Wednesday, July 24, 2013

ইসলামকে একটা সুযোগ দিয়েই দেখুন না

আমার ইসলামপূর্ব জীবনের দুইটি ঘটনা বলি।
 
১) প্রচণ্ড গরম,মাথার উপর গনগনে সূর্য। রোদের তীব্রতা সহ্য করার বাইরে।

আমার ব্যাগে ছাতা আছে,খুব সহজেই বের করে ছাতাটা ফুটিয়ে এই রোদ থেকে বাঁচতে পারি। কিন্ত বের করছি না।

কারণ?

আরে,আমি একজন ইয়াং ম্যান,আমি হব কষ্টসহিষ্ণু। আমি যদি এভাবে মেয়েদের মত ছাতা ধরে থাকি,তাহলে লোকেরা কী বলবে? আর ভার্সিটির মেয়েদের সামনে আমার একটা প্রেস্টিজ আছে না!!!

অথচ,যাদের সামনে ভাব নেওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল,হয়ত তাদের ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই আমাকে চিনতেন না।

ফাইনালি,এই ভাবের খেসারত আমাকেই দিতে হত,হয় জ্বর,নয় ঠাণ্ডা-কাশিতে ভোগার মধ্য দিয়ে।

২) আমার সামনে একজন কেউ কোন একটা কথা বলতেন,অথবা হয়ত এমন কোন মন্তব্য করতেন,যার সাথে আমি কোনভাবেই একমত হতাম না।

কিন্ত তারপরও,আমি তাঁকে কিছুই বলতাম না,চুপচাপ শুনে যেতাম,মাঝেমধ্যে হ্যাঁ-হুঁ করতাম।

পরে নিজের কাছে নিজের খারাপ লাগত,কারণ,আমি তো কথাটার সাথে কোনভাবেই একমত নই। কিন্ত ঐ মানুষটা তো ভেবে বসে আছেন,আমি তার সাথে ১০০% একমত!!!

ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে,আমি চাইতাম,"মানুষের" কাছে ভাল হওয়ার জন্য,স্মার্ট হওয়ার জন্য। কোন মানুষের কাছে আমি যেন খারাপ না হই,আনস্মার্ট না হই,হাসির পাত্র না হই,তা যতই আমার নিজস্ব সত্ত্বাকে লুকিয়ে হোক না কেন।

অর্থ্যাৎ,আমার মন আমি আমার মতই অন্য একদল মানুষের কাছে বন্ধক রেখে দিয়েছিলাম।

আলহামদুলিল্লাহ,ইসলামকে জানতে-বুঝতে শুরু করার পর,ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহর একটা বাণী,আমার পুরো চিন্তাধারা ১৮০ ডিগ্রি উলটে দিল।

"সারা দুনিয়ার মানুষ যদি তোমার উপর সন্তষ্ট থাকে,কিন্ত আল্লাহ তোমার উপর অসন্তষ্ট,তাহলে তুমি জীবনে আসলে কী পেলে? আর সারা দুনিয়ার মানুষ যদি তোমার উপর অসন্তষ্ট থাকে,কিন্ত আল্লাহ তোমার উপর সন্তষ্ট থাকেন,তুমি কীই বা হারালে?"

আসলেই তো। কী লাভ আমার আমার মতই আরেকজন মানুষের সন্তষ্টি পেয়ে? কী লাভ আমার,আমার মতই আরেকজন মানুষের প্রিয় মানুষ হয়ে,নিজের সত্ত্বাকে বিক্রি করে? তার আর আমার মধ্যে তো কোন পার্থক্য নেই। সেও আল্লাহর সৃষ্টি,আমিও আল্লাহর সৃষ্টি। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো বলেই গেছেন,অনারবের উপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই,কালোর উপর সাদারও শ্রেষ্ঠত্ব নেই। একটা জিনিসই শুধুমাত্র একজনের তুলনায় অন্যজনকে বড় করে তুলতে পারে,আর তা হল তাক্বওয়া,আল্লাহর ভয়।

আলহামদুলিল্লাহ,এখন আর ভাব মারার জন্য চড়া রোদের নিচে ছাতা ছাড়া বের হই না,পাঁচ মিনিটের দূরত্ব হলেও না। আর যদি কারো কোন কথা ভাল না লাগে,আমি একমত না হই,সাথে সাথে যথাসম্ভব ভদ্র ভাষাতেই প্রতিবাদ করি,বলি,"ভাই,আপনার সাথে একমত না।"

আমার নিজের যে একটা আলাদা সত্ত্বা আছে,ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে জীবনে ধারণ করে,তা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারছি,উপভোগ করতে পারছি।

আর এটার যে স্বাদ,এই স্বাদ শুধুমাত্র একটা ভাবেই পাওয়া যেতে পারে।

যিনি এই বিশ্বজগতের অধিপতি,সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা,তাঁর কাছে নিজের মনটাকে বন্ধক দিয়ে।

কারণ তিনিই এর একমাত্র যোগ্য।

"কুরআন আপনার গলার স্বরের একটা মাত্রা ঠিক করে দিয়ে বলে,'তোমার কণ্ঠস্বর উঁচু কর না।' আপনার চলার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দেশ দেয় এই বলে,'পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর।' আপনার চোখের দৃষ্টিকে সংযত করে এই বলে,'(আমি এদের বিভিন্ন প্রকার লোককে পরীক্ষা করার জন্যে পার্থিবজীবনের সৌন্দর্য স্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি),আপনি সেই সব বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না।' আপনার কানকে সংযত করে এই বলে,'এবং (অন্যের ব্যাপারে) গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না।' আপনার খাদ্যাভাসকে পরিমিত করে এই বলে যে,'খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না।'

এই অসাধারণ বইটি খুব সহজেই আপনার জীবনকে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে দিতে পারে,আপনাকে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বানাতে পারে।

একবার এটাকে সুযোগ দিয়েই দেখুন না।"

- শায়খ আসিম আল হাকিম।

No comments:

Post a Comment