ]
হাদীসটা প্রথম শুনেই বুকে একটা ধাক্কা লেগেছিল। এখনো যখনই হাদীসটা শুনি,বুকে চরম একটা ধাক্কা এসে লাগে।
আর চারপাশের বাঁধভাঙা আনন্দ-উল্লাসের কবলে আবার ভেসে যাওয়ার আগমূহূর্তে,এই হাদীসটা একদম টনিকের মত কাজ করে!
No comments:
Post a Comment