Wednesday, October 30, 2013

কেন নিজেকে সালাফী বলি?

ধরুন আপনি কলা কিনতে গেছেন।

আপনি (দোকানদারকে) : ভাই, এটা কোথাকার কলা?

দোকানদারঃ আরে ভাই, কলা তো কলাই। কোথাকার কলা এইটা দিয়া কী করবেন?

আপনিঃ এমনি জানতে চাচ্ছি। বলেন না কোথাকার কলা?

দোকানদারঃ আরে না না, কলা হইল কলা। আপনি নিবেন কলা, ভাল কইরা বাইছা লন, সমস্যা নাই। কিন্ত এইটা কয়া যাইব না কোন জায়গার কলা!

ধরে নিলাম, আপনি খুবই ধৈর্যশীল একজন মানুষ, এবং খুবই শান্ত একজনও। হয়ত আপনি সেই দোকানদারের কাছ থেকে কলা কিনবেনও। কিন্ত, বেশ বিরক্ত হবেন আপনি, এ কথাটুকু কিন্ত বলাই যায়।

ঠিক এই exact feeling-টা আমার হয়, যখন আমি শুনি,

☛ "ভাই, নিজেকে সালাফী/আহলে হাদীস বলেন কেন? আমরা তো মুসলিম।"

☛ "ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম আমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম। আপনি কেন বলেন আপনি সালাফী/আহলে হাদীস?"

☛ "আল্লাহ বলেছেন আমাদের মুসলিম হয়ে মরতে। আপনি কেন সালাফী/আহলে হাদীস হয়ে মরার কথা বলেন?"

ভাই, শোনেন,

কোন সালাফী/আহলে হাদীস কবে বলেছেন যে, "আমরা মুসলিম না?"

সালাফী/আহলে হাদীস হল মুসলিম হিসেবে আমাদের বৈশিষ্ট্য। যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কলার বৈশিষ্ট্যই হল এই কলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত।

এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে কলাগুলোকে "চাঁপাইনবাবগঞ্জের কলা" বললে কি ওগুলো কলা থাকে না?

ঠিক তেমনি, সালাফী/আহলে হাদীস পরিচয় দিলে কি কেউ "মুসলিম" থাকে না???

শিয়ারা কাফের, কাদিয়ানীরা কাফের, আহমদিয়ারাও কাফের। কিন্ত কোন শিয়া বা কাদিয়ানী বা আহমদিয়াকে ডেকে আপনি বলতে পারবেন না, "এই ভাই শোনেন, আপনি কিন্ত কাফের!" এতটা অধিকার আমার আপনার মত ম্যাংগো পিপলের নাই!

তো এখন, আমরাও বলি, "আমি মুসলিম", শিয়া কাদিয়ানী আহমদিয়ারা বলে, "আমি মুসলিম"। তাহলে পার্থক্য করা যাবে কীভাবে?

ঠিক এই জন্যই "সালাফী বা আহলে হাদীস" কথাটার উদ্ভাবন।

সালাফী মানে সলফে সালেহীনদের অনুসারী। আহলে হাদীস, যদিও generally বোঝায় হাদীসের অনুসারী, কিন্ত ব্যাপক অর্থে সহীহ হাদীসের অনুসারী।

আর এটাই ছিল আমাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। আল্লাহর কিতাব, তথা কুরআনের অনুসরণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ, বা হাদীসের অনুসরণ, আর তাঁর পরবর্তী তিন যুগ, অর্থ্যাৎ সাহাবী, তাবেয়ী এবং তাবে-তাবেয়ী, অর্থ্যাৎ সালাফদের অনুসরণ।

অতএব, যে মুসলিম এগুলো অনুসরণ করেন, মাঝখানের নানা বিভ্রান্তি, বিভিন্ন "রায়" থেকে দূরে থাকেন, তিনিই সালাফী/আহলে হাদীস।

কিন্ত তার মানে এই না যে মুসলিম পরিচয়টাকে খাটো করে দেখা হচ্ছে।

"চাঁপাইনবাবগঞ্জের কলা"-কে "চাঁপাইনবাবগঞ্জের কলা" বলে ডাকলে at the end, যেমন সেগুলো কলাই থাকে, আপেল বা আঙ্গুর হয়ে যায় না;

তেমনিভাবে যিনি নিজেকে "সালাফী/আহলে হাদীস" বলে পরিচয় দেন, তিনি মুসলিমই থাকেন, নিজেকে সহীহ ইসলামের অনুসারী হিসেবে বুঝিয়ে থাকেন, "দ্বীন-ই-ইলাহী"-র মত কোন নতুন ধর্মের অনুসারী হিসেবে নিজেকে দাবি করেন না!

[In essence, যেহেতু কুরআন বা হাদীসের ব্যাখ্যা বুঝতে শেষমেশ সালাফদেরই দ্বারস্থ হই, তাই নিজেকে "সালাফী" বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কিন্ত তার মানে আবার এই না যে, "আহলে হাদীস" বলা যাবে না। যিনি সালাফী, তিনিই আহলে হাদীস। এরপর ব্যক্তিগত অভিমত।]

আশা করি বুঝিয়ে বলতে পারলাম।

Thursday, October 24, 2013

আসুন "না" বলি

ঠিক যে মুহূর্ত থেকে আপনি আল্লাহর জন্য কোন কিছু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, সেই মুহূর্ত থেকে কিছু অসাধারণ পরীক্ষার সম্মুখীন আপনাকে হতে হবে।

আপনি যদি "শুধুমাত্র" হালাল উপার্জন করতে চান, দেখবেন যে নানা "সন্দেহজনক" উপার্জনের রাস্তা আপনার সামনে খুলে যাচ্ছে!

আপনি যদি কোন দ্বীনদার মানুষকে বিয়ে করতে চান, দেখবেন যে এমন সব বিয়ের প্রস্তাব আপনার কাছে আসছে, যাঁদের কাছে ইসলাম পালন অনেক পরের একটা বিষয়!!

যদি আপনি পরিপূর্ণ হিজাব পালন করতে চান, তাহলে দেখবেন যে এমন সব জায়গায় পড়াশুনা বা চাকরির প্রস্তাব আপনি পাচ্ছেন, যার একমাত্র শর্ত হবে হিজাব ছেড়ে দেওয়া!!!

সত্যি বলতে কী, এগুলো কোন কিছুই কিন্ত কাকতালীয় না। এগুলো আসলে আমাদের জন্য এক একটি সুযোগ।

এগুলো আল্লাহর কাছে আমাদের প্রমাণ দেওয়ার জন্য সুযোগ; যে হ্যাঁ, আমরা শুধু মুখেই না, আমাদের জীবনেও ইসলামকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত।

এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পরীক্ষা। তিনি দেখতে চান, আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কতটা দৃঢ়, কতটা অনমনীয়।

এই পরীক্ষাগুলোকে সাগ্রহে বরণ করে নিন। কোন দ্বিতীয় চিন্তা না করে যে কোন ক্ষেত্রে প্রতিটি সন্দেহজনক বিষয় এড়িয়ে চলুন।

যে মুহূর্ত থেকে আপনি এগুলো করতে শুরু করবেন, আল্লাহর রহমত আর সাহায্যের দুয়ার আপনার জন্য খুলে যাবে।

কখনোই "না" বলতে ভয় পাবেন না। মনে রাখবেন, এই "না" আসলে আল্লাহকে বলা একটা বিশাল বড় "হ্যাঁ"!

- শায়খ তাউফীক চৌধুরী

Courtesy : পড়ন্ত বিকেল


Friday, October 18, 2013

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহর মতানুসারে বিদআতীদের বিচারের মূলনীতি

ড. আহমাদ আল-হুলাইবি,তাঁর "উসুল আল-হুকুম আলাল-মুবতাদিয়াহ ইন্দা শাইখ আল-ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহর মতানুসারে বিদআতীদের বিচারের মূলনীতি)" নামক গ্রন্থে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ কীভাবে বিদআতীদের বিচার করতেন,তা তুলে ধরেছেন।

সংক্ষেপে মূলনীতিগুলো হচ্ছে, 

১) নিজস্ব ইজতিহাদে ভুলের কারণে কোন ধার্মিক ও পূণ্যবান ব্যক্তি যদি বিদআতে আপতিত হন,সেই ক্ষেত্রে তার জন্য অজুহাত বের করতে হবে। একই সাথে তাঁর ভুল ইজতিহাদের এমনভাবে সমালোচনা করতে হবে,যেন তাঁর মর্যাদাহানি না হয়।

২) আক্বীদাগত বা অন্য কোন বিষয়,মুজতাহিদ যে বিষয়েই কোন ভুল করে থাকুন না কেন,তার জন্য তাঁকে পাপী বলে মনে করা যাবে না। আর তাঁকে বিভ্রান্ত বা অবিশ্বাসী বলেও ঘোষণা দেওয়া যাবে না।

৩) বিদআতীকে বা তাঁর ইজতিহাদকে অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা করার মানে এই নয় যে তাঁর বিদআতের সাথে একমত পোষণ করা,অথবা অন্য কাউকে সেই বিদআত অনুসরণ করার জন্য সম্মতি দেওয়া। বরং এটাই কর্তব্য যে,যথাযথ আদব অনুসরণ করে তাঁর বিদআতের বিরুদ্ধে কুরআন-হাদীসের স্বাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থিত করা।

৪) কেউ বিদআতে আপতিত হলেই এই রায় দেওয়া যাবে না যে তিনি "আহলুল আহওয়া ওয়াল বিদআ'"-র অন্তর্ভুক্ত। আর তাঁর প্রতি শত্রুতাও পোষণ করা যাবে না,যদি না সেই বিদআত আহলুস সুন্নাহ ওয়া আল-জামাআতের সম্মানিত আলেমগণের নিকট চরম মাত্রার বিদআত বলে পরিগণিত হয়।

৫) আক্বীদাগত বা অন্য কোন বিষয়,যে বিষয়েই কেউ যদি বিভ্রান্তিতে আপতিত হন,তার জন্য তাঁকে জাহান্নামী বলে ধরে নেওয়া যাবে না,যদি না তা সম্মানিত আলেমগণের নিকট চরম মাত্রার বিভ্রান্তি বলে পরিগণিত হয়। একইভাবে,কোন দল যদি সেই বিভ্রান্তিতে আপতিত হয়,তাহলেও সেই দলকে বিভ্রান্ত ৭২ দলের একটি বলে ধরে নেওয়া যাবে না।

৬) কোন কাজ,যার পরিণতি কুফরী বা ফিসক;এমন কোন কাজ করার ফলে কোন ব্যক্তিকে কাফির বা ফাসিক বলে গণ্য করার আগে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে,তাঁর বিরুদ্ধে "হুজ্জাহ" (পরিপূর্ণ প্রমাণ) না পাওয়া পর্যন্ত তাকে কাফির বা ফাসিক বলে রায় দেওয়া যাবে না।

৭) উম্মাহর মধ্যে ঐক্য স্থাপনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। আক্বীদাগত কম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিভেদের কারণে যেন উম্মাহর ভ্রাতৃত্বের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি না হয়,সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

৮) বিদআতীদের ভাল এবং মন্দ বর্ণনা করার সময় সুবিচার করা বাঞ্ছনীয়। তাদের মাঝে যা সত্য,তা গ্রহণ করতে হবে,আর যা মিথ্যা ও ভ্রান্ত,তা বর্জন করতে হবে।

Courtesy : শাইখ আবিদ

Thursday, October 17, 2013

কুরআন-হাদীস নিজে নিজে বোঝা

কুরআন-হাদীস নিজে নিজে বোঝা কি এতই সহজ?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যুল খুওয়াইসিরা বেয়াদবি করে চলে যাচ্ছিল,তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন,যুল খুওয়াইসিরার অনুগামীরা ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করে আবার বেরিয়ে যাবে। আর তিনি ঘোষণা করেছিলেন,তিনি যদি তাদেরকে পান,সামূদ জাতির মত এই সম্প্রদায়কে হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন। পরবর্তীতে এই নির্দেশও তিনি দিয়ে যান,যেখানেই তাদেরকে পাওয়া যায়,তাদেরকে হত্যা করতে,কারণ তাদের হত্যা করলে পুরষ্কার রয়েছে।

আমরা সবাই জানি,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে পান নি। পেয়েছিলেন আলী রাযিআল্লাহু আনহু এবং অন্যান্য সাহাবীরা।

এই খারেজিরা অনেক সাহাবীসহ বহু মুসলিমকে বিনা বিচারে "কাফির" আখ্যায়িত করে হত্যা করেছে।

সাহাবীরাও কি তাই করেছিলেন?

না,তা তাঁরা করেন নি। বরং যুদ্ধের ময়দান ব্যতীত কোন খারেজিকে হত্যা করা তো দূরের কথা,তাঁরা তাদের সাথে মিশেছেন,সালাম বিনিময় করেছেন,এমন কী তাদের ইমামতিতে নামায পর্যন্ত পরেছেন।

এর মানে কী,সাহাবীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা মানেন নি,খারেজিদের সাথে আপোষ করেছেন (নাউযুবিল্লাহ মিন জালিক)?

মোটেই তা না। কারণ স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের নির্ভরযোগ্যতার সংজ্ঞা দিয়ে গেছেন। আর তাঁরা যেভাবে ইসলাম বুঝেছেন,সেটাই প্রকৃত ইসলাম।

তাই সালাফী আলেমগণ সব সময় চেষ্টা করেন,কোন একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে সালাফগণ কী ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন,বা কী কাজ করেছেন,সেটা অনুযায়ী similar কোন পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করতে,ঐ অনুযায়ী ফতোয়া দিতে।

যাদের তাফসীরসহ পুরো কুরআন মুখস্থ,লক্ষ লক্ষ হাদীস সনদ সহ মুখস্ত,জিজ্ঞাসা করলেই যাঁরা মনে দিতে পারেন এই হাদীস সহীহ,ঐ হাদীস হাসান,ঐ হাদীস যঈফ,ঐ হাদীস জাল,তাঁরাও নিজেরা কোন ফতোয়া দেওয়ার আগে দেখেছেন সালাফদের ব্যাখ্যা কী,তারপরই ফতোয়া দিয়েছেন!

অবশ্যই আমরা আলেমদের কথা "ভেরিফাই" করতে পারি,দেখতে পারি তাঁরা যে কথা বলছেন,তার পিছনের রেফারেন্সটুকু কতটুকু শক্ত। আর কুরআন-হাদীসের বই সরাসরি পড়তেও কোন বাধানিষেধ নেই।

কিন্ত আলেম "হক্বপথে" আছেন না কী,সেটা "যাচাই" করার জন্য যদি কুরআন-হাদীস পড়া হয়,তাহলে কিন্ত "হক্ব" পাবার বদলে "ভ্রান্ত" হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ঠিক যেভাবে খারেজিরা নিজে নিজে কুরআন বুঝতে গিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম,সাহাবীদের চেয়ে ইসলাম বেশি বুঝে উলটো ইসলাম থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিল।

Wednesday, October 16, 2013

বুঝতে কি পারো?

ছাগল তিনটার কোরবানী করা শেষ। মালা আপা (আমাদের বাসার কাজের লোক) রক্ত ধুয়ে ফেলছেন,যেন ছাদের মেঝেতে রক্ত জমাট বেঁধে না যায়।

দুটো ছাগলের রক্ত পরিষ্কার করতে ৪-৫ মিনিট টাইম লাগল। তারপর আপা গেলেন তিন নম্বর ছাগলটার কাছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই আমিও সেই দিকেই তাকালাম।

তাকিয়ে দেখি,তরল রক্তের মাঝে লাল টকটকে কাপড়ের মত একটা কিছু পরে আছে।

আপাকে বললাম,"আপা,দেখেন তো ঐটা কী?"

আপা বললেন,"আর কিছু না ভাইয়া। রক্ত জমাট বেঁধে গেছে।"

আমি পুরো থ হয়ে গেলাম।

আপা বিষয়টা খোলাসা করে দেওয়ার পরও,তখনও আমার কাছে মনে হচ্ছিল যে লাল টকটকে একটা কাপড় মেঝেতে পরে আছে!

আসলে আল্লাহর অস্তিত্ব,তাঁর জ্ঞান,তাঁর রহমত,এগুলো বুঝতে আসলে তেমন কিছুই লাগে না।

শুধু দুইটা চোখ লাগে।

আর সেই চোখ দুইটা দিয়ে চারপাশে ঘটা ঘটনাগুলো হৃদয় দিয়ে অনুভব করা লাগে।

Thursday, October 3, 2013

শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হারাম,কিন্ত কোন শাসক?

প্রশ্নঃ শাসক,এমন কী যদি তারা পাপী এবং অত্যাচারীও হয়,তাদের প্রতি কী ধরণের আচরণ করতে হবে,তার বর্ণনা বিভিন্ন হাদীসে দেওয়া আছে। কিন্ত অনেকেই বলে থাকেন,এই শাসক হচ্ছেন এক ও অভিন্ন মুসলিম উম্মাহর খলিফা,বিভিন্ন দেশের বাদশা,রাজা,রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী নন। এই বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা চাচ্ছি।

উত্তরঃ

এটা একটা ভুল ধারণা ছাড়া কিছুই নয় যে,শাসকের প্রতি আচরণের বিষয়ে যে সকল হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে,সেগুলোতে শাসক বলতে শুধুমাত্র এক ও অভিন্ন মুসলিম উম্মাহর খলিফাকে বুঝানো হয়েছে। সম্মানিত শায়খগণ এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। নিচে তাদের কিছু উল্লেখ করা হলঃ

১) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহঃ

"সুন্নাহ এই যে,মুসলিমদের ইমাম (খলিফা) হবেন একজন,আর বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর প্রতিনিধি থাকবেন।

কিন্ত ধরুন,কিছু অঞ্চলে পাপে নিমজ্জিত হয়ে আর বাকী অঞ্চলে অসমর্থ হয়ে,অথবা এই কারণ ছাড়া অন্য যে কারণেই হোক না কেন,উম্মাহ এই সুন্নাহ পরিত্যাগ করল,যার ফলে একের বদলে অনেক ইমামের আবির্ভাব ঘটল।

তাহলে,ইমামদের উপর এটা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায় যে,তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অঞ্চলে "হুদুদ" (ইসলামে অপরাধের জন্য যে শাস্তি বর্ণিত হয়েছে) প্রতিষ্ঠা করবেন,এবং তাঁর অঞ্চলের লোকেদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করবেন।"

[মাজমু আল-ফাতাওয়া,৩৫/১৭৫-১৭৬]

২) ইমাম আশ-শাওকানী রাহিমাহুল্লাহঃ

"সত্য এই যে,মুসলিমদের ইমাম হবেন একজন। কিন্ত,বিশ্বের নানা প্রান্তে ইসলাম ছড়িয়ে যাবার পর দেখা যায় যে,অঞ্চলগত দূরত্বের কারণে প্রত্যেক অঞ্চলে একজন করে ইমাম বা শাসকের আবির্ভাব ঘটে,যাদের কারোরই অন্য অঞ্চলে শাসন করার কোন অধিকার ছিল না।

অতএব,একের অধিক ইমামের উপস্থিতি কোন খারাপ কিছু নয়,এবং কোন অঞ্চলের মুসলিমদের এটাই কর্তব্য যে,সে যে অঞ্চলের অধিবাসী,সেই অঞ্চলে যে ইমামের আদেশ এবং নিষেধ মান্য করা হয়,তাঁর বায়আত গ্রহণ করে তাঁর আনুগত্য করা। অন্য সকল অঞ্চলের ইমামদের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য।

আর কোন মুসলিমের এটা কর্তব্য নয় যে,সে যে অঞ্চলের অধিবাসী,সেই অঞ্চলের ইমাম ব্যতীত অন্য কোন অঞ্চলের ইমামের আনুগত্য করা।"

অতঃপর তিনি বলেন,

"আপনাদের এটা জেনে রাখা উচিত,এটা (একের অধিক ইমামের উপস্থিতি) ইসলামী শরীয়াতের বাইরে পরে না,বরং বিভিন্ন স্বাক্ষ্যপ্রমাণ এটাই নির্দেশ করে যে শরীয়াতে এর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আর এর বিপক্ষে যত কথাই উঠুক না কেন,এগুলোর কোনটিতেই কান দেবেন না,কারণ স্বর্ণযুগের ইসলামী শাসনব্যবস্থার সময়কার পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং বর্তমান সময়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভিন্নতা দিবালোকের চেয়েও স্পষ্ট।"

[আস-সাইয়েলুল জারার,৪/৫১২]

৩) ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহঃ

"প্রত্যেক মাযহাবের ইমামগণ এই বিষয়ে একমত যে,যিনিই কোন দেশ বা একের অধিক দেশের ক্ষমতা দখল করেন,তিনি প্রতিটি বিষয়ে ইমামের (খলিফা) স্থলাভিষিক্ত হন। যদি তা না হত,তাহলে এই দুনিয়ার কোন কাজই সঠিকভাবে সম্পন্ন হত না।

সেই ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহর সময় থেকে এখন পর্যন্ত,এত লম্বা একটা সময়েও,লোকেরা একজন ইমাম (খলিফা) বাছাইয়ের ব্যাপারে একমত হতে পারে নি। আর এখন পর্যন্ত,কেউ এটাও কোন আলেম থেকে প্রমাণ করতে পারেন নি,শরীয়াতের কোন হুকুম-আহকাম প্রতিষ্ঠিত করতে,ইমামের (খলিফা) উপস্থিতি একান্ত আবশ্যক।"

[আদ-দারূর আস-সানিয়্যাহ,৭/২৩৯]

Courtesy : গাজী আরমান আব্দুর রহমান ভাই।