Thursday, October 3, 2013

শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হারাম,কিন্ত কোন শাসক?

প্রশ্নঃ শাসক,এমন কী যদি তারা পাপী এবং অত্যাচারীও হয়,তাদের প্রতি কী ধরণের আচরণ করতে হবে,তার বর্ণনা বিভিন্ন হাদীসে দেওয়া আছে। কিন্ত অনেকেই বলে থাকেন,এই শাসক হচ্ছেন এক ও অভিন্ন মুসলিম উম্মাহর খলিফা,বিভিন্ন দেশের বাদশা,রাজা,রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী নন। এই বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা চাচ্ছি।

উত্তরঃ

এটা একটা ভুল ধারণা ছাড়া কিছুই নয় যে,শাসকের প্রতি আচরণের বিষয়ে যে সকল হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে,সেগুলোতে শাসক বলতে শুধুমাত্র এক ও অভিন্ন মুসলিম উম্মাহর খলিফাকে বুঝানো হয়েছে। সম্মানিত শায়খগণ এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। নিচে তাদের কিছু উল্লেখ করা হলঃ

১) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহঃ

"সুন্নাহ এই যে,মুসলিমদের ইমাম (খলিফা) হবেন একজন,আর বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর প্রতিনিধি থাকবেন।

কিন্ত ধরুন,কিছু অঞ্চলে পাপে নিমজ্জিত হয়ে আর বাকী অঞ্চলে অসমর্থ হয়ে,অথবা এই কারণ ছাড়া অন্য যে কারণেই হোক না কেন,উম্মাহ এই সুন্নাহ পরিত্যাগ করল,যার ফলে একের বদলে অনেক ইমামের আবির্ভাব ঘটল।

তাহলে,ইমামদের উপর এটা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায় যে,তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অঞ্চলে "হুদুদ" (ইসলামে অপরাধের জন্য যে শাস্তি বর্ণিত হয়েছে) প্রতিষ্ঠা করবেন,এবং তাঁর অঞ্চলের লোকেদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করবেন।"

[মাজমু আল-ফাতাওয়া,৩৫/১৭৫-১৭৬]

২) ইমাম আশ-শাওকানী রাহিমাহুল্লাহঃ

"সত্য এই যে,মুসলিমদের ইমাম হবেন একজন। কিন্ত,বিশ্বের নানা প্রান্তে ইসলাম ছড়িয়ে যাবার পর দেখা যায় যে,অঞ্চলগত দূরত্বের কারণে প্রত্যেক অঞ্চলে একজন করে ইমাম বা শাসকের আবির্ভাব ঘটে,যাদের কারোরই অন্য অঞ্চলে শাসন করার কোন অধিকার ছিল না।

অতএব,একের অধিক ইমামের উপস্থিতি কোন খারাপ কিছু নয়,এবং কোন অঞ্চলের মুসলিমদের এটাই কর্তব্য যে,সে যে অঞ্চলের অধিবাসী,সেই অঞ্চলে যে ইমামের আদেশ এবং নিষেধ মান্য করা হয়,তাঁর বায়আত গ্রহণ করে তাঁর আনুগত্য করা। অন্য সকল অঞ্চলের ইমামদের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য।

আর কোন মুসলিমের এটা কর্তব্য নয় যে,সে যে অঞ্চলের অধিবাসী,সেই অঞ্চলের ইমাম ব্যতীত অন্য কোন অঞ্চলের ইমামের আনুগত্য করা।"

অতঃপর তিনি বলেন,

"আপনাদের এটা জেনে রাখা উচিত,এটা (একের অধিক ইমামের উপস্থিতি) ইসলামী শরীয়াতের বাইরে পরে না,বরং বিভিন্ন স্বাক্ষ্যপ্রমাণ এটাই নির্দেশ করে যে শরীয়াতে এর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আর এর বিপক্ষে যত কথাই উঠুক না কেন,এগুলোর কোনটিতেই কান দেবেন না,কারণ স্বর্ণযুগের ইসলামী শাসনব্যবস্থার সময়কার পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং বর্তমান সময়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভিন্নতা দিবালোকের চেয়েও স্পষ্ট।"

[আস-সাইয়েলুল জারার,৪/৫১২]

৩) ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহঃ

"প্রত্যেক মাযহাবের ইমামগণ এই বিষয়ে একমত যে,যিনিই কোন দেশ বা একের অধিক দেশের ক্ষমতা দখল করেন,তিনি প্রতিটি বিষয়ে ইমামের (খলিফা) স্থলাভিষিক্ত হন। যদি তা না হত,তাহলে এই দুনিয়ার কোন কাজই সঠিকভাবে সম্পন্ন হত না।

সেই ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহর সময় থেকে এখন পর্যন্ত,এত লম্বা একটা সময়েও,লোকেরা একজন ইমাম (খলিফা) বাছাইয়ের ব্যাপারে একমত হতে পারে নি। আর এখন পর্যন্ত,কেউ এটাও কোন আলেম থেকে প্রমাণ করতে পারেন নি,শরীয়াতের কোন হুকুম-আহকাম প্রতিষ্ঠিত করতে,ইমামের (খলিফা) উপস্থিতি একান্ত আবশ্যক।"

[আদ-দারূর আস-সানিয়্যাহ,৭/২৩৯]

Courtesy : গাজী আরমান আব্দুর রহমান ভাই।

No comments:

Post a Comment