Friday, July 19, 2013

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকীঃ আমাদের কিছু চিন্তা করার আছে কি?

আজ ১৯ জুলাই,২০১৩। সম্ভবত,বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক,হুমায়ূন আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।

As always,এ নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস বারে স্বভাবতই ঝড় উঠেছে। তাঁর ভক্তরা,তাঁকে নিয়ে মাতামাতি করছেন,এবং আমার ইসলামপন্থী বন্ধুদের অনেকেই তাঁকে তুলোধনা করছেন!

যাই হোক,তাঁকে নিয়ে আমার আসলে কিছু বলার নেই। শুধু এই হাদীসটা উল্লেখ করতে চাই,

আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

"তোমরা মৃত ব্যক্তিদেরকে গালি দিও না, কারণ তারা তাদের কৃতকর্মের পরিণাম পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে।"। [সহীহ বুখারী,৮ম খণ্ড,হাদীস #৫২৩]

তাঁর ভক্তকুলের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে চাই।

ভাই/আপু,

কখনো কি চিন্তা করেছেন,আমাদের এই জীবনে,আমরা কিন্ত একদম ১০০% নিশ্চিত করে,পাঁচটা মিনিট পরেও আমাদের সাথে কী ঘটবে,তা বলতে পারি না,পারি কি?

পাঁচ মিনিট তো অনেক লম্বা সময়,এক মিনিট পরেও কী ঘটবে,আমরা কি তাও জানি?

না,জানি না।

কিন্ত একটা inevitable reality,একটা অনিবার্য সত্য,আমরা কিন্ত সবাই জানি।

সেটা হচ্ছে,death,মৃত্যু।

আমার আপনার ভাগ্যে কী আছে,এ বিষয়ে আমরা আর কিছু না জানলেও,এইটুকু কিন্ত আমরা অবশ্যই জানি,মৃত্যুর হাত থেকে আমাদের মুক্তি নেই।

হুমায়ূন আহমেদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। তাঁর কত অসংখ্য লেখায়,ঘুরে ফিরে,তিনি মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কত হাহাকার তিনি করেছেন,একদিন তিনি আর এই পৃথিবী দেখতে পারবেন না,জোছনা দেখতে পারবেন না,কাশবাগানের ঝিরঝির বাতাস অনুভব করতে পারবেন না।

তাঁর মত,এত বিখ্যাত,এত জনপ্রিয় একজন মানুষও কি মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে পেরেছেন? 

না।

আল্লাহ কিন্ত বারবার,বারবার আমাদের সতর্ক করেছেন,এই মৃত্যুর হাত থেকে আমাদের মুক্তি নেই।

“প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।” [সূরা আলে ইমরান-১৮৫]

“অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরান্বিত করতে পারবে না।” [সূরা নাহল-৬১]

"তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও।" [সূরা আন নিসাঃ আয়াত ৭৮]

"মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। এ থেকেই তুমি টালবাহানা করতে।" [সূরা ক্বাফঃ১৯]

ভাই/আপু,

একটু চিন্তা করে দেখুন তো,হুমায়ূন আহমেদ,তাঁর বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে,জীবন সম্পর্কে তাঁর যে দর্শন আমাদের সামনে ফুটিয়ে তুলেছেন,তাঁর আসলেই কি কোন মূল্য আছে? বৃষ্টি আর জোছনার মত দুটো "সৃষ্টি"-কে ভালবেসে আমাদের আসলেই কি কোন লাভ আছে? আমাদের বোনদের অবলীলায় যার তার প্রেমে পড়ার যে মন্ত্র তিনি শিখিয়ে গেলেন,তার থেকে আসলেই কি কোন উপকার আছে?

"যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।'' [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ৮৫]

আল্লাহ নানা নিদর্শনের মাধ্যমে,একদম চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছেন,কোনটা মুক্তির পথ,কোনটা সরল পথ,কোনটা সাফল্যের পথ।

এরপরও,যদি আমরা না শুনি,না মানি,তাহলে আমাদের নিজেদের ছাড়া,কাউকে blame করার কোন অজুহাত কি থাকবে?

"তোমাদের আচরণ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতোই। তারা ছিল তোমাদের চাইতে বেশী শক্তিশালী এবং তোমাদের চাইতে বেশী সম্পদ ও সন্তানের মালিক। তারপর তারা দুনিয়ায় নিজেদের অংশের স্বাদ উপভোগ করেছে এবং তোমরাও একইভাবে নিজেদের অংশের স্বাদ উপভোগ করেছো। যেমন তারা করেছিল এবং তারা যেমন অনর্থক বিতর্কে লিপ্ত ছিল তেমনি বিতর্কে তোমরাও লিপ্ত রয়েছো। কাজেই তাদের পরিণতি হয়েছে এই যে, দুনিয়ায় ও আখেরাতে তাদের সমস্ত কাজকর্ম পণ্ড হয়ে গেছে এবং তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

তাদের কাছে কি তাদের পূর্ববর্তীদের ইতিহাস পৌঁছেনি? নূহের জাতির, আদ, সামূদ ও ইবরাহীমের জাতির, মাদইয়ানের অধিবাসীদের এবং যে জনবসতিগুলো উল্টে দেয়া হয়েছিল সেগুলোর? তাদের রসূলগণ সুস্পষ্ট নিশানীসহ তাদের কাছে এসেছিলেন। এরপর তাদের ওপর জুলুম করা আল্লাহর কাজ ছিল না বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছিল।" [সূরা আত তাওবা ৬৯-৭০]

No comments:

Post a Comment