Wednesday, December 18, 2013

মূর্খের বসতি

প্রশ্নঃ আমার একজন পরিচিত আরব, তিনি আরব হবার কারণে বেশ গর্বিত। আমি অনারব, আর সে কারণে তিনি আমাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অবজ্ঞা করেন।

আমি এ কারণে তার উপর বেশ ক্ষেপে আছি, আর আমি তাকে সূরা আল-জুমআর আয়াত "তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন" শুনিয়ে তাকে বুঝিয়ে দিতে চাই যে সে আসলে কিছুই না!

এটা কী গ্রহণযোগ্য, না কী তাঁকে হেয় করার জন্য আমি পাপী হব?

উত্তরঃ

আপনারা দুইজনই মূর্খ!

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীরা ছিলেন আরব। এ কারণে আপনি আরবদের ব্যাপারে বাজে কথা বলতে পারেন না।

আর আবু জাহেলও কিন্ত আরব ছিল। তাই "শুধুমাত্র" আরব হবার কারণে কিন্ত গর্বিত হওয়া কোনভাবেই সাজে না।

http://assimalhakeem.net/node/6880

---------------------------------------------------------------------------------

শায়খ আসিম আল-হাকিম মাঝেমাঝেই উত্তর দেবার ক্ষেত্রে কিছু কড়া ভাষা ব্যবহার করেন।

কিন্ত পুরো উত্তরটা পড়ে মনে হল, দুইজনকে "মূর্খ" বলাটা ঠিকই আছে।

সমস্যা একটাই।

এই রকম মূর্খ দিয়ে আমাদের চারপাশটা ভর্তি।

শয়তানের পদাংক অনুসরণ বলতে কী বোঝায়?

"হে ঈমানদারগণ, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ কোর না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।"

এক শুক্রবারে শায়খ শহীদুল্লাহ মাদানী আমাদের মসজিদে খুতবা দিতে এসে সূরা বাকারার এই আয়াতটার উপর অসম্ভব সুন্দর একটা আলোচনা করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন,

"এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের ১০০% ইসলাম পালন করতে বলেছেন। ৭০% না, ৮০% না, ৯০% না, পুরো ১০০%। আর এই ১০০% ইসলাম ভিত্তি হচ্ছে কুরআন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ।

অর্থ্যাৎ আমরা যাই করি না কেন, তার মূল ভিত্তি কুরআন আর হাদীসে থাকতে হবে।

আর এর বাইরে আমরা যাই করি না কেন, তার প্রত্যেকটা হচ্ছে শয়তানের পদাংক অনুসরণ করা।

যেমন, আপনার কাজকর্মের ৬০%-এর ভিত্তি যদি হয় কুরআন আর হাদীস, তাহলে বাকী ৪০% হচ্ছে শয়তানের পদাংক অনুসরণ।

আপনার কাজকর্মের ৫০% যদি হয় কুরআন আর হাদীসের অনুসরণ, তাহলে বাকী ৫০% হচ্ছে শয়তানের পদাংক অনুসরণ।"

খুব সোজা বাংলায়, আমরা যাই করি, আর যাই বলি, তার সমর্থন যদি কুরআন এবং হাদীসে থাকে, এবং সহীহ আক্বীদার আলেমগণ যদি তার ব্যাপারে হ্যাঁ-বাচক উত্তর দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটা ইসলামে অনুমোদিত।

আর যদি তা না হয়, তাহলে সেই জিনিসের ব্যাপারে আপনার যতই আবেগ থাক না কেন, আর যতই আপনার বাপ-দাদা চৌদ্দগোষ্ঠী পালন করে থাক না কেন, সেটা আর কিছুই না, আল্লাহর দেওয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, শয়তানের পদাংক অনুসরণ।

Monday, December 2, 2013

রাজনৈতিক অস্থিরতার চক্র - মুক্তির পথ বেছে নিতে হবে আমাদেরই

আমার একটা অভ্যাস (না কি বদভ্যাস বলব?) আছে। যদি কোন বিষয়ে কোন কিছু ভবিতব্য বলে মনে হয়, তাহলে কেমন যেন একটা দায়সারা গা-ছাড়া ভাব চলে আসে। মনে হয়, "ধুর, এটা ঘটার সম্ভাবনাই বেশি, এত মাথা ঘামিয়ে লাভ কী?"

অস্বীকার করব না, অনেক ক্ষেত্রেই আমার এই "বিজ্ঞ" prediction ভুল প্রমাণিত হয়েছে, তারপরও কেন যেন এই অভ্যাস (না বদভ্যাস?) ছাড়তে পারি না।

এই যে গত কয়েক দিন ধরে নিয়মিত সহিংসতায় মানুষের মৃত্যুর খবর শুনছি, আর প্রায় প্রতিদিনই তো টিভিতে শাহবাগের পুড়ে যাওয়া মানুষদের দেখছি, তাঁদের স্বজনদের আহাজারি শুনছি। মন খারাপ হয়, কিন্ত কেন যেন মনকে ঐভাবে ছুঁতে পারে না।

কারণ, জানি যে যা ঘটছে, তার পিছনের মূল কারণ আমরা নিজেরা।

অবাক হচ্ছেন?

নিচের কথাগুলো পড়ে দেখুন।

"সর্বশক্তিমান আল্লাহর জ্ঞানের অন্যতম নিদর্শন হল এই যে, তিনি তাঁর দাসের উপর এমন শাসক নিযুক্ত করে দেন, যাঁরা তাঁদের (শাসক) কর্ম ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাদের দ্বারা শাসিতদের কর্ম ও সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটান।

☛ তারা (শাসিত) যদি হক্বের (আল্লাহর দেওয়া হুকুম-আহকাম) উপর অটল থাকে, তাহলে তাদের শাসকরাও হক্বের উপর অটল থাকবেন। আর তারা যদি হক্বের পথ থেকে সরে যায়, তাদের তাদের শাসকরাও অনুরূপভাবে হক্বের পথ থেকে সরে যাবেন।

☛ তারা যদি নিজেদের এবং অন্যদের উপর জুলুম করতে থাকে (নিয়মিত পাপে নিমজ্জিত হওয়াই ইসলামে নিজের উপর জুলুম), তাহলে তাদের শাসকও তাদের উপর জুলুম করতে শুরু করবেন।

☛ তারা যদি প্রতারণায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাদের শাসকও তাদের সাথে প্রতারণা করবেন। এরই সাথে, তারা যদি একে অন্যের অধিকার প্রদানে গড়িমসি শুরু করে আর কৃপণতার আশ্রয় নেয়, তাদের শাসকও অনুরূপভাবে তাদের অধিকার প্রদানে গড়িমসি শুরু করবেন আর তাদের ক্ষেত্রে কৃপণতার আশ্রয় নেবেন (অর্থ্যাৎ জনকল্যাণে সামান্য অর্থই ব্যয় করা হবে)।

☛ তারা যদি দূর্বলদের সম্পত্তি, যা কোনভাবেই তাদের প্রাপ্য নয়, হরণ করতে শুরু করে, তাহলে তাদের শাসক তাদের উপর একের পর এক কর চাপিয়ে দিবেন।

☛ আর দূর্বলদের কাছ থেকে যতটুকুই অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নিক না কেন, তাহলে তাদের শাসক তাঁর ক্ষমতা দিয়ে সেই সম্পত্তি তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবেন। 

সোজা কথায়, শাসকেরা হবেন তাদের নিজেদের প্রতিফলন।"

না, কথাগুলা আমার না। কথাগুলা ইমাম ইবনুল কায়্যিমের।

একটু নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখি তো, এই কাজগুলো কি আমাদের আশেপাশে ঘটছে? 

তারচেয়েও বড় কথা, আমরা নিজেরা, প্রত্যেকে, কি এই কাজগুলোর সাথে জড়িত?

উত্তর আমরা সবাই জানি বলেই মনে হয়।

আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন, কী করলে এই রাজনৈতিক অস্থিরতার চক্রের হাত থেকে আমরা মুক্তি পাব?

উত্তর আসলে একেবারেই সোজা। নৈর্বক্তিক প্রশ্নের মত, দুটো অপশন থেকে আমাদের একটা বেছে নিতে হবে।

এক, নিজেরা যা খুশি, যেভাবে খুশি, সেভাবেই চলা।

দুই, আল্লাহর কাছে তওবা করে নিজেদের সংশোধন করা, কুরআন হাদীসের আলোকে নিজেদের জীবন পরিচালিত করা।

দ্বিতীয়টার পরিণতি, এই ভয়াবহ রাজনৈতিক অস্থিরতার চক্র, যা স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশকে কুরে কুরে খাচ্ছে, ইনশাআল্লাহ, তার থেকে মুক্তিলাভ।

প্রথমটার পরিণতি, আমরা যেমন যেভাবে খুশি সেভাবে চলব, ঠিক তেমনিভাবে আমাদের শাসকেরাও যেভাবে খুশি সেভাবেই চলবেন!

পছন্দ এখন আমাদের।

আর সেই অনুযায়ী কর্মফলটাও ভোগ করতে হবে আমাদের।